তবু কি আমার কথা বুঝেছিলে, বেনেবউ পাখি?
যদি বুঝতে পারতে
নারী হতে।
আমাকে বুঝতে পারা এতই সহজ?
কারুকেই বোঝা যায় নাকি!
শুধু বহে যায় বেলা, ঈশ্বর নিখোঁজ ;
কিংবা বুঝি এ-দুঃখ পোশাকি,
না-হলে কী করে আজও বেঁচে আছি রোজ,
বেনেবউ পাখি!
তবু কি আমার কথা বুঝেছিলে, বেনেবউ পাখি?
যদি বুঝতে পারতে
নারী হতে।
আমাকে বুঝতে পারা এতই সহজ?
কারুকেই বোঝা যায় নাকি!
শুধু বহে যায় বেলা, ঈশ্বর নিখোঁজ ;
কিংবা বুঝি এ-দুঃখ পোশাকি,
না-হলে কী করে আজও বেঁচে আছি রোজ,
বেনেবউ পাখি!
মাঝে-মাঝে স্পষ্ট করে বলা দরকার
ঈশ্বর আছেন,
মগডালে-বসে-থাকা পাপিয়াকে আর
পর্যবসিত বস্তুপৃথিবীকে স্নান করাচ্ছেন।
মাঝে মাঝে স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন
তুমি যে আমার
সাধনার ধন,
তুমি চলে গেছ বলে আমাকে গাহন করাবার
কেউ নেই, যত্রতত্র সেরে নিই মধ্যাহ্নভোজন।।
তুমি যে হাতে স্বপ্ন সাজিয়ে গড়ো আপন পৃথিবী
আমার সে হাত নেই,
প্রতিবার তাই নত হয়ে আসি তোমার চোখের কাছে ।
ওই চোখ জানে কতোটা প্লাবনে ভেসেছে জীবন
কতোটা খরার খরতায় বুকে জ্বলেছে সবুজ মাটি,
নিশিদিন জুড়ে জেগে থাকা সেই ধ্বংসের স্মৃতি
নত হয়ে আসি তাতে ।
যে হাতে জড়ানো অমেয় সাহসে গড়েছো শব্দহীনতা
আমার সে হাতে সে সাহস আজো নেই
প্রতিবার তাই নত হয়ে আসি তোমার পৃথিবী ছুঁয়ে ।
ফেরার সময় হয়ে গেছে বোলে সাজিয়েছি পাখা
জানি, পথ টেনে নিয়ে যাবে দুজনায় দুই প্রান্তে
কোনোদিন আর স্মৃতির সম্মুকে বিশ্বাস বেঁধে হবে না আসা
ভুলে যাওয়া সত্যি হবে অন্য প্রয়োজনে ।
যদি শেষ বাঁশি বেজে থাকে বুকে
তবে একটি মুহূর্ত শুধু বিস্মৃতিবিহীন
একটি না বলা কথা এসে পোড়াক হৃদয়
নীল অনন্ত আগুনে ।
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান শুধু একটি রাত
সুনির্দিষ্ট একটি দিন,
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান শুধু একটি ঘর
অলৌকিক এক শূন্যতা ।
তোমার থেকে আমার বুকের
ব্যবধান এক করুন চাঁদ
আগুন ঘষা আকাশটা,
তোমার থেকে আমার চোখের
ব্যবধান এক রম্য কাঁচ
কালো ফ্রেমের ব্যর্থতা ।
তোমার থেকে আমার পথের
ব্যবধান এই বাতাসটুকু
ঘৃন্যতম নিসর্গ,
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান ঐ নীল হাসি
বিষন্নতার দুইটি ঠোঁট ।
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান শুধু তুমি আমি,
অমীমাংসিত তিনটি হাত ।
অপমান আর অবহেলায় অনুভূতি মরেছে,
পৃথক হয়ে শিখেছি বাঁচতে শেখা-
নতুন ঘরে দক্ষ আমরা মানিয়ে নিতে,
মিল ছিলনা আমাদের ভাগ্যরেখায়।
একদিকে পড়ে শরীর। অন্যদিকে মন,
অন্তরেতে বাস অন্য এক পড়শীর-
ভালোবাসা অপরাধ। অভিশাপ ছিল আমাদের,
সবশেষে তাই রাতের ঘরে গুমরে মরছি।
তুমি এখন প্রহর গুনছ ফেরত পাওয়া ব্যস্ত দিনের,
সমান্তরাল পথ। প্রাক্তন আজ'ও আছে সুখে-
নিয়ম করে ফুল ফোটেনো আর সদ্য কুঁড়ির,
মৃত্যু আসার ঠিক আগে জড়িয়ে নিও নিথর বুকে।
যেমন চাঁদের জন্য চাই একটি আকাশ
তেম্নি হৃদয়ের জন্য নিঃসীম ভালবাসা,
ফসলের জন্য বন্ধ্যামাটিতে প্রয়োজন
শিল্পীর মতো তিতীষ্ণু এক চাষা;
সখী, চাঁদ যদি রাখো হাঁড়ির ভিতরে বন্দী
কেউ কি জানবে কত সীমাহীন তার প্রতিভা,
এ হৃদয় যদি কারো নাহি বাসে ভালো
তুমি বলো : আহা কার কি তাতে ক্ষতি বা!
