Tuesday 25 February 2020

পদ্মিনী- শঙ্খ ঘোষ

ভোরের আলোয় ফুটে উঠল চোখ
পদ্মপাতা ভেসে ভেসে পুরোনো ঘাটলায় এসে দাঁড়ায়।

তোমার সৌজন্য আমি ভুলে গেছি
তোমার দুর্জনতাও।

সেইসব স্মৃতিহীনতার দিকে সরে যেতে যেতে
বিশেষণহীনতার দিকে

মুছে যেতে যেতে
কিছুই না থাকত যদি কে তবে জানাত

তুমি শুধু তুমি
তোমার দু'চোখ শুধু নয়, সমস্ত শরীর পদ্মজাত ।

এ পৃথিবী জানে- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এ পৃথিবী জানে কারো কারো বুক শূন্য
এ পৃথিবী জানে কেউ ভ্রমরের খুনি
কেউ অবেলায় বিজনে হারায়, বিষণ্ণ বালিয়াড়ি
এ পৃথিবী জানে, মানুষে মানুষে
                    আজও চেনাশুনো হয়নি।

ভেবেছি- দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

ভেবেছি, এরপর থেকে যা কিছু লিখব, তাতে তোমার কথা থাকবে না

আমি বেসিনে দাঁড়িয়ে দেখব অবিরল জল ঝরছে
লাল নীল রুমালগুলো উড়িয়ে দেব হাওয়ায়
দেয়াল ঘড়ি থেকে নির্মমভাবে ব্যাটারি খুলে নেব আমি
সূর্যের দামামা বাজাব মধ্যরাতে

তোমার তীক্ষ্ণ জটিল চাউনির কথা, শান্ত পা ফেলে
চলে যাওয়ার কথা মনে এলে
আমি নির্ভুল এক ক্রিসমাস ট্রির ছবি এঁকে রাখব দেয়ালে

যখন ঝুম বৃষ্টি নামবে
সব কটি কাঁচ নামিয়ে আমি স্টিয়রিং-এর ওপর
ঘুমিয়ে পড়ব ।

Sunday 23 February 2020

হরিণ- আবুল হাসান

‘ তুমি পর্বতের পাশে বসে আছো:
তােমাকে পর্বত থেকে আরাে যেনাে উঁচু মনে হয়,
তুমি মেঘে উড়ে যাও, তােমাকে উড়িয়ে
দ্রুত বাতাস বইতে থাকে লােকালয়ে, তুমি স্তনের কাছে কোমল হরিণ পােষাে,
সে-হরিণ একটি হৃদয়।'

লীন- কুশল ইশতিয়াক

যে জীবন চলে গেছে
দূর এক মাঘে
লাল মেঘ বাঁশরীতে
পড়ে ছিল ছায়া
রেডিওতে কলতান
সুরে সুরে বাজে
ভোরবেলা ডোবাজলে
বইছিল হাওয়া
কোন ক্ষণে এসেছিলে?
কবে চলে গেলে?
পাতাটি লেখার কথা
ছিল এক শীতে
ফিরিয়েছো মুখ কেন?
কোন অভিমানে?
বাতাসের আলাপন
পালকেরা জানে
মুগ্ধতা ঢেকে রাখি
গাঢ় হল স্মৃতি
ঝরণা কলমে কবে
লেখা এক চিঠি
স্মৃতির ভিতরে তবু
উড়ে চলে ছাই
যার পাশে শুয়েছিলে
তাকে ছোঁও নাই

প্রণয়কলঙ্কের পদ্য- আবু হাসান শাহরিয়ার

কলঙ্ক কি চাঁদের গায়েও নেই?
জোছনা তবু অনির্বচনীয়
প্রেমের মড়া বাঁচে কলঙ্কেই

আকাশ বোঝে, ব্রহ্মাণ্ডের স্বাদ
বোকার স্বর্গ মহার্ঘ হয় প্রেমে
বৃষ্টি মানে, মেঘের অনুবাদ

প্রেমের পাগল ঢেঁকিতে মন ভানে
উতলা মেঘ আষাঢ়-শ্রাবণ ভুলে
ফুল ফোটাতে এসেছে অঘ্রানে

২৯ কার্তিক, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
১৪ নভেম্বর, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ

