Monday 10 August 2020

আসমানী প্রেম- নির্মলেন্দু গুণ

নেই তবু যা আছের মতো দেখায়
আমরা তাকে আকাশ বলে ডাকি,
সেই আকাশে যাহারা নাম লেখায়
তাদের ভাগ্যে অনিবার্য ফাঁকি !

জেনেও ভালোবেসেছিলাম তারে ,
ধৈর্য ধরে বিরহ ভার স'বো ;
দিনের আলোয় দেখাবো নিষ্প্রভ
জ্বলবো বলে রাতের অন্ধকারে ।

আমায় তুমি যতোই ঠেলো দূরে
মহাকাশের নিয়ম কোথায় যাবে ?
আমি ফিরে আসবো ঘুরে ঘুরে
গ্রহ হলে উপগ্রহে পাবে !

মাটি হলে পাবে শস্য- বীজে
বাতাস হলে পাবে আমায় ঝড়ে !
মৃত্যু হলে বুঝবে আমি কি যে ,
ছিলেম তোমার সারাজীবন ধরে !

Sunday 9 August 2020

নবধারা জলে ১- উৎপলকুমার বসু

মন মানে না বৃষ্টি হল এত
সমস্ত রাত ডুবো নদীর পাড়ে
আমি তোমার স্বপ্নে-পাওয়া আঙুল
স্পর্শ করি জলের অধিকারে।

এখন এক ঢেউ দোলানো ফুলে
ভাবনাহীন বৃত্ত ঘিরে রাখে--
স্রোতের মতো স্রোতস্বিনী তুমি
যা-কিছু টানো প্রবল দুর্বিপাকে

তাদের জয় শঙ্কাহীন এত,
মন মানে না সহজ কোনো জলে
চিরদিনের নদী চলুক, পাখি।
একটি নৌকো পারাপারের ছলে

(কবিতাংশ)

রৌদ্রে- বিনয় মজুমদার

পৃথিবীর কাজে ব্যস্ত, ভিজে মুখ দুপুরের ঘামে;
আকাশ রয়েছে ভ'রে নীল রৌদ্রে,
শরীরের দীপ্তি তার ক্লান্ত হয়ে আছে ৷
ক্লান্ত হয়ে অবসরে— ক্ষণিক বিশ্রামে
চেয়ে থাকে বহু দূরে— বহু দূরে ঘুরে আসে অলস মেঘের কাছে কাছে,
জেগে থাকা অবসরে নয়—
একদিন চুপি চুপি কাছে যদি যেতে পারি
                                         জ্যোৎস্নার নিচে তার ঘুমের সময় !

কােনোদিন বলেনি সে পৃথিবীর সেই মৃদু পুরাতন কথা৷
একটি মানুষ আর মানুষের জীবনের—হৃদয়ের অপরূপ পরিপূরকতা
মনে ক'রে কােনােদিন ডাকবে না সে কি কোনো
                               মানুষকে—নেবে নাকি বেছে?
হয়তো অনেক বার ডেকেছে স্বপ্নের মাঝে
কেবল ঘুমের ঘোরে ডাকে সে,ডেকেছে I
একদিন চুপি চুপি কাছে যদি যেতে পারি জেগে থাকা অবসরে নয়—
জ্যোৎস্নার নিচে তার ঘুমের সময়!

বিনয় মজুমদার- তরুণ বন্দোপাধ্যায়

************************
স্মৃতির মতো রহস্যময় তিনি,
বীজের মতো ব্যাকুল দুটি চোখ
মেলে অাছেন,সামনে পড়ে অাছে
কান্না,ধুলো,অাকাশ : বিশ্বলোক।

কত-কিছুই দেখে গেলেন তিনি
অবাক করার,স্তব্ধ করার মতো,
অন্যে পেল জ্বরে শীতল প্রলেপ,
তিনি পেলেন জীবন-ভরা ক্ষত !