ভীষণ যে ক্ষতি বুঝবে না তুমি কোনোদিন,
বক্ষ তোমার বন্ধ্যামাটি কালো উপমা,
ভালোবাসা ছাড়া হৃদয় যে শুধু অর্থহীন
সেটাই বুঝতে তোমাকে করেছি প্রেমের ক্ষমা।
ভালবাসা মানে এমন তো নয়, শুধু প্রেম প্রেম খেলা,
ভালবাসা মানে বাসনা-কুসুম একে একে ছিঁড়ে ফেলা।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু দাঁত দিয়ে মাড়ি কাটা,
ভালবাসা মানে কাঁটার ওপরে রক্তাভ হয়ে হাঁটা।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু রঙে রঙে হোলি খেলা,
ভালবাসা মানে স্বপ্ন অভ্রে হৃদয় রাঙিয়ে তোলা।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু প্রেমহীন মৈথুন,
ভালবাসা মানে লুকানো কবিতা মনে সেতারের ধুন।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু জ্যোৎস্নায় গান গাওয়া।
ভালবাসা মানে ফুলের মতন নিঃশেষে ঝরে যাওয়া।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু হাতে হাতখানি রাখা।
ভালবাসা মানে হৃদয় বেদনা মনের গভীরে ঢাকা।
ভালবাসা মানে শুধুই দুজন? বাকি আর সব পর?
ভালবাসা মানে সবাই আপন তুমি আমি যাযাবর।
যাকে ছেড়ে গিয়েছিলে তাচ্ছিল্য মাখিয়ে
সে কবেই ঠাঁই পেয়ে গেছে অন্যমনে।
তোমাকে না ভোলা তার চিরস্থায়ী হয়ে থাক
আজও তুমি ভেবে যাও অশ্রুর বিজনে।
ছেড়ে ছিলে যদি তবে কেন এত দ্বিধা ভুলে যেতে?
বিমুখ করার ছলে আসলে তুমিও তাকে
চেয়েছিলে পেতে।
সকলেই ভারে কাটে, কজনই বা ধারে!
নিরাপত্তা সুনিশ্চিত,
এইবার ঝুঁকি নিয়ে দেখা যেতে পারে?
শেষ কথা বলেছিলে, আরও কিছু ছিল তবে বাকি!
আকাশ পরিধি জুড়ে উড়ছে স্মৃতির টিয়াপাখি।
তুমি যে বলেছিলে গোধূলি হলে
সহজ হবে তুমি আমার মতো,
নৌকো হবে সব পথের কাঁটা,
কীর্তিনাশা পথে নমিতা নদী!
গোধূলি হলো।
তুমি যে বলেছিলে রাত্রি হলে
মুখোশ খুলে দেবে বিভোর বিভা,
অহংকার ভুলে অরুন্ধতী
বশিষ্ঠের কোলে মূর্ছা যাবে!
রাত্রি হল।
যে-কোনও ছুতোয় আমি একদিন অভিমান করে
সব কিছু ছেড়ে চলে যাব,
তোমার ঘুমন্ত মুঠি তাই কি এভাবে ধরে রাখে
বসনের খুঁট? তুমি ভাবো,
দিগন্তের অন্ধকার হঠাৎ বন্ধুর মতো যদি অবিকল নাম ধরে
কোনওদিন ডাকে,
তুমি ফেরাবে আমাকে।
নিশি-পাওয়া মানুষেরা কত দূরে যায়? যেতে পারে?