যে গোলাপ অনন্ত সুন্দর- আবু হাসান শাহরিয়ার

একটি আশ্চর্য সকাল হাতে দাঁড়াল সুন্দর
একটি আশ্চর্য প্রান্তর চিরে তৈরি হল গোলাপ সড়ক
একটি আশ্চর্য চিবুক বেয়ে নেমে এল চুম্বনের ধারা
একটি আশ্চর্য হৃদয় খুঁড়ে লেখা হল সহস্র হৃদয়
একটি বিমর্ষ জীবন ফুঁড়ে জন্ম নিল আশ্চর্য জীবন

আমি সেই আশ্চর্যের উত্তরাধিকার। "একমাত্র" এই গাড় উচ্চারণে
কে আমাকে ডাকে? আমি তার পায়ের নূপুর। সে চলুক গোলাপপথে;

আমি তার অনুপ্রাস হব। আজীবন... আজীবন...

যতদিন বাঁচি তাকে সঙ্গ দেব; যেন তাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি।

অন্ধ জেনেও তুমি চোখ মেলে তাকিয়েছ; হৃদয়দর্শন দেব
তোমাকেই, জেনো। এই অন্ধ চিত্রকর,  জেনে রাখো, আঁকবে তোমারই ছবি;
মুখচ্ছবি গোলাপেরই। ডোবার সমগ্র থেকে সমুদ্রের খন্ড যদি

সে আর আমি- শ্রীজাত

সে আর আমি- শ্রীজাত

তার যেরকম তছনছিয়া স্বভাব
ঝড়ের পিঠে সওয়ার হয়ে আসে,

আমিও তেমন অজ পাড়াগাঁর নবাব
সন্ধেবেলা মুক্তো ছড়াই ঘাসে

তার যেরকম বিরুদ্ধতার মেজাজ
হঠাত্ করে উল্টোদিকে ছোটে

আমিও তেমন আগুনজলে ভেজা
সময় বুঝে ঠোঁট বসাব ঠোঁটে

তার যেরকম উল্টোপাল্টা খুশি
হালকা রঙের বাতাসে চুল বাঁধে

আমিও তেমন সিঁদুরে মেঘ পুষি
কেমন একটা গন্ধ ছড়ায় ছাদে ..

তার যেরকম মন খারাপের বাতিক
সন্ধে হলে ভাল্লাগে না কিছু,

আমিও তেমন জলের ধারে হাঁটি
বুঝতে পারি আকাশ কত নিচু

তার যেরকম জাপটে ধরে সোহাগ
আমায় ছাড়া চলে না একদিনও,

আমিও তেমন দু-চার লাইন দোহা
লেখার ওপর ছড়িয়ে থাকা তৃণ …..

লাজুক- শ্রীজাত

তুমি তো হেঁটে যাবে শহুরে পথে
আকাশে খসে যাবে তারা
মেঘেরা জেনে যাবে এমনও ঘটে
বৃষ্টি হবে দিশেহারা।

তুমি তো ভিজে যাবে ভেতরে, একা
ঠোঁটেরা মেপে নেবে হাসি
আমারও কাছ থেকে হরিণী দেখা
আমিও জল খেতে আসি।

তুমি তো ভেবেছিলে প্যারিসে বিকেল
বৃষ্টি হবে ক্যাফে ঘিরে...
আমার দিন সবই হয়েছে ফিকে
তুঙ্গভদ্রার তীরে।

তবুও দেখা হবে শহুরে পথে
তারার কুচি রেখো পায়ে
মেঘের বিয়ে হবে বৃষ্টিমতে
পালকি যাবে দূর গাঁয়ে

তুমিও ফিরে যেও সন্ধে হলে।
বর্ষা পায়ে পায়ে বাজুক...
ডেকেছ অসময়ে 'ফাগুন' বলে,
তোমাকে নাম দেব লাজুক।

যার জন্য জেগে থাকা, সে ঘুমায় চন্দনের খাটে

কেন তারই জন্যে আজো রাত্রি জাগে কবিতার খাতা,
যার জন্য জেগে থাকা, সে ঘুমায় চন্দনের খাটে
হাজার পেত্নীকে নিয়ে
আমি থাকি আঘাটার ঘাটে

