Friday, 10 April 2020

মুদ্রণপ্রমাদ- আবু হাসান শাহরিয়ার

রাত্রির আকাশও কবি; তারারা  বৈষ্ণব পদাবলি বৃক্ষগণ চিত্রকর; বসন্ত এলেই খেলে হোলি বৃষস্কন্ধ মহাকাব্যে রংচটা মুদ্রণপ্রমাদ—         হিংস্র মানুষ সে যদি মানুষ হয়, তাকে আজ চলে যেতে বলো [বিমূর্ত প্রণয়কলা/প্রকাশসাল : ২০১...

Wednesday, 8 April 2020

অভিশাপ- বীথি চট্টোপাধ্যায়

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যেই কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরবে তখন তোমার ভীষণ ভাবে আমার কথাই মনে পড়বে। আমার বুকের কলহাস্য এবং নিছক বুকের স্পর্শ— আমার রূপের টুকরো টুকরো অনুষঙ্গ, হাতের নরম আঙুলগুলো তোমার চুলে খেলা করবে। এসব কথা বাড়িয়ে বলা একদমই নয় যখন তুমি আমায় নিয়ে জড়িয়ে ছিলে তখন থেকেই আমার ভুরু, চিবুকের ডৌল, শাড়িতে...

তেজ- জয় গোস্বামী

তিনবার মরি যদি দুইবার জলে আর একবার আগুনে স্বয়ং মৃত্যু হই হই, যদি একবার তাকে পাই বুকে তবে ওই বক্ষে ঢুকে গিয়ে আজীবন দুগ্ধ হয়ে থাকি দুগ্ধ দিয়ে মারো, শুভ্র , বক্ষ চেপে মারো , তোর মাথা মুখে চুলে ব্রহ্মতেজ মাখামা...

এক জন্ম- তারাপদ রায়

অনেকদিন দেখা হবে না তারপর একদিন দেখা হবে। দুজনেই দুজনকে বলবো, ‘অনেকদিন দেখা হয় নি’। এইভাবে যাবে দিনের পর দিন বৎসরের পর বৎসর। তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে বা হয়ত জানা যাবে না, যে তোমার সঙ্গে আমার অথবা আমার সঙ্গে তোমার আর দেখা হবে ন...

দোল : শান্তিনিকেতন- জয় গোস্বামী

১ বকুল শাখা পারুল শাখা তাকাও কেন আমার দিকে? মিথ্যে জীবন কাটলো আমার ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে- কী করে আজ আবীর দেবো তোমাদের ঐ বান্ধবীকে! ২ শান্ত বলে জানতে আমায়? কলঙ্কহীন, শুদ্ধ বলে? কিন্তু আমি নরক থেকে সাঁতরে এলাম তখন আমার শরীর থেকে গরম কাদা গড়িয়ে পড়ছে রক্ত-কাদা হঠাৎ তোমায় দেখতে পেলাম বালিকাদের গানের দলে সত্যি...

Tuesday, 7 April 2020

মনে পড়ে- মহাদেব সাহা

এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে মনে পড়ে মেঘ, মনে পড়ে চাঁদ, জলের ধারা কেমন ছিলো- সেসব কথাই মনে পড়ে; এখন শুধু মনে পড়ে, নদীর কথা মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে, এখন এই গভীর রাতে মনে পড়ে তোমার মুখ, তোমার ছায়া, তোমার বাড়ির ভেতর-মহল, তোমার উঠোন, সন্ধ্যাতারা এখন শুধু মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে; তোমার কথা মনে পড়ে অনেক...

Saturday, 4 April 2020

আর কোনোদিন হইনি এমন মর্মাহত – মহাদেব সাহা

এর আগে আর কোনোদিন আমি হইনি এমন মর্মাহত যেদিন তোমার চোখে প্রথম দেখেছি আমি জল, অকস্মাৎ মনে হলো নিভে গেলো সব পৃথিবীর আলো গোলাপবাগান সব হয়ে গেলো রুক্ষ কাঁটাবন। সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি মর্মাহত হইনি এমন সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি মর্মাহত হইনি এমন যেদিন প্রথম পথে দেখলাম অনাথ কিশোর এক ক্ষুধায় কাতর কেঁদে...

পালক- শঙ্খ ঘোষ

সবকিছু মুছে নেওয়া এই রাত্রি তোমার সমান। সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি পড়ে। কখনো-কখনো কাছে দূরে জ্বলে ওঠে ফসফরাস। কিছুরই কোথাও ক্ষান্তি নেই। প্রবাহ চলেছে শুধু তোমারই মতন একা একা, তোমারই মতন এত বিকারবিহীন। যখনই তোমার কথা ভাবি তবু, সমস্ত আঘাত পালকের মতো এসে বুকের ওপরে হাত রাখে যদিও জানি যে তুমি কোনোদিনই চাওনি...

আড়ালে– শঙ্খ ঘোষ

দুপুরে রুক্ষ গাছের পাতার কোমলতাগুলি হারালে- তোমাকে বকব, ভীষণ বকব আড়ালে । যখন যা চাই তখুনি তা চাই । তা যদি না হবে তাহলে বাঁচাই মিথ্যে, আমার সকল আশায় নিয়মেরা যদি নিয়ম শাসায় দগ্ধ হাওয়ার কৃপণ আঙুলে- তাহলে শুকনো জীবনের মূলে বিশ্বাস নেই, সে জীবন ছাই! মেঘের কোমল করুণ দুপুর সূর্যে আঙুল বাড়ালে- তোমাকে বকব, ভীষণ...

নৌকাডুবি- অমিতাভ দাশগুপ্ত

সরলের মধ্যে আছে কত মারাত্মক প্রতারণা, যখন তা জানা যায়– বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে। ঐ গ্রীক নাক নিয়ে বিনয়ে সন্নত যে-যুবক বসেছে সামনে, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে কত তীব্র আর্সেনিক, যখন তা বোঝা যায়– সারা দেহ নীল হয়ে গেছে। নীলের কাঙাল তুমি? নদী দ্যাখো, সাঁতারে যেয়ো না, ওর বুকে কমপক্ষে গোটাকুড়ি নৌকাডুবি আছ...

মনে মনে বহুদূর চলে গেছি- শক্তি চট্টোপাধ্যায়

মনে মনে বহুদূর চলে গেছি – যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয় জন্মেই হাঁটতে হয় হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি পথ তো একটা নয় – তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধা নদীর দু – প্রান্তের মূল একপ্রান্তে জনপদ অন্যপ্রান্ত জনশূণ্য দুদিকেই...

তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি- মহাদেব সাহা

তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি তোমাকে ছাড়াতে গিয়ে আরো বেশি গভীরে জড়াই, যতোই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই দূরে ততোই তোমার হাতে বন্দি হয়ে পড়ি, তোমাকে এড়াতে গেলে এভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাই এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি; তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি আমার কিছুই আর করার...

কে চায় তোমাকে পেলে- মহাদেব সাহা

বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অর্থ-পদ চায় বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণসিংহাসন জয়ের শিরোপা আর খ্যাতির সম্মান, কে চায় সোনার খনি তোমার বুকের এই স্বর্ণচাঁপা পেলে? তোমার স্বীকৃতি পেলে কে চায় মঞ্চের মালা কে চায় তাহলে আর মানপত্র তোমার হাতের চিঠি পেলে, তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বলো কে চায় বৃক্ষের ছায়া তোমার শুশ্রূষা...