টবটা রাঙিয়েছি সবুজ রঙে। সবুজ টবে কী ফুল ফোটাব? কেন, লাল? তাহলে গোলাপই হোক। গোলাপ ছাড়া কোন ফুলে আর মানাবে তোমায়? লাল ছাড়া কোন রঙে আর রাঙাব তোমায়? সুতরাং তোমার জন্য গোলাপ। সবুজ টবে লাগিয়েছি। আমার জানালার পাশের বারান্দায়। প্রতি সকালে টবটা আমি সরিয়ে দিই আলোর দিকে। প্রতি বিকেলে জল ঢালি আমি গোলাপ চারায়। আর সারা দিনমান, দুপুর কিংবা সন্ধ্যাগুলোয় অথবা রাতবিরাতে আমার বুকের গভীরে গজিয়ে ওঠা আরেকটি গোলাপের গাছের যত্ন নিই আমি। অতি আদরে। ভালোবাসায়। গোলাপের কাঁটায় আমার হৃৎপিণ্ডে রক্তক্ষরণ হয়। ডালপালা ছড়িয়ে যায় আমার সারাটা অস্তিত্বে। এই আমি হয়ে যেতে থাকি আস্ত একটা গোলাপগাছ। তোমার জন্য। আমার সবুজ টবের গাছটাও বাড়তে থাকে। ডালপালা ছড়ায়। চলে ফুল ফোটানোর আয়োজন। তোমার জন্য।আমার অপেক্ষার প্রহরগুলো ছড়িয়ে পড়ে জলে-হাওয়ায়, কখনো বা ডালপালা আর পাতায় পাতায়। তোমার সাড়া পাওয়ার অপেক্ষা অথবা অপেক্ষা গোলাপ ফোটার। কিংবা দুটোরই।তুমি আসবে বলেছিলে। না, বলোনি। তোমার ভেজা চোখে, নোয়ানো পাপড়িতে, তোমার কম্পমান ঠোঁটে প্রশ্রয়ের মায়া দেখেছিলাম আমি। তাই তো বুনেছি সবুজ টবে গোলাপের চারা।আসবে তুমি। কোনো মিথ্যে নেই। সবুজ শাড়িতে গোলাপি মুখাবয়ব ফুটে উঠবে তোমার। তোমাকে নিয়ে যাব বারান্দায়। হাত ধরে। যেখানে আমার গোলাপ অপেক্ষায় আছে। ফোটার জন্য। তোমার জন্য। তোমাকে নিয়ে রাখব বুকের মাঝে। যেখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বহুদিন। তোমাকে দেখার পর থেকে। চুড়িতে-নূপুরে টুংটাং শব্দ তুলে আসবে তুমি। সেই শব্দে পাপড়ি মেলবে আমার গোলাপ। সেই শব্দে বন্ধ হবে বুকের রক্তপাত। ...অতঃপর আমার প্রতীক্ষা নীল হয়ে ছড়িয়ে যায় আকাশে আকাশে। ভালোবাসাও। আমার গোলাপটা ঝরে যায়। বিবর্ণ হয়ে যায় টবের সবুজ। রক্ত ঝরে ঝরে অনুভূতিশূন্য হয়ে যায় বুকটা। না-ই বা যদি আসবে, কেন তবে ঠোঁট কাঁপালে? পাপড়ি নোয়ালে? না-ই বা যদি আসবে, কেন তবে চোখ ভেজালে?
প্রকাশ: ৭ এপ্রিল ২০১৩ (প্রথম আলো- বন্ধুসভা)
https://www.bondhushava.com/আমি-তোমায়-গোলাপ-দেব