Saturday 22 February 2020

আদ্যোপান্ত- আবু হাসান শাহরিয়ার

তুমি আমার বহুলপাঠে মুখস্থ এক কাব্যগ্রন্থ-
তোমার প্রতি পঙক্তি আমি পাঠ করেছি মগ্ন হয়ে।
বই কখনো ধার দিতে নেই, জেনেও আমি দিয়েছিলাম-
খুইয়েছি তাই।
ছিঁচকে পাঠক হলেও তোমার গ্রন্থস্বত্ব এখন তারই।
বইচোরা কি কাব্যরসিক ? ছন্দ জানে ?
বই অনেকের বাতিক, ঘরে সাজিয়ে রাখে-
নাকি তেমন হদ্দ নবিশ ?
চোরের ঘরে ধুলোয় মলিন বুকশেলফে কেমন আছো ?
চোর কি জানে, চোর কি জানত,
আমি তোমায় মুখস্থ পাই আদ্যোপান্ত ?

চাষাবাদ- আবু হাসান শাহরিয়ার

নেড়ে দেখলাম, ছেনে দেখলাম,
অসুখ অনাবাদের-
শুশ্রূষা তার আদর।
সংকোচের শীত তাড়াতে
আলিঙ্গনের চাদর
পরিয়ে দিলাম গায়ে।
তোমার পায়ে-পায়ে
শঙ্কা এবং দ্বিধায় ঘোরাফেরা।
একজীবনে এতটা চুলচেরা
হিসেব করা ভালো ?
চুম্বনের জলে তোমায় সিক্ত করি, এসো,
দশ আঙুলে লাঙল দেব বুকে,
আসঙ্গম শরীরময় শৃঙ্গারের বীজ
ছড়িয়ে দেব ঝুঁকে।
কী লাভ বলো ব্রাত্য পড়ে থেকে ?
বাসের যোগ্য যে-জন, তাকে ভিটেয় রাখো তুলে।
এই ভূমিহীন চাষাকে দাও বর্গা চাষের মাটি-
ক্লান্তিহীন প্রেমে ফলাই সুখের খুঁটিনাটি।

তুলাদন্ড- আবু হাসান শাহরিয়ার

তোমার চোখের চেয়ে বেশি নীল অন্য কোনও আকাশ ছিল না
যেখানে উড়াল দিতে পারি
তোমার স্পর্শের চেয়ে সুগভীর অন্য কোনও সমুদ্র ছিল না
যেখানে তলিয়ে যেতে পারি
তোমাকে দ্যাখার চেয়ে নির্নিমেষ অন্য কোনও দ্রষ্টব্য ছিল না
যেখানে নিমগ্ন হতে পারি
তোমাকে খোঁজার চেয়ে বেশি দূর অন্য কোনও গন্তব্য ছিল না
যেখানে হারিয়ে যেতে পারি।
কেবল তোমার চেয়ে বেশি দীর্ঘ তুমিহীন একাকী জীবন।

বোবাকথা- আবু হাসান শাহরিয়ার

কী কথা শুনতে তুমি অবেলায় এখানে এসেছ?
সে-কথা আমার কাছে আছে?

বলার কথারা নেই; আমার শোনার দিন আজ
তুমি বলো; আমি কান পাতি

তোমারও বলার মতো কথা যদি না থাকে সঞ্চয়ে
এসো, দুজনেই থাকি চুপ

কথাই না থাকে যদি চুপ থাকা অতিবাঞ্ছনীয়
সব বৃক্ষ এই কথা জানে

গাছের অনেক কথা জমা থাকে পাতার সবুজে
সেখানেই পৃথিবীর প্রাণ

তোমাকে বলার আছে, এমন কথারা সব বোবা
চোখে চোখ রেখে জেনে নিয়ো

২৪ মাঘ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ

দোনামনা- আবু হাসান শাহরিয়ার

তোমাকে লিখি তোমাকে লিখি করে
কিছুটা লিখে পুরোটা ছুড়ে ফেলি
তোমাকে ছাড়ি তোমাকে ছাড়ি করে
কিছুটা ছেড়ে পুরোটা ধরে রাখি

লিখি না লিখি, ছাড়ি না ছাড়ি শুধু
দোটানা ধু ধু টানাপোড়েনে থাকা
আমি এমনি ছন্নছাড়া। বলো
তুমি এভাবে থেকেছ কোনদিন?