আমি তারও চেয়ে বহু দূর
যোজন-যোজন পথ পার হয়ে যাই। রুক্ষ, অচেনা, কঠিন,
প্রতি রাত্রে অদ্ভুত বন্ধুর
দিগন্তের কাছাকাছি, দিগন্ত ছাড়িয়ে, শূন্য নির্জন আঁধারে
নিরালম্ব, আশ্রয়বিহীন।
তুমি জানলে না, কোনওদিন।
কে বলে কাফন শুধু সাদা রঙের দেখতে?
আমি তো এক লাল বেনারসিতে
আমার জানাজা দেখেছিলাম।
- আল্লামা ইকবাল
একটু একটু করে তাকে ভুলেছি আমি,
কিস্তিতে আত্মহত্যার স্বাদ আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারো ।
- খুমার বারাবানকাভি
বসন্ত নয় আমার দরজায় প্রথম কড়া নেড়েছিল অবহেলা।
ভেবেছিলাম অনেকগুলো বর্ষা শেষে শরতের উষ্ণতা মিশিয়ে এলো বুঝি বসন্ত!
দরজা খুলে দেখি আমাকে ভালোবেসে এসেছে অবহেলা।
মধ্য দুপুরে তীর্যক রোদের মত অনেকটা নির্লজ্জের মত আমাকে আলিঙ্গন করে নিয়েছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত অবহেলা।
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখেছিলাম আমার দীন দশায় কারো করুণা বা আর্তিব পেখম ছড়িয়ে আছে কী না!
ছিলো না।
বৃষ্টিহীন জনপদে খড়খড়ে রোদ যেমন দস্যুর মত অদমনীয়
তেমনি অবহেলাও আমাকে আগলে রেখেছিল নির্মোহ নিঃসঙ্কোচিত।
আমি অবহেলাকে পিছনে ফেলে একবার ভো-দৌড় দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম।
তখন দেখি আমার সামনে কলহাস্যে দাঁড়িয়েছে উপেক্ষা।
উপেক্ষার সঙ্গেও একবার কানামাছি খেলে এগিয়ে গিয়েছিলাম তোমাদের কোলাহল মুখর আনন্দ সভায়।
কী মিলেছিলো?
ঠোঁট উলটানো ভৎসনা আর অভিশপ্ত অনূঢ়ার মত একতাল অবঙ্গা।
তাও শয়ে গিয়েছিলাম একটা সময়।
হ্যাঁ একবার তুমি বা তোমরা যেন দয়া করে বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলে আমার দিকে।
তাচ্ছিল্য নয় একটু মায়াই যেন ছিল,
হতে পারে কাঁপা আবেগ ও মিশ্রিত ছিল তোমার দৃষ্টিতে।
ওইটুকুই আমার যা পাওয়া।
আমি ঝরে যাওয়া পাতা,
তুমি ছিলে আকষ্মিক দমকা হাওয়া।
তারপর ও অবহেলার চাদর ছাড়িয়ে উপেক্ষার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে ও অবহেলার লাল দাগ মুছে জীবনের কোনো সীমারেখা ভাঙ্গতে পারিনি আমি।
একথা জানে শুধু অন্তর্যামী...
তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে কেন তুমি ভেসে যাও
কে তোমায় বাজায় তখন,
কার কন্ঠে গান গায় একান্তের স্মৃতি,
কোন সে হাত এসে সিঁথি কাটে তোমার চুলে,
তোমাকে শয্যা থেকে তুলে নেয়,
তোমাকে তোমার শরীর থেকে তুলে নেয়,
কোন সে পুরুষ?
তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, বোঝেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টির অর্থ,
জানেনা নির্জন করিডোরে নতজানু এক নিঃসঙ্গ যুবক,
তোমাকে মাঝরাতে বৃষ্টির কথা বলেছিল,
তোমার চমকিত চোখে বরিষন দেখেছে সে,
বলেছিল- তোমার নিজস্ব পুরুষ; সে তো জানেনা,
নিজস্ব ছাড়িয়ে আরো কিছু থাকে।