জীবন সে তো মৃত্যুরই হাত ধরে
অনন্তকে স্পর্শ করে থাকা,
তবু অাকাশ,একটা কথা রাখো :
ফিরিয়ে দাও কবিকে তাঁর চাকা।

(কবিতাংশ)

Saturday 8 August 2020

প্রজাপতি- বিনয় মজুমদার

হয়তো আলোর ভয়ে হয়তো বা লাজে
পৃথিবীর কাছ থেকে, নিজের দু'চোখ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে
রেশমের প্রজাপতি কতোকাল একাএকা এখনো রয়েছে প'ড়ে রেশমের মাঝে।

দেখি আর কতো দিন ভাবি,
একদিন এই বেশ ছিঁড়ে ফেলবে সে,
খেলবে সে উদ্দাম আলোকের দেশে।
প্রতিদিন দেখি আর ভাবি,
লাল-নীল ফুলদের পরিবেশে পাখা মেলে প্রখর বাতাস খেয়ে দ্রুত নাচবে সে।

বহুদিন হলো সে তো ছাড়ে না এ-বাসা, আর
হয় না সে নিজে চমকিত।
অবরোধে থেকে থেকে প্রজাপতি অবশেষে ম'রে যায়নি তো!

এখন ওসব কথা থাক- মণীন্দ্র গুপ্ত

এক লক্ষ বছর সঙ্গে থাকার পর সাব্যস্ত হবে, তুমি আমার কিনা।
ওসব কথা এখন থাক।
এখন চলো মিকির পাহাড়ে বুনো কুল পেকেছে,
                                                   চলো খেয়ে আসি।

লাল রুখু চুল
               সূর্যাস্তের মধ্যে
অর্কিডের উজ্জ্বল শিকড়ের মতো উড়ছে।
—দেখি দেখি, তোমার তামাটে মুখখানা দেখি।

সূর্য এখনি অস্ত যাবে। পশুর মতো ক্ষীণ শরীরে
আমরা হাঁটু পর্যন্ত জলস্রোত পেরিয়ে চলেছি—
                                      জলস্রোত ক্রমশ তীব্র... কনকনে...

বাঁশিওয়ালা- জয়াশিস ঘোষ

যারা বৃষ্টি হলে বাইরে আসে সমুদ্র দেয় পাড়ি
খোয়াবনামা চোখের পাতা বিষণ্ণতায় ভারী

যারা হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখে একটুখানি বালি
ধরতে গেলে আকাশ দেখে খুললে মুঠো খালি

যারা হঠাৎ হঠাৎ প্রেমে পড়ে পা থেমে যায় মোড়ে
ঘুমের ভেতর একটা বিড়াল অবিন্যস্ত ঘোরে

যারা গুছিয়ে রাখে ঘরের কোণ আর ছাদে ফুলের টবও
অতীত থেকে কুড়িয়ে আনে বরফ পড়ার খবর

যাদের ঠোঁট ফুলালে মেঘলা আকাশ হাওয়ায় ওড়ে পাতা
কান্না পেলে উড়িয়ে দেয় বিষাদ ও কলকাতা

যাদের কেউ থাকে না জ্বরের রাতে কপাল থেকে নদী
চোখ বুজলে আলাদিনের প্রদীপ মেলে যদি

যারা নিজের ভেতর লুকিয়ে পড়ে সন্ধে এলে নেমে
একলা ছাদে বৃষ্টি মাখে নিজেই নিজের প্রেমে

যাদের কেউ রাখেনি কপালে ঠোঁট, বলেনি 'ভালোবাসি'
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তারাই বাজায় বাঁশি...

বন্ধুকে- অরণি বসু

কাল রাতে অনেকদিন পর তোমাকে আবার স্বপ্নে দেখলুম।
দেখলুম, এক বিশাল হলঘরে সার সার লোকের সঙ্গে
তুমি বসে আছো, আমিও। একটু তেরছাভাবে মুখোমুখি।
সবাই কথা বলছে সবার সঙ্গে, কুশল বিনিময় করছে, আর
সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে উড়ে এসে লাল নীল পরীরা
হাতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে কাগজের কফিপাত্র।
শুধু আমরাই কোনো কথা বলছিলুম না।
আমি মাঝে মাঝে চোখ তুলে দেখছিলুম, তুমি
                              কখনো কটমট করে তাকিয়ে আছো আমার দিকে,
                              কখনো চোখ থেকে সরিয়ে নিচ্ছো চোখ।

প্রথম প্রথম মজা লাগছিলো খুব ;
প্রথম প্রথম মনে হচ্ছিলো এ-ও তো আরেক রকম খেলা।
তারপর হঠাৎ কখন, কেন, কিভাবে জানি না আমার মাথায়
জমে উঠলো মেঘ, মেঘ নেমে এসে ভিজিয়ে দিলো চোখ।
সার সার লোকের মধ্যে একদম একা, আমি,
রুমাল বার করে, চোখ ঢেকে বসে রইলুম।