থাকোনি, আমি সে কথা জানি তাই
কিছুটা দেখে, পুরোটা রেখে আসি
মহুয়া জানে, ফিকিরবাজি এটা
তুমি কী জানো, তুমি কী জানো, শুনি?

Friday 21 February 2020

Tonight

"Tonight I can write the saddest lines: I loved her, and sometimes she loved me too."

📺 Black Mirror: White Christmas (S2/E4)

Thursday 20 February 2020

নূরুল হক

যে তিনটি কথা আমি
বলে গেছি
গোপনে তোমাকে
জীবনের দাগ ধরে
পথের ধুলোয়
তাই তুমি রুয়ে দিয়ো নানাঘাটে।

যদি কোনদিন এরা বৃক্ষ হয়,
পাতায় পাতায়
জল থাকবে,  চোখ থাকবে
আর থাকবে তোমার হৃদয়।

এখন আমার- আবুল হাসান

আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
…রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে কি লাগে, কষ্ট লাগে
তুমি আমার জামার বোতাম অমন কেনো যত্ন করে
লাগিয়ে দিতে?
অমন কেন শরীর থেকে আস্তে আমার
ক্লান্তিগুলি উঠিয়ে নিতে?
তোমার বুকের নিশীথ কুসুম আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতোন তুমি উড়িয়ে দিতে?
বেলজিয়ামের আয়নাখানি কেন তুমি ঘরে না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে
রেখে দিতে?
আমার এখন চাঁদ দেখলে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম, মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে
কথাবর্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা. . .
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর, আমি অনেক কষ্টে আছি.. কষ্টে আছি বুঝলে যুথী
আমার দাঁতে, আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষন
চতুর দিকে দাবি আদায় করার মত মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ বুঝলে যুথী
হাসি খুসি উড়নচণ্ডি মানুষ এখন তাইতো এখন খারাপ লাগে, খারাপ লাগে
আরে তাছাড়া, আমি কি আরে যীশু নাকি- হাবিজাবী ওদের মতন সবসহিষ্ণু
আমি অনেক কষ্টে আছি
কষ্টে আছি, কষ্টে আছি
আমি অনেক কষ্টে আছি
কষ্টে আছি, কষ্টে আছি।

বিচ্ছেদ- আবুল হাসান

আগুনে লাফিয়ে পড়ো, বিষ খাও, মরো
না হলে নিজের কাছে ভুলে যাও
এত কষ্ট সহ্য করো না।

সে তোমার কতদূর? কী এমন? কে?

নিজের কষ্টকে আর কষ্ট দিও না,

আগুনে লাফিয়ে পড়ো, বিষ খাও, মরো,
না হলে নিজের কাছে নত হও, নষ্ট হয়ো না!

শেষ মনোহর- আবুল হাসান

সে আমার পাশে শুয়েছিল, বাশির মতোন বিবসনা !
তাকে আমি দেখেছিলুম কাঁদতে গুণীর হাতের বেহালার মতো

আর মাত্র কিছুক্ষণ : এর মধ্যে নক্ষত্র ফুরোবে :
এর মধ্যে শেষ হবে আমাদের আলিঙ্গন আমাদের অনিদ্র চুম্বন !

পাতলা ঝাউয়ের মতো কেঁপে উঠলো কন্ঠ তার
কেন তুমি এইভাবে, এরকম দিলে ?

সন্তের শূন্যতা নিয়ে পাশ ফিরে শুই- একা শুই !

সে আমাকে হঠাৎ উন্নত স্বরে বলে ওঠে ''অহিংস ঘাতক !''

বটেই তো, না হলে কি আমি আজ তার মতো কাঁদি ?

Wednesday 19 February 2020

পরাজিত পদাবলী - আবুল হাসান

আমার বাহু বকুল ভেবে গ্রীবায় পরেছিলে
মনে কি পড়ে প্রশ্নহীন রাতের অভিসার ?
অন্ধকারে আড়াল পেয়ে ওষ্ঠে তুলে নিলে
হঠাৎ গাঢ় চুম্বনের তীব্র দহনগুলি ?

