যেখানে দাঁড়াও তুমি সেখানেই অপার্থিব আলো ।
তুমি হেটে যাচ্ছো,আমি বহু দূর থেকে দেখছি,
তোমার স্যান্ডেল থেকে পুঞ্জ পুঞ্জ জোনাকি শিখার মতো গলে পড়ছে আলো,
কংক্রিট,ধুলোবালি ,ঝড়াপাতা রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে অলৌকিক হীরে মুক্তো সোনা প্রবাল পান্নায়।
তোমার স্যান্ডেলের ছোঁয়ায় সোনা হয়ে যাওয়া এক টুকরো মাটি আমি সেই কবে থেকে বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি দিনরাত।
যে দিকে তাকাও তুমি সেদিকেই গুচ্ছ গুচ্ছ আশ্চর্য গোলাপ।
একবার চোতমাসের প্রচন্ড দুপুরে তুমি দাঁড়ালে পথের পাশে
তোমার পেছনে একটি মরা গাছ হাড়ের মতো শুকনো ডাল জংধরা
পেরেকের মত সংখ্যাহীন কাঁটা ছাড়া কিছুই ছিল না তার।
তোমার আঁচল উড়ে গিয়ে যেই স্পর্শ করলো সেই মরা গরিব গাছকে
অমনি তার কাঁটা আর শুকনো ডাল ঢেকে দিয়ে
থরে থরে ফুটে উঠলো লাল লাল আশ্চর্য্য গোলাপ।
যে দিকে ফেরাও মুখ সেদিকেই আবিভূর্ত অমল সুন্দর।
কলা ভবন থেকে বেরুচ্ছিলে তুমি-
হঠাৎ দুটো গুন্ডা, হয়তো তোমার সহপাঠী, হোন্ডায় চেপে এসে থামলো তোমার পাশে। তুমি ফেরালে মুখ ওদের কুৎসিত মুখের দিকে; আমি দেখলাম-ওদের ঘা আর দাগ ভরা মুখ নিমিষেই হয়ে উঠলো দেবদুতের মুখের মতোন জ্যোতির্ময়।
যে দিকে তাকাও তুমি সে দিকেই অভাবিত অনন্ত কল্যাণ ।
বাসস্টপে পড়ে থাকা কুষ্ঠরোগীটির মুখের দিকে তুমি তাকিয়েছিলে একবার। তখন কুষ্ঠরোগীটিকে মনে হয়ে ছিলো ,
রূপসীর করতলে প'ড়ে আছে রজনীগন্ধার বৃষ্টি-ভেজা অমল পাপড়ি।
তুমি তো তাকাও সব দিকে;
শুধু তুমি আমার মুখের দিকে,
মানুষের দুরূহতম দুঃখের দিকে,
এক শতাব্দীতে
একবারো ভুলেও তাকালে না।
তরুনী সন্ত
-হুমায়ুন আজাদ
(আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে)
0 comments:
Post a Comment