Tuesday 21 July 2020

কাঠের বাড়ি- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

কাঠের বাড়ি কাঠের বাড়ি
জঙ্গলে যায় একলা গাড়ি
বুকের মধ্যে রাত

আঙুল ধরে পাতলা নদী
সাঁকোর উপর সপ্তপদী
হাতের ওপর হাত

ছাড়িয়ে নিয়ে উধাও তুমি
জঙ্গলে আজ মরুভূমির
ভীষণ উল্কাপাত

কাঠের বাড়ি কাঠের বাড়ি
তোমায় ছাড়া ওই আনাড়ীর
সকল কিস্তি মাত

দিন কেটে যায় রাতের মতো
সন্ধে কাটে অসংযত
অতল গিরিখাত

প্রদীপ হাতে অন্ধকারে
আর কতদিন হাঁটতে পারে
মনখারাপের ধাত...

কাঠের বাড়ি কাঠের বাড়ি
আমিও জেনো আগুন পারি...

পুড়িয়ে দিলাম হাত...

স্মরণজিৎ

অন্ধ আমার জীবন জুড়ে রাত্রি একা নামে
তোমার বাড়ির মাথায় এসে কাদের আকাশ থামে?
কাদের শহর চমকে ওঠে তোমার ধ্রুবতারায়
কোথায় কারা ভিজলো, যখন বৃষ্টি তোমার পাড়া
সাজিয়ে তোলে বর্ষাতি আর একলা বকুল দিয়ে?
তোমার মুখের হলুদ আভা নিজের পিঠে নিয়ে
বন্ধু নামের বিন্দু যেন আলোর মতো ভাসে
তোমার কথা ভাবলে আমার জোনাক মনে আসে!

আলোর গন্ধ- স্মরণজিৎ

বহু বহু জন্মের ওপার থেকে যেন ভেসে আসছে শব্দ । যেন বহুদিন পর নির্জন গুহামুখ ফাটিয়ে বেরিয়ে আসছে ঝর্ণা । মেঘ থেকে যেন বহুদিন পর নেমে আসছে বৃষ্টি ।
'কেমন আছিস ?'
কেমন থাকে প্রিয় মানুষকে ছেড়ে থাকা মানুষ? ঘুমের মধ্যে পাহাড়ি পথে মিলিয়ে যাওয়া সাইকেল যে আসলে মিলিয়ে যায় না । শরীরের ভিতর সেই রোগা সাইকেলের দাগ বয়ে বেড়ানো মানুষ কেমন থাকে? কতটা কষ্ট পেলে সে একলা হয়ে যায়?
(আলোর গন্ধ)

অলিখিত-স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

দীর্ঘদিন তোমাকে দেখিনি
স্পর্শ করিনি আরও দীর্ঘ সময়
চারিদিকে কে যেন ঝুলিয়ে দিয়েছে কালো পর্দা
কে যেন বলেছে চুম্বন বন্ধ থাকবে আগামী দু হাজার বছর
শুধু প্রজাপতি উড়বে শূন্য রেল ইয়ার্ডে সারাদিন

আর আমি সব কিছুর থেকে সরে, পিছিয়ে
হাতে তুলে নিই যুদ্ধের কোনও বই
সুড়ঙ্গে বসে ভাবি, আরও একটু পড়িজ
আরও একটু রুটির টুকরো, বেকড বিনস্ আর শুকনো মাংস
হলদে হয়ে যাওয়া সাদা কালো ছবি, রূপোর লকেট,
রুমালে ফুটিয়ে তোলা নাম!
ভাবি, এমন যুদ্ধের মাঝে
বহু বহুকাল আমাদের আর দেখা হবে না
শুধু মনখারাপ রঙের রোদ উঠবে পাড়ায়,
হাওয়া দেবে শূন্য পথে
বৃথা যাবে সমস্ত বকুল, গন্ধরাজ

এখন নিরুপায় সুড়ঙ্গ থেকে কল্পনা করে নিই তোমার চোখ,
কল্পনা করি,
টেবল ল্যাম্পের আলোয় মাথা ঝুঁকিয়ে পড়ছ কোনও বই।
আর ভাবি,
এখনও কি স্নান সেরে তুমি জল দাও টবে? পাখি আসে?
কাঠের পুতুল দেখে মনে পড়ে কিছু, কখনও!

ইচ্ছে হয়, চিঠিতে লিখি —
আজ সারাদিন মনখারাপ, বাঙ্কারের ধুলোয় তুমি তুমি গন্ধ!
পুরোনো দিনের মতো লিখি —
'দীর্ঘদিন তোমারে দেখি নাই,
এ শূন্যতা পূরণ করিবে কে প্রিয়তমা!'

লিখি না

জীবনের পাশ থেকে- ভাস্কর চক্রবর্তী

ভালোবাসা হয়তো বা তোমাকে বুঝেছি
উৎকট নির্দয়তা তোমার সঙ্গেও দেখা না হলে বলো তো
জীবন কীভাবে আমি বুঝতাম জীবন ?

(কবিতাংশ)

যৎসামান্য - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

লুকিয়ে রেখো না কোনো গোপন সিন্দুকে কিংবা লিখো না দলিলে
না দিলে থাকে না কিছু, ভালোবাসা ডুবে যায় স্বখাত সলিলে!

(কবিতাংশ)

ব্যর্থ প্রেম - সুনীল বন্ধ্যোপাধ্যায়

অহঙ্কারের প্রতিভা জ্যোতির্বলয় হয়ে থাকে আমার
মাথার পেছনে
আর কেউ দেখুক বা না দেখুক
আমি ঠিক টের পাই
অভিমান আমার ওষ্ঠে এনে দেয় স্মিত হাস্য
আমি এমনভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও
আঘাত না লাগে
আমার তো কারুকে দুঃখ দেবার কথা নয়।

(কবিতাংশ)

Monday 20 July 2020

সুখই একমাত্র জিনিস যেটা যেখানে হারায় সেখানে খুঁজলে পাওয়া যায় না।

সুখই সম্ভবত একমাত্র জিনিস যেটা যেখানে হারায় সেখানে খুঁজলে পাওয়া যায় না।

মন হল আদরের ছোট্ট মেয়ে; আহ্লাদী, দস্যি, অবুঝ

মস্তিষ্ক হল বাড়ির বড় ছেলে,
গম্ভীর, হিসেবি, বাস্তবতা বোঝে
আর মন হল আদরের ছোট্ট মেয়ে;
আহ্লাদী, দস্যি, অবুঝ।

আমাকে মনে পড়লেই যেন তুমি এসে কড়া নাড়ো। কোন কিছুই যেন তোমাকে না ফেরায়।

চাইলেই ঈশ্বর দিয়ে দেবেন, এমন হলে অনেক কিছু চাওয়া যায়।
তুমি যেন আমাকে ভালবাসো,
আমি যেন তোমাকে ভুলে যাই
কিংবা, প্রতিবার আমাকে মনে পড়লেই যেন তুমি এসে কড়া নাড়ো, আমাকে খোঁজো।
কোন কিছুই যেন তোমাকে না ফেরায়।

Sunday 19 July 2020