Saturday 22 February 2020

চাষাবাদ- আবু হাসান শাহরিয়ার

নেড়ে দেখলাম, ছেনে দেখলাম,
অসুখ অনাবাদের-
শুশ্রূষা তার আদর।
সংকোচের শীত তাড়াতে
আলিঙ্গনের চাদর
পরিয়ে দিলাম গায়ে।
তোমার পায়ে-পায়ে
শঙ্কা এবং দ্বিধায় ঘোরাফেরা।
একজীবনে এতটা চুলচেরা
হিসেব করা ভালো ?
চুম্বনের জলে তোমায় সিক্ত করি, এসো,
দশ আঙুলে লাঙল দেব বুকে,
আসঙ্গম শরীরময় শৃঙ্গারের বীজ
ছড়িয়ে দেব ঝুঁকে।
কী লাভ বলো ব্রাত্য পড়ে থেকে ?
বাসের যোগ্য যে-জন, তাকে ভিটেয় রাখো তুলে।
এই ভূমিহীন চাষাকে দাও বর্গা চাষের মাটি-
ক্লান্তিহীন প্রেমে ফলাই সুখের খুঁটিনাটি।

তুলাদন্ড- আবু হাসান শাহরিয়ার

তোমার চোখের চেয়ে বেশি নীল অন্য কোনও আকাশ ছিল না
যেখানে উড়াল দিতে পারি
তোমার স্পর্শের চেয়ে সুগভীর অন্য কোনও সমুদ্র ছিল না
যেখানে তলিয়ে যেতে পারি
তোমাকে দ্যাখার চেয়ে নির্নিমেষ অন্য কোনও দ্রষ্টব্য ছিল না
যেখানে নিমগ্ন হতে পারি
তোমাকে খোঁজার চেয়ে বেশি দূর অন্য কোনও গন্তব্য ছিল না
যেখানে হারিয়ে যেতে পারি।
কেবল তোমার চেয়ে বেশি দীর্ঘ তুমিহীন একাকী জীবন।

বোবাকথা- আবু হাসান শাহরিয়ার

কী কথা শুনতে তুমি অবেলায় এখানে এসেছ?
সে-কথা আমার কাছে আছে?

বলার কথারা নেই; আমার শোনার দিন আজ
তুমি বলো; আমি কান পাতি

তোমারও বলার মতো কথা যদি না থাকে সঞ্চয়ে
এসো, দুজনেই থাকি চুপ

কথাই না থাকে যদি চুপ থাকা অতিবাঞ্ছনীয়
সব বৃক্ষ এই কথা জানে

গাছের অনেক কথা জমা থাকে পাতার সবুজে
সেখানেই পৃথিবীর প্রাণ

তোমাকে বলার আছে, এমন কথারা সব বোবা
চোখে চোখ রেখে জেনে নিয়ো

২৪ মাঘ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ

দোনামনা- আবু হাসান শাহরিয়ার

তোমাকে লিখি তোমাকে লিখি করে
কিছুটা লিখে পুরোটা ছুড়ে ফেলি
তোমাকে ছাড়ি তোমাকে ছাড়ি করে
কিছুটা ছেড়ে পুরোটা ধরে রাখি

লিখি না লিখি, ছাড়ি না ছাড়ি শুধু
দোটানা ধু ধু টানাপোড়েনে থাকা
আমি এমনি ছন্নছাড়া। বলো
তুমি এভাবে থেকেছ কোনদিন?

থাকোনি, আমি সে কথা জানি তাই
কিছুটা দেখে, পুরোটা রেখে আসি
মহুয়া জানে, ফিকিরবাজি এটা
তুমি কী জানো, তুমি কী জানো, শুনি?

Friday 21 February 2020

Tonight

"Tonight I can write the saddest lines: I loved her, and sometimes she loved me too."

📺 Black Mirror: White Christmas (S2/E4)

Thursday 20 February 2020

নূরুল হক

যে তিনটি কথা আমি
বলে গেছি
গোপনে তোমাকে
জীবনের দাগ ধরে
পথের ধুলোয়
তাই তুমি রুয়ে দিয়ো নানাঘাটে।

যদি কোনদিন এরা বৃক্ষ হয়,
পাতায় পাতায়
জল থাকবে,  চোখ থাকবে
আর থাকবে তোমার হৃদয়।

এখন আমার- আবুল হাসান

আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
…রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে কি লাগে, কষ্ট লাগে
তুমি আমার জামার বোতাম অমন কেনো যত্ন করে
লাগিয়ে দিতে?
অমন কেন শরীর থেকে আস্তে আমার
ক্লান্তিগুলি উঠিয়ে নিতে?
তোমার বুকের নিশীথ কুসুম আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতোন তুমি উড়িয়ে দিতে?
বেলজিয়ামের আয়নাখানি কেন তুমি ঘরে না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে
রেখে দিতে?
আমার এখন চাঁদ দেখলে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম, মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে
কথাবর্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা. . .
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর, আমি অনেক কষ্টে আছি.. কষ্টে আছি বুঝলে যুথী
আমার দাঁতে, আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষন
চতুর দিকে দাবি আদায় করার মত মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ বুঝলে যুথী
হাসি খুসি উড়নচণ্ডি মানুষ এখন তাইতো এখন খারাপ লাগে, খারাপ লাগে
আরে তাছাড়া, আমি কি আরে যীশু নাকি- হাবিজাবী ওদের মতন সবসহিষ্ণু
আমি অনেক কষ্টে আছি
কষ্টে আছি, কষ্টে আছি
আমি অনেক কষ্টে আছি
কষ্টে আছি, কষ্টে আছি।

বিচ্ছেদ- আবুল হাসান

আগুনে লাফিয়ে পড়ো, বিষ খাও, মরো
না হলে নিজের কাছে ভুলে যাও
এত কষ্ট সহ্য করো না।

সে তোমার কতদূর? কী এমন? কে?

নিজের কষ্টকে আর কষ্ট দিও না,

আগুনে লাফিয়ে পড়ো, বিষ খাও, মরো,
না হলে নিজের কাছে নত হও, নষ্ট হয়ো না!

শেষ মনোহর- আবুল হাসান

সে আমার পাশে শুয়েছিল, বাশির মতোন বিবসনা !
তাকে আমি দেখেছিলুম কাঁদতে গুণীর হাতের বেহালার মতো

আর মাত্র কিছুক্ষণ : এর মধ্যে নক্ষত্র ফুরোবে :
এর মধ্যে শেষ হবে আমাদের আলিঙ্গন আমাদের অনিদ্র চুম্বন !

পাতলা ঝাউয়ের মতো কেঁপে উঠলো কন্ঠ তার
কেন তুমি এইভাবে, এরকম দিলে ?

সন্তের শূন্যতা নিয়ে পাশ ফিরে শুই- একা শুই !

সে আমাকে হঠাৎ উন্নত স্বরে বলে ওঠে ''অহিংস ঘাতক !''

বটেই তো, না হলে কি আমি আজ তার মতো কাঁদি ?

Wednesday 19 February 2020

পরাজিত পদাবলী - আবুল হাসান

আমার বাহু বকুল ভেবে গ্রীবায় পরেছিলে
মনে কি পড়ে প্রশ্নহীন রাতের অভিসার ?
অন্ধকারে আড়াল পেয়ে ওষ্ঠে তুলে নিলে
হঠাৎ গাঢ় চুম্বনের তীব্র দহনগুলি ?

মনে কি পড়ে বলেছিলে এ পােড়া দেশে যদি
বিরহ ছাড়া কিছুতে নেই ভালােবাসার বােধি---
রাজ্য জুড়ে রাজার মতাে কে আর থাকে কার
রাতের পথে সহজ হবে দিনের অভিসার ?

হৃদয় আজ কুপিয়ে দেই বিচ্ছেদের চারায়
দোলাই তাতে মন চেতনা মনস্তাপের ফুল !
তােমার ইন্দ্রিয়ে তার সৌরভেরা হারায়
যখােন তুমি বাঁধতে বসাে তােমার এলােচুল ?

তােমার কাছে গিয়েছিলাম রাতে নদীর ঢেউ
তােমায় আমি পরিয়েছিলাম অঙ্গুরীয় মেয়ে

ভুল বোঝা সে মানুষ তাকে বােঝেনি আর কেউ
তুমি যেমন তােমার মতাে বুঝতে চেয়েছিলে !

প্রিয়তমাসু -তারাপদ রায়

অনেকদিন পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে
প্রথম একটা চাঁদের ছবি আঁকি, সঙ্গে কিছু মেঘ।
তারপর যথেষ্ট হয়নি ভেবে গোটা তিনেক পাখি,
ক্রমশ একটা দেবদারু ও কয়েকটা কলাগাছ,
অবশেষে অনেকগুলি ছানাসহ একটা বেড়াল,
এইসব এঁকে এঁকে তবুও
কাগজের নীচে চার আঙুল জায়গা বাকি থাকে :
সেখানে প্রথমে লিখি, শ্রীচরণেষু
তার নীচে সবিনয় নিবেদন।
এবং কিছুক্ষণ পরে
সবিনয় নিবেদন কেটে লিখি প্রিয়তমাসু।
এবং একটু পরেই বুঝতে পারি
জীবনে এই প্রথম, প্রথমবার প্রিয়তমাসু লিখলাম।
প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনদিন ঠিকমতো সম্বোধন করা হলো না।

প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনোদিন ঠিকমতো ভালোবাসা হলো না।
শুধু হিজিবিজি ছবি, চাঁদ, মেঘ,
সবিনয় নিবেদন কাটাকুটি করে চিরদিন তোমার কাছে পৌঁছোনো।

Monday 17 February 2020

বালিকা আশ্রম ৬- আবু হাসান শাহরিয়ার

বুকের উনপঞ্চাশ পৃষ্ঠা খোলো :
এটা একটা বিষাদের নদী; অভিমানের পাহাড়ে তার বাড়ি

চোখের এক শ বত্রিশ পৃষ্ঠায় যাও :
এটা একটা সাইকেলের গল্প; বালকের পঙ্খীরাজ ঘোড়া

থুতনির বিরানব্বই পৃষ্ঠা ওল্টাও :
এটা একটা বর্ষার কবিতা; প্রথম চুম্বনের জলরঙে আঁকা

চুলের এক শ উনসত্তর পৃষ্ঠায় থামো :
এটা একটা রাত্রির গীতিকা; এখানেই চন্দ্রাবতী ফোটে

চলো তবে পরিশিষ্টে যাই :
এটা একটা কীটদষ্ট অধ্যায়; তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না

Saturday 15 February 2020

প্রিয়জনের ছবি জমিয়ে কী হয়

প্রিয়জনের ছবি জমিয়ে কী হয়!
এমন তো নয় প্রয়োজন শুধু একটা মুখের আদল।
আসলে তো মানুষ ভালবাসে কন্ঠস্বর, মুখের অভিব্যক্তি, দৃষ্টিতে কাব্য আর সমস্ত শরীর দিয়ে গল্প বলা...

Wednesday 12 February 2020

বিনয় মজুমদার

এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি
মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালোবেসে ফেলি!
গ্রহনে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচূড়া থেকে
পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না, উড়ে যাবে।
প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চ'লে যাবে, ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হবো আমি।

-বিনয় মজুমদার।