Friday 25 December 2020
Saturday 7 November 2020
নিবেদিতা - ওবাইদুল হক
আমার আকাশে দেখি চাঁদ নেই,
আছো তুমি।
আমার বুকে দেখি হৃদয় নেই,
আছো তুমি।
আমার চক্ষুর অন্তর্লীনে মনি নেই,
আছো তুমি।
আমার দেহের সবটাজুড়ে অস্তিত্ব নেই,
আছো তুমি।
আমার গানের শব্দজুড়ে স্বর নেই,
আছো তুমি।
প্রকৃতির অস্থিমজ্জায় সৌন্দর্য নাই,
আছো তুমি।
ঘাসের চোখে শিশির নেই,
আছো তুমি।
জগতের সবটাজুড়ে ছেয়ে আছো তুমি,
অথচ তুমি আমার না।
কবে হবে আমার তুমি নিবেদিতা?
Friday 6 November 2020
জন্মদিন- শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়
সুদূর বিদেশে থাকে, এমনি বন্ধুর মতো চেনা হাসিমুখে
সময়ের ট্রেন থেকে নেমে আসে কার্তিকের একটি সকাল --
বাঁশের নির্জন সাঁকো পার হয়ে এদিক ওদিক
চেয়ে দেখে, তারপর
রৌদ্র-ছায়া-নকশাকাটা উঠোনে দাঁড়িয়ে সে আমার
কুশল জিজ্ঞাসা করে ।
তাকে দেখে বারান্দায় পাখি নাচে, কাঠের পুতুল
হাতে নিয়ে শৈশবের স্মৃতিগুলি দরোজায় ভিড় করে আসে :
আমার মায়ের চোখ মনে পড়ে, আমার দিদিমা
'সুখে থাকো'- লেখা এক প্রাচীন আসনে
আমাকে বসিয়ে যেন এখনি পাশের ঘরে গেছে,
রুপোর রেকাবি ভরে মিষ্টি, ফল, নিয়ে ফিরে এলে
অনুষ্ঠান শুরু হবে শাঁখের ধ্বনিতে,
হাওয়া থেকে হাতের আড়ালে রেখে পিলসুজে ঘৃতের প্রদীপ
কোমল বুকের স্নেহ আমাকে বলবে তুমি দীর্ঘজীবী হও --
এই সব রূপকথা খুব ভাবি জন্মদিন এলে ৷
আমি সুখে আছি কিনা দীর্ঘজীবী হবো কিনা, সে সব কথার
অনেক দূরত্বে আজ বাস করি জীবনের কঠিন মাটিতে :
ঝ'ড়ো হাওয়া একা পথে নদীর স্রোতের
বিপরীতে যেতে হয়,
অবিরাম দুঃখ থেকে আমাকে বাঁচাতে আর কোন
হাতের আড়াল নেই !
তবু কেন কুশল সংবাদ নিতে জন্মদিন আসে ?
Saturday 31 October 2020
অনুবাদ শায়েরী ১৯
হোক না এমন, আঘাত করে পাথরও পাবে ব্যথা,
প্রতিবারই আয়না কাঁদবে সেও বা কেমন কথা!
Friday 30 October 2020
অনুবাদ শায়েরী ১৮
সে যেন এক আপাদমস্তক গোলাপ বাগিচা,
ওযু নিয়েও যাকে ছুঁতে দ্বিধা কাটে না।
-বশীর বদর
অনুবাদ শায়েরী ১৭
হৃদয়ও মুশকিল বড়,
তার সাথেই বাঁধা পড়ে থাকে,
যে অন্য কারও হতেও দেয়না,
আর না তো নিজের করে রাখে।
-আহমেদ ফারাজ
Thursday 15 October 2020
প্রিয় উক্তি
এসো, আমার মধ্যে একটু ডুব দাও।
যদি নিঃশ্বাস নিতে পারো, তাহলে ধরে নিবে আমি তোমাকে ভালবাসি।
আর যদি তোমার দম বন্ধ হয়ে আসে, তাহলে জেনে রেখ; আমার ভালবাসা সহ্য করার ক্ষমতা তোমার নেই।
-Rakim Rayes
Tuesday 13 October 2020
পরাজিত পদাবলী- আবুল হাসান
আমার বাহু বকুল ভেবে গ্রীবায় পরেছিলে
মনে কি পড়ে প্রশ্নহীন রাতের অভিসার?