মনে কি পড়ে বলেছিলে এ পােড়া দেশে যদি
বিরহ ছাড়া কিছুতে নেই ভালােবাসার বােধি---
রাজ্য জুড়ে রাজার মতাে কে আর থাকে কার
রাতের পথে সহজ হবে দিনের অভিসার ?

হৃদয় আজ কুপিয়ে দেই বিচ্ছেদের চারায়
দোলাই তাতে মন চেতনা মনস্তাপের ফুল !
তােমার ইন্দ্রিয়ে তার সৌরভেরা হারায়
যখােন তুমি বাঁধতে বসাে তােমার এলােচুল ?

তােমার কাছে গিয়েছিলাম রাতে নদীর ঢেউ
তােমায় আমি পরিয়েছিলাম অঙ্গুরীয় মেয়ে

ভুল বোঝা সে মানুষ তাকে বােঝেনি আর কেউ
তুমি যেমন তােমার মতাে বুঝতে চেয়েছিলে !

প্রিয়তমাসু -তারাপদ রায়

অনেকদিন পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে
প্রথম একটা চাঁদের ছবি আঁকি, সঙ্গে কিছু মেঘ।
তারপর যথেষ্ট হয়নি ভেবে গোটা তিনেক পাখি,
ক্রমশ একটা দেবদারু ও কয়েকটা কলাগাছ,
অবশেষে অনেকগুলি ছানাসহ একটা বেড়াল,
এইসব এঁকে এঁকে তবুও
কাগজের নীচে চার আঙুল জায়গা বাকি থাকে :
সেখানে প্রথমে লিখি, শ্রীচরণেষু
তার নীচে সবিনয় নিবেদন।
এবং কিছুক্ষণ পরে
সবিনয় নিবেদন কেটে লিখি প্রিয়তমাসু।
এবং একটু পরেই বুঝতে পারি
জীবনে এই প্রথম, প্রথমবার প্রিয়তমাসু লিখলাম।
প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনদিন ঠিকমতো সম্বোধন করা হলো না।

প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনোদিন ঠিকমতো ভালোবাসা হলো না।
শুধু হিজিবিজি ছবি, চাঁদ, মেঘ,
সবিনয় নিবেদন কাটাকুটি করে চিরদিন তোমার কাছে পৌঁছোনো।

Monday 17 February 2020

বালিকা আশ্রম ৬- আবু হাসান শাহরিয়ার

বুকের উনপঞ্চাশ পৃষ্ঠা খোলো :
এটা একটা বিষাদের নদী; অভিমানের পাহাড়ে তার বাড়ি

চোখের এক শ বত্রিশ পৃষ্ঠায় যাও :
এটা একটা সাইকেলের গল্প; বালকের পঙ্খীরাজ ঘোড়া

থুতনির বিরানব্বই পৃষ্ঠা ওল্টাও :
এটা একটা বর্ষার কবিতা; প্রথম চুম্বনের জলরঙে আঁকা

চুলের এক শ উনসত্তর পৃষ্ঠায় থামো :
এটা একটা রাত্রির গীতিকা; এখানেই চন্দ্রাবতী ফোটে

চলো তবে পরিশিষ্টে যাই :
এটা একটা কীটদষ্ট অধ্যায়; তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না

Saturday 15 February 2020

প্রিয়জনের ছবি জমিয়ে কী হয়

প্রিয়জনের ছবি জমিয়ে কী হয়!
এমন তো নয় প্রয়োজন শুধু একটা মুখের আদল।
আসলে তো মানুষ ভালবাসে কন্ঠস্বর, মুখের অভিব্যক্তি, দৃষ্টিতে কাব্য আর সমস্ত শরীর দিয়ে গল্প বলা...

Wednesday 12 February 2020

বিনয় মজুমদার

এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি
মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালোবেসে ফেলি!
গ্রহনে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচূড়া থেকে
পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না, উড়ে যাবে।
প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চ'লে যাবে, ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হবো আমি।

-বিনয় মজুমদার।