অনেকক্ষণ পর, চোখ খুলতেই দেখি সব ভোঁ ভোঁ।
কোথায় লোকজন, কোথায় পরী আর তুমিই বা কোথায়!
নিজের ঘরে আয়নার সামনে বসে আমি একা-একা
কাঁদছি, কাঁদছি, কেঁদেই চলেছি।

শিলালিপি- গৌতম গুহ রায়

পাহাড়ে বেড়াতে গেলে যার শিলালিপির কথা মনে পড়ে
তাকে ভালোবাসবে বলে মেয়েটি জাদুঘর হল

তার হাতে পায়ে কষ্টিপাথরের কারুকাজ
তার মুখে রতিপাথরের উল্লাস
যুবকটির খোঁজে পাহাড়ের খাঁজে
লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে জাদুঘর

পাহাড়ি ঝরনা দিয়ে বহে আসে প্রস্তরখণ্ড
অগ্নিস্তন....মন্ত্র খচিত তাতে....
শোনা যায়, পিকনিক - পাগল যুবকেরা
শিলালিপির মন্ত্রে চিঠি লেখে
                             তাদের যুবতীদের -

মন্ত্রস্পর্শে জেগে ওঠে অনন্ত অগ্নিতাপ

Amir Khusrau

Khusrau asked him,

~‘Who are you? What are you making?’
-Farhād replied,
        ‘I am a lover. I am smelting my soul.’
~‘What is the mark of a lover?’
       - ‘He knows to live and suffer.’
~‘What do such lovers really want?’
        -‘To give their hearts and seek out pain.’
~‘Why are their hearts not with them?’
        -‘Do the beautiful beloveds allow this?’
~‘What is the beloved’s creed?’
       - ‘They call it coquetry and deceit.’
~‘What is her other occupation?’
       - ‘To take life and give sorrow.’
~‘Does sorrow’s bitterness ever decrease?’
        -‘It is sweeter than sorrow, so it’s fine.’
~‘How do you fare with this distance from her?’
        -‘I am dying away so far from her face.’
~‘Does her radiance sometimes fall on you?’
        -‘Yes, but from afar, like the moon.’
~‘Don’t look at her as long as you live.’
       - ‘Death would be better than that life.’
~‘She will put your life in danger.’
       - ‘My life is cheap, I have no fear.’
~‘Keep your distance from that friend.’
       - ‘That is not friendship’s way.’
‘She is untried and nothing but trouble.’
       ~ ‘How does that pertain to love?’
‘How long will you suffer for her?’
       - ‘All my life and in death as well too.’
~‘And if you die from this passion?’
       - ‘I will pray for her in annihilation.’
~‘And if she should chop off your head?’
       - ‘It will look towards her from beneath the earth.’
~‘And if she were to spill your blood?’
        -‘I will die longing for her.’
~‘Isn’t bloodshed a heinous crime?’
       - ‘It is lawful when shed by the friend.’
~‘If she were to suddenly pass before you?’
       - ‘My eyes would sweep the way before her.’
~‘If she lays her foot on your eyes?’
        -‘There’s room in my eyes and heart.’
~‘If you see her form in a dream?’
        -‘I will not wake up until Judgement Day.’
~‘Do you ever dream of this?’
        -‘Indeed, if ever I manage to sleep.’
~‘If she asks you to dig through stone with your nails?’
       - ‘I would even use my eyelashes for miles.’
~‘Live long in your sorrow for your friend.’
       - ‘How can I live when she is my life?’
~‘Love has put your life in danger.’
        -‘What have lovers to fear from this?’

Whatever the great monarch said to him,
Farhād answered him back as a lover should.
The king was impressed by the passion
and perseverance in such a true and tried lover.

Friday 7 August 2020

অনুবাদ শায়েরী ১৪

প্রার্থনাতে সব পাওয়া যায় এমন অনেক শুনেছি
তাই খোদার কাছে প্রতিদিন তোমায় চেয়েও দেখেছি
কপট সুখ পেয়েছি আর দুঃখও তো পেয়েছি
শুধু তাকে কেন পাইনি যাকে এত করে চেয়েছি!

- রানা আকবারাবাদি

Wednesday 5 August 2020

শীতকাল- অরণি বসু

বলব না বলব না করেও বলে ফেলি
তোমার চোখের নীচের কালো দাগ, বিরক্তি, উদ্বেগ আর
গড়িয়ে চলা মনখারাপের কথা।

বলে ফেলি কুয়াশামাখা ভোর আর অকালে বুড়িয়ে যাওয়া সুপর্ণার কথা।

শীতকাল আসছে।

(কবিতাংশ)