অন্ধকারে আড়াল পেয়ে ওষ্ঠে তুলে নিলে
হঠাৎ গাঢ় চুম্বনের তীব্র দহনগুলি?
মনে কি পড়ে বলেছিলে এ পোড়া দেশে যদি
বিরহ ছাড়া কিচ্ছুতে নেই ভালোবাসার বোধি-
রাজ্য জুড়ে রাজার মতো কে আর থাকে কার
রাতের পথে সহজ হবে দিনের অভিসার?
হৃদয় আজ কুপিয়ে দেই বিচ্ছেদের চারায়
দোলাই তাতে মন চেতনা মনস্তাপের ফুল!
তোমার ইন্দ্রিয়ে তার সৌরভেরা হারায়
যখোন তুমি বাঁধতে বসো তোমার এলোচুল?
তোমার কাছে গিয়েছিলাম রাতে নদীর ঢেউ
তোমায় আমি পরিয়েছিলাম অঙ্গুরীয় মেয়ে
ভুল বুঝা সে মানুষ তাকে বোঝেনি আর কেউ
তুমি যেমন তোমার মতো বুঝতে চেয়েছিলে।
তার ইচ্ছায়- সিকদার আমিনুল হক
ঘুমিয়ে কাটলাে বেলা : যেই শুরু হলাে ফের রাত্রি
দেখি দূরে পর্বত আবার!
ক্রমশ বড়ােই হচ্ছে, যত নিচ্ছি চামড়ার গন্ধ...
উপচে পড়ে আমার খাবার।
সকল দিকেই আলাে। এত ফরসা। সাত দিকে শাদা... তাই তাে আদর করি চুল;
কিছু ত্রুটি ভালাে লাগে। স্বাস্থ্য, আয়ু কত দিন আর
চেটে খাবাে অবেলার ভুল!
স্মৃতির সম্বল জল, বাষ্প হয়ে ওড়ে না আকাশে
থাকে শুধু লেহনের তৃষ্ণা;
হে নগ্ন, এখানে আয়। সিল্কগুলি পরাবাে সকালে অকারণ যাতনা দিস না!
ভ্রষ্টপ্রেম- প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত
সে এসে দাঁড়ায় বুঝি আকাশের মতো,
তবু স্থির, আলোয় আনত
শরীরে কোথাও আমি চামেলি কি জুঁই
রাখি না কিছুই;
সে যদি হাওয়ায় সরে, জলে ভেসে যায়,
দাবানলে পোড়ে-
তার মৃতদেহে, নাকি স্মৃতির শরীর
ভীরুহাতে, চুপিচুপি ছুঁই।
Thursday 8 October 2020
বাউল- শঙ্খ ঘোষ
বলেছিলাম, তােমায় নিয়ে যাব অন্য দূরের দেশে
সেই কথাটা ভাবি,
জীবনের ওই সাতটা মায়া দুরে দুরে দৌড়ে বেড়ায়
সেই কথাটা ভাবি।
তাকিয়ে থাকে পৃথিবীটা, তােমার কাছে হার মেনে সে বাঁচবে কেমন ক'রে।
যেখানে যাও অতৃপ্তি আর তৃপ্তি দুটো জোড়ায়
জোড়ায় সদরে-অন্দরে।
উদাসিনী নও কিছুতে-বুঝতে পারি তােমার বুকে
অন্য কিছু আছে,
যন্ত্রণা তার পাকে পাকে হৃদয় খােলে, সে-খােলাটার অন্য মানে আছে।
ঘুমের মধ্যে দেখি আলাের ভরা-কুসুম নীলাংশুকে বাঁধতে পারে না, এ :
উঠেই দেখি কী বিচিত্র, একটি আঁচড় লাগেনি তার ভালােবাসার গায়ে।
বলেছিলাম তােমায় আমি ছড়িয়ে দেব দুর হাওয়াতে সেই কথাটা ভাবি।
তােমার বুকের অন্ধকারে সুখ বেজেছে মদির হাতে
সেই কথাটা ভাবি।
দুঃখ- অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
তবু কি আমার কথা বুঝেছিলে, বেনেবউ পাখি?
যদি বুঝতে পারতে
নারী হতে।
আমাকে বুঝতে পারা এতই সহজ?
কারুকেই বোঝা যায় নাকি!
শুধু বহে যায় বেলা, ঈশ্বর নিখোঁজ ;
কিংবা বুঝি এ-দুঃখ পোশাকি,
না-হলে কী করে আজও বেঁচে আছি রোজ,
বেনেবউ পাখি!
পান্থ- অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
মাঝে-মাঝে স্পষ্ট করে বলা দরকার
ঈশ্বর আছেন,
মগডালে-বসে-থাকা পাপিয়াকে আর
পর্যবসিত বস্তুপৃথিবীকে স্নান করাচ্ছেন।
মাঝে মাঝে স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন
তুমি যে আমার
সাধনার ধন,
তুমি চলে গেছ বলে আমাকে গাহন করাবার
কেউ নেই, যত্রতত্র সেরে নিই মধ্যাহ্নভোজন।।
তোমার যে হাতে- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
তুমি যে হাতে স্বপ্ন সাজিয়ে গড়ো আপন পৃথিবী
আমার সে হাত নেই,
প্রতিবার তাই নত হয়ে আসি তোমার চোখের কাছে ।
ওই চোখ জানে কতোটা প্লাবনে ভেসেছে জীবন
কতোটা খরার খরতায় বুকে জ্বলেছে সবুজ মাটি,
নিশিদিন জুড়ে জেগে থাকা সেই ধ্বংসের স্মৃতি
নত হয়ে আসি তাতে ।
যে হাতে জড়ানো অমেয় সাহসে গড়েছো শব্দহীনতা
আমার সে হাতে সে সাহস আজো নেই
প্রতিবার তাই নত হয়ে আসি তোমার পৃথিবী ছুঁয়ে ।
ফেরার সময় হয়ে গেছে বোলে সাজিয়েছি পাখা
জানি, পথ টেনে নিয়ে যাবে দুজনায় দুই প্রান্তে
কোনোদিন আর স্মৃতির সম্মুকে বিশ্বাস বেঁধে হবে না আসা
ভুলে যাওয়া সত্যি হবে অন্য প্রয়োজনে ।
যদি শেষ বাঁশি বেজে থাকে বুকে
তবে একটি মুহূর্ত শুধু বিস্মৃতিবিহীন
একটি না বলা কথা এসে পোড়াক হৃদয়
নীল অনন্ত আগুনে ।
নির্দিষ্ট ব্যবধান- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান শুধু একটি রাত
সুনির্দিষ্ট একটি দিন,
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান শুধু একটি ঘর
অলৌকিক এক শূন্যতা ।
তোমার থেকে আমার বুকের
ব্যবধান এক করুন চাঁদ
আগুন ঘষা আকাশটা,
তোমার থেকে আমার চোখের
ব্যবধান এক রম্য কাঁচ
কালো ফ্রেমের ব্যর্থতা ।
তোমার থেকে আমার পথের
ব্যবধান এই বাতাসটুকু
ঘৃন্যতম নিসর্গ,
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান ঐ নীল হাসি
বিষন্নতার দুইটি ঠোঁট ।
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান শুধু তুমি আমি,
অমীমাংসিত তিনটি হাত ।
Sunday 20 September 2020
অভিশাপ- শৈলেন হাজরা
অপমান আর অবহেলায় অনুভূতি মরেছে,
পৃথক হয়ে শিখেছি বাঁচতে শেখা-
নতুন ঘরে দক্ষ আমরা মানিয়ে নিতে,
মিল ছিলনা আমাদের ভাগ্যরেখায়।
একদিকে পড়ে শরীর। অন্যদিকে মন,
অন্তরেতে বাস অন্য এক পড়শীর-
ভালোবাসা অপরাধ। অভিশাপ ছিল আমাদের,
সবশেষে তাই রাতের ঘরে গুমরে মরছি।
তুমি এখন প্রহর গুনছ ফেরত পাওয়া ব্যস্ত দিনের,
সমান্তরাল পথ। প্রাক্তন আজ'ও আছে সুখে-
নিয়ম করে ফুল ফোটেনো আর সদ্য কুঁড়ির,
মৃত্যু আসার ঠিক আগে জড়িয়ে নিও নিথর বুকে।
Friday 18 September 2020
প্রেমের ক্ষমা - আবুল মকসুদ
যেমন চাঁদের জন্য চাই একটি আকাশ
তেম্নি হৃদয়ের জন্য নিঃসীম ভালবাসা,
ফসলের জন্য বন্ধ্যামাটিতে প্রয