অধিবর্ষ দিনে, আলোকবর্ষ দূরত্ব নিয়ে কারও জন্য প্রার্থনা করছি-
জীবন শুভ্র হোক,
শাঁখ ও শঙ্খের মত।
Sunday 26 July 2020
Saturday 25 July 2020
সীমান্ত- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
কেউ নেই আজ বৃষ্টি রয়েছে শুধু
এলোমেলো কিছু গাছেদের বৈশাখী
জল পেয়ে মাটি ঘুমিয়ে পড়েছে কবে
আমি সারারাত একা একা জেগে থাকি
মেঘের ওপারে ছড়িয়ে রয়েছে তারা
চাঁদ লেগে সব হলুদ হয়েছে দূরে
আজ সন্ধেয় বৃষ্টির ফোঁটা দিয়ে
তোমার যাওয়ার পথটুকু রাখি মুড়ে
বুকের ভেতরে শহর ফুরিয়ে এল
তুমি চলে গেলে কী জানি কীসের দোষে
জামার কোনায় মনমরা দাগ লাগে
তবু আজও কেউ কালবৈশাখী পোষে
আমিও পুষছি পুরনো তোমার ছায়া
পেরিয়ে যাচ্ছি ঋতুদের হাতছানি
কাঁটাতার হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি একা...
আমাদের আর কোনো দেশ নেই, জানি
বৃষ্টি- শঙ্খ ঘোষ
আমার দুঃখের দিন তথাগত
আমার সুখের দিন ভাসমান!
এমন বৃষ্টির দিন পথে-পথে
আমার মৃত্যুর দিন মনে পড়ে।
আবার সুখের মাঠ জলভরা
আবার দুঃখের ধান ভরে যায়!
এমন বৃষ্টির দিন মনে পড়ে
আমার জন্মের কোনো শেষ নেই।
অপচয়-শঙ্খ ঘোষ
এই রাত্রি নিঃস্ব। খোলা আকাশকে মুখোমুখি রেখে
শূন্যতার মাঝখানে অবলম্বনহীন ভেসে আছি।
অনন্তশয়ানছবি, দূরে দূরে বুদবুদের মতো
তারাগুলি ধরে আছে সাবেকযুগের কাতরতা।
বিশ্বাস? কোথায় তার বাসা ছিল ভেবেছ কখনো?
আঘাত কোথায়? সে কি ডমরুর মতো বেজে ওঠে?
তোমার মুখের ডৌল মাঝো মাঝে তবু মনে পড়ে
কালরাত্রে, প্রবাহণে, আগুনে না অবিমৃশ্য ঝড়ে---
তুৃৃমিহীন তুমি দিয়ে ভরে রাখি যা ভরার নয়
আজ শুধু মনে পড়ে আমার সমস্ত অপচয়।
সহজ- শঙ্খ ঘোষ
আমিই সবার চেয়ে কম বুঝি, তাই
আচম্বিতে আমার বাঁ-পাশে এসে হেসে
পিঠ ছুঁয়ে চলে যাও;
'অত কি সহজ?' বল তুমি।
তার পর আমার কী বাকি থাকে? অপরাধ
আমার দু-পাশে কেন কাশফুল হয়ে ভরে ওঠে?
শরীরে শারদবেলা নত হয়ে নেমে আসে যেন-বা আমিই শস্যভূমি-
অত যে সহজ নয় মাঝে-মাঝে তাও ভুলে যাই।
নিছক স্বপ্নে স্বপ্নে- সমীরণ ঘোষ
ঠিক এইখান থেকে শুরু করি খেলা
স্মৃতি থেকে উড়ে আসছে যে ঘাস
স্মৃতি থেকে ঝরে পড়ছে যে বরফ
আ-বুক শীতের মধ্যে দাঁড়িয়ে
তুমি চিনিয়ে দিলে কালোবিন্দুর স্বর্গহীনতা আমাদের
আমি শাদা চাদরের লম্বা ঝকঝকে ভোর
হাওয়া দিচ্ছে, মোচাফুলের মতো নড়ে উঠছে বিশ্বাস
মানুষের হাত এসে অবিরাম মানুষের সুড়ঙ্গ থেকে
ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার...
তোমার রক্ত থেকে যে-বরফ গলে নামছে আজ
তোমার তৃষ্ণা থেকে যে-বিষ ধুয়ে যাচ্ছে দক্ষিণে
আমি প্রিয়দের দেখাবো সেইসব---
ঘুড়ির দিন, ফাঁপা চিৎকার, আলো, আর বিষের গান
তুমি কমলালেবুর পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে দূরে
কোনো এক নদীর হৃদয় বরাবর
উড়ে যাচ্ছে লাল স্কার্ফ, ধানখেতের পাশ দিয়ে
স্কুলবাসভর্তি যে বসন্তের দিন
তাদের একে একে নামিয়ে নিচ্ছো
আপেলের মতো লাল, মাংসল, স্কুলের ভেতর
মায়া- শঙ্খ ঘোষ
নিঃসঙ্গ পাথরের গায়ে গড়িয়ে নামছে ক্ষীণ জলরেখা
তার অবলীলাক্রম দেখতে দেখতে মনে পড়ে
এ-রকমই হবার কথা ছিল
শূন্যে পাক খেতে খেতে ঝরে পড়ছে অনাথপাতা
তার উদাসীনতা দেখতে দেখতে মনে পড়ে
এ-রকমই হবার কথা ছিল
ঘাসের ওপর দিয়ে খরগোসের হালকা দৌড়
তার মসৃণতা দেখতে দেখতে মনে পড়ে
এ-রকমই হবার কথা ছিল
মাটি তার বুক পেতে সবই নেবে বলে স্থির হয়ে আছে
ভাঙা পাঁচিলের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বিকেলে
সমস্তই দেখি
অথচ তোমার জন্য মায়া আজও জটিলতাময়।
মীরাদি- বিজয়া মুখোপাধ্যায়
মীরাদি,
তুমি যদি সুন্দরী নও তো সে কে।
খাতা দেখছ বসে
শেষ বিকেলের রোদ দেয়ালে ছড়ানো
তোমার গালে গ্রিলের ছায়া পড়েছে
ইচ্ছে করছে
আমার হৃদয় বেটে মিশিয়ে দিই
ওই গালে
কপালে চিবুকে।
মীরাদি, তোমার
যেটুকু প্রকাশ্যে দেখি -
বিষাদের চন্দনে নিলীন,
আমাকে একান্তে বলো
অন্তরালে আরও কি সুগন্ধ আছে।
কার জন্য ব্রতবদ্ধ তুমি এতকাল
সে কি অন্ধ পাষাণপ্রতিমা,
বলো তার নামপরিচয়
পাথর ঝরাব আমি।
কিন্তু তারপর
তোমার চন্দন যদি ফুরোয় মীরাদি -
ফুরোবেই,
তখন আমার দিন কাটবে কী করে।
আজ- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
সারাদিন আজ বৃষ্টি আসুক পাখি
ভেজা গাছেদের ডানায় বসুক ঘুম
আমিও নাহয় তোমার দু চোখে রাখি
মেঘ জমা কোনও পাহাড়ের মরসুম
তুমিও কোথাও আলো ছায়া বেঁচে থাকো
মেঘ পিঠে নিয়ে আমিও বেরই ট্রাম
বড় গাছেদের গোপনে পালক রাখো
শহরে ওড়াও নরম গোলাপি খাম
সাদা কাগজের মনমরা আলো ভাসে
বুকের শহর বহুদিন ভাঙাচোরা
প্যাস্টেল রঙে কারা যেন ফিরে আসে...
বিগত জন্মে ছেড়ে গিয়েছিল ওরা!
তুমিও আমায় ছেড়ে গেলে বৈশাখে
এখন শ্রাবণ নির্জন পথে ঋণ
গলাচেরা পাখি কাকে যে এমন ডাকে
আজকে তোমার একলা থাকার দিন
অসমাপ্ত- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
অন্ধকারের আরেকটি নাম শব্দ
তোমার শহরে ভীড় করে আসে আয়না
ঝলসানো কিছু ট্রাম লাইন পড়ে থাকল
তোমার মতোন তারা কেউ উড়ে যায় না
গুমটিতে একা ক্লান্ত ভিখারী গান গায়
বৃষ্টি মাথায় রিক্সাওয়ালার চেষ্টা
থেকে আমি রোজ ভাত দিয়ে মালা গাঁথলাম
যদিও গল্পে মিল হচ্ছে না শেষটায়
বিচ্ছেদ জুড়ে সারা দিন জল ঝরছে
মেঘ বেঁচে থাকে... গড়িয়াহাটায় ঘুম চোখ
নিয়ে উঠে দেখি আমার শহর শূন্য
হাসি মুখে তুমি আমার মৃত্যু গুনছ
বারবার তবু ফিরে আসবার গল্প
সাদা পাতা জুড়ে বেঁচে ওঠবার চেষ্টা
তুমি আসবে না। তুমি ফিরবে না। সব ঠিক
আমিও ডাইরি খোলা রেখে দেব শেষটা...
তারে বলে দিও- মাহমুদুল হাসান
তারে বলে দিও,
ফুল, ফাঁসি কিংবা অস্ত্রের প্রয়োজন নেই,
সে যে আমারে নির্দয়ের মতো অচেনা করে দিলো,
সেই নিদারুণ সুখ- এক মৃতদেহ লুকিয়ে রেখেছে মনে।
Friday 24 July 2020
ভালবাসা- তসলিমা নাসরিন
ভালবাসা পেলে কেবল বেগুন ভর্তা, দুটো লংকা চটকে ভাত
ফুটপাতে রাত
তবু অন্য এক আনন্দ হয় জেতার।
ভালবাসা পেলে
দু'আঙুলের ভেতর জীবন নিয়ে চমৎকার ফোঁকা যায়।
বুকের মধ্যে হায়!
বিনা তারে বেজে ওঠে অলৌকিক সেতার।
Tuesday 21 July 2020
পুজো - স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
আমার যা কিছু, আজ শেষ হয়ে এল
অন্ধের থেকে জোৎস্নাকে ধার করি
কোথায় কে যেন উঁচু করে টিপ পরে!
মাথা নিচু করে সময় পেরোয় ঘড়ি
আকাশে আবার পুজোর বৃষ্টি আসে
প্যান্ডেলে আসে রাত জাগবার চোখ
ফুটপাথে হাঁটে তোমার প্রেমিক যত
তাঁদের দু হাতে আজ কাশফুল হোক
পৃথিবীর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি
তোমার পুজোকে নিজের শরৎ ভাবি
এ শহর ক্রমে বাঁশের কেল্লা হল
চুম্বন হল বোনাসে নতুন দাবি
দূর থেকে এল বন্ধুর মতো অটো
শপিং-এ তোমার মনে এল সোনা-মাটি
আঙুলে জড়িয়ে কবেকার মেঘমালা
বকুল জমায় অন্ধ কলকাতাটি
আমিও অন্ধ, বিশ্বাস করো তুমি
হাতের স্পর্শে কী কঠিন লাগে চেনা
আকাশ কপালে উঁচু করে চাঁদ পরে
দেখলে, তোমার কিছু মনে পড়বে না।
আকাশপ্রদীপ- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
আলোর শহর চমকে উঠল অন্ধকারে
আসতে আসতে বৃদ্ধ হল গাছের পাতা
জং ধরা ট্রাম কোথায় যেন আনমনা আজ
হারিয়ে গেল তোমার দেওয়া অঙ্ক খাতা
তুমিও কোথাও হারিয়ে গেছ, আর আসো না।
আয়না-কোণায় ঘুমিয়ে থাকে মনমরা টিপ
শূন্য ঘরে পর্দা ওড়ে, বই জমে যায়...
বন্ধু আমার বুকের ভেতর একলা ব-দ্বীপ
সব তো আছে। তবুও কেন কিচ্ছুটি নেই?
আতসবাজির আলোয় কেন রাত কাটে না?
একলা পাগল ঘুমিয়ে থাকে পথের পাশে...
তার দু চোখের স্বপ্নগুলো ভীষণ চেনা
বাদবাকি সব ক্লান্ত ঋতুর মেরুন শহর
যার পাশে রোজ বইতে থাকে বৃদ্ধা নদী
এই শহরের কোথাও আছো - মনকে বোঝাই -
অন্ধকারে তাই তো জ্বলে আকাশপ্রদীপ