Sunday 3 May 2020

অনুবাদ শায়েরী ৩

" Love how did you come to work on a nobody like me?
Is no one else left in this ruined world?"

"ভালবাসা, তুচ্ছ আমাতে কী করে বাসা বাঁধলে তুমি?
এ পোড়া দুনিয়ায় আর কেউই কি বাকি ছিল না?"

-আমীর খসরু

অনুবাদ শায়েরী ২

"Your beauty won't last long when you leave me,
the rose doesn't last long parted from the thorn"

আমাকে ছেড়ে গেলে সৌন্দর্য ম্লান হবে তোমার
কাঁটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গোলাপ বাঁচে না তো

-আমীর খসরু

Friday 10 April 2020

মুদ্রণপ্রমাদ- আবু হাসান শাহরিয়ার

রাত্রির আকাশও কবি; তারারা  বৈষ্ণব পদাবলি
বৃক্ষগণ চিত্রকর; বসন্ত এলেই খেলে হোলি

বৃষস্কন্ধ মহাকাব্যে রংচটা মুদ্রণপ্রমাদ—
        হিংস্র মানুষ

সে যদি মানুষ হয়, তাকে আজ চলে যেতে বলো

[বিমূর্ত প্রণয়কলা/প্রকাশসাল : ২০১৯]

Wednesday 8 April 2020

অভিশাপ- বীথি চট্টোপাধ্যায়

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যেই কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরবে
তখন তোমার ভীষণ ভাবে আমার কথাই মনে পড়বে।
আমার বুকের কলহাস্য এবং নিছক বুকের স্পর্শ—
আমার রূপের টুকরো টুকরো অনুষঙ্গ,
হাতের নরম আঙুলগুলো তোমার চুলে খেলা করবে।

এসব কথা বাড়িয়ে বলা একদমই নয়
যখন তুমি আমায় নিয়ে জড়িয়ে ছিলে
তখন থেকেই আমার ভুরু, চিবুকের ডৌল,
শাড়িতে ঢাকা পায়ের পাতা, বুঝতে পারলো
অন্যকোনও মেয়ের সঙ্গে শুয়ে থাকলেও . . .

পাপের মতো এসব কথা শোনায় যেন
কেমন করে পাপের গতি ভয় হারালো ?
পাপও এত পবিত্র হয়! জানা ছিল না।
সে যাই হোক, এবার তুমি যে মুহূর্তেই
প্রেমে পড়বে, তক্ষুনি ঠিক এমনভাবে
আমার কথাই মনে পড়বে।

তেজ- জয় গোস্বামী

তিনবার মরি যদি দুইবার জলে আর একবার
আগুনে স্বয়ং মৃত্যু হই
হই, যদি একবার তাকে পাই বুকে তবে ওই বক্ষে
ঢুকে গিয়ে আজীবন দুগ্ধ হয়ে থাকি
দুগ্ধ দিয়ে মারো, শুভ্র , বক্ষ চেপে মারো , তোর
মাথা মুখে চুলে ব্রহ্মতেজ মাখামাখি

এক জন্ম- তারাপদ রায়

অনেকদিন দেখা হবে না
তারপর একদিন দেখা হবে।
দুজনেই দুজনকে বলবো,
‘অনেকদিন দেখা হয় নি’।
এইভাবে যাবে দিনের পর দিন
বৎসরের পর বৎসর।
তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে
বা হয়ত জানা যাবে না,
যে তোমার সঙ্গে আমার
অথবা আমার সঙ্গে তোমার
আর দেখা হবে না।

দোল : শান্তিনিকেতন- জয় গোস্বামী


বকুল শাখা পারুল শাখা
তাকাও কেন আমার দিকে?

মিথ্যে জীবন কাটলো আমার
ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে-

কী করে আজ আবীর দেবো
তোমাদের ঐ বান্ধবীকে!


শান্ত বলে জানতে আমায়?
কলঙ্কহীন, শুদ্ধ বলে?
কিন্তু আমি নরক থেকে
সাঁতরে এলাম

তখন আমার শরীর থেকে
গরম কাদা গড়িয়ে পড়ছে
রক্ত-কাদা

হঠাৎ তোমায় দেখতে পেলাম
বালিকাদের গানের দলে

সত্যি কিছু লুকোচ্ছি না।

প্রাচীন তপোবনের ধারে
তোমার বাড়ি

কখন যাবো? - ঘুম পাচ্ছে-
বলো কখন মুখ রাখবো
তোমার কোলে!
বারণ করবে?

Tuesday 7 April 2020

মনে পড়ে- মহাদেব সাহা

এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে
মনে পড়ে মেঘ, মনে পড়ে চাঁদ,
জলের ধারা কেমন ছিলো-
সেসব কথাই মনে পড়ে;
এখন শুধু মনে পড়ে, নদীর কথা মনে পড়ে,
তোমার কথা মনে পড়ে,
এখন এই গভীর রাতে মনে পড়ে
তোমার মুখ, তোমার ছায়া,
তোমার বাড়ির ভেতর-মহল,
তোমার উঠোন, সন্ধ্যাতারা
এখন শুধু মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে;
তোমার কথা মনে পড়ে
অনেক কথা মনে পড়ে,
এখন শুধু মনে পড়ে, এখন শুধু মনে পড়ে;
এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে
আকাশে মেঘ থেকে থেকে
এখন বুঝি বৃষ্টি ঝরে।

Saturday 4 April 2020

আর কোনোদিন হইনি এমন মর্মাহত – মহাদেব সাহা

এর আগে আর কোনোদিন আমি
হইনি এমন মর্মাহত
যেদিন তোমার চোখে প্রথম দেখেছি আমি জল,
অকস্মাৎ মনে হলো নিভে গেলো সব পৃথিবীর আলো
গোলাপবাগান সব হয়ে গেলো রুক্ষ কাঁটাবন।
সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি
মর্মাহত হইনি এমন
সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি
মর্মাহত হইনি এমন
যেদিন প্রথম পথে দেখলাম অনাথ কিশোর এক
ক্ষুধায় কাতর কেঁদে মরে,
তখনই আমার মনে হলো পৃথিবীতে কোথাও
তেমন আর সুখ কিছু নেই
ফুলের দোকানগুলি হয়ে গেছে অস্ত্রের গুদাম।

আমি আর কোনোদিন মর্মাহত হইনি এমন
যেদিন প্রথম দেখি
ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় রক্ত লেগে আছে,
যেদিন প্রথম সবুজ বৃক্ষের দিকে চেয়ে দেখলাম
সেখানে লুকিয়ে আছে বিষধর সাপ, নদীর গভীরে
চোখ ফেলে দেখি এই জলে দূষণের বিষ, হাঙর-কুমির
তখনই দুহাতে ঢেকে মুখ বুঝলাম কতোখানি দুঃখী
এই কাছের পৃথিবী।
যেদিন প্রথম আমি আকাশের দিকে চেয়ে দেখলাম
মেঘে বজ্র, ক্রূর ঘূর্ণিঝড়
অরণ্যে ভীষণ সব পশু, লোকালয়ে খুনী আততায়ী
তখনই আমার মনে হলো পৃথিবীর আলো অস্তমিত।
এর আগে আমি আর  কোনদিন মর্মাহত হইনি এমন
যেদিন প্রথম শুনি প্রেমিক অক্লেশে বসিয়েছে ছুরি প্রেমিকার বুকে
তখন বুঝেছি পৃথিবীতে দুঃখ ছাড়া চাষবাস হবে না কিছুই।

এর আগে কোনোদিন এমন হইনি মর্মাহত
যেদিন বৃক্ষের কাছে গিয়ে দেখলাম রক্ত ঝরে বৃক্ষের শরীরে
নদীর নিকটে গিয়ে দেখি নেই তার বুকে এতোটুকু তৃষ্ণারও জল
তখনই বুঝেছি কতোটা নির্দয় হতে পারে এই ভালোবাসার পৃথিবী।
সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি হইনি এমন মর্মাহত
যেদিন দেখেও তুমি চোখ তুলে ফিরে তাকালে না।

পালক- শঙ্খ ঘোষ

সবকিছু মুছে নেওয়া এই রাত্রি তোমার সমান।
সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি পড়ে। কখনো-কখনো
কাছে দূরে জ্বলে ওঠে ফসফরাস। কিছুরই কোথাও
ক্ষান্তি নেই। প্রবাহ চলেছে শুধু তোমারই মতন
একা একা, তোমারই মতন এত বিকারবিহীন।
যখনই তোমার কথা ভাবি তবু, সমস্ত আঘাত
পালকের মতো এসে বুকের ওপরে হাত রাখে
যদিও জানি যে তুমি কোনোদিনই চাওনি আমাকে।

আড়ালে– শঙ্খ ঘোষ

দুপুরে রুক্ষ গাছের পাতার
কোমলতাগুলি হারালে-
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে ।
যখন যা চাই তখুনি তা চাই ।
তা যদি না হবে তাহলে বাঁচাই
মিথ্যে, আমার সকল আশায়
নিয়মেরা যদি নিয়ম শাসায়
দগ্ধ হাওয়ার কৃপণ আঙুলে-
তাহলে শুকনো জীবনের মূলে
বিশ্বাস নেই, সে জীবন ছাই!
মেঘের কোমল করুণ দুপুর
সূর্যে আঙুল বাড়ালে-
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে ।।

নৌকাডুবি- অমিতাভ দাশগুপ্ত

সরলের মধ্যে আছে কত মারাত্মক প্রতারণা,
যখন তা জানা যায়–
বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে।
ঐ গ্রীক নাক নিয়ে বিনয়ে সন্নত
যে-যুবক বসেছে সামনে,
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে কত তীব্র আর্সেনিক,
যখন তা বোঝা যায়–
সারা দেহ নীল হয়ে গেছে।
নীলের কাঙাল তুমি?
নদী দ্যাখো, সাঁতারে যেয়ো না,
ওর বুকে কমপক্ষে
গোটাকুড়ি নৌকাডুবি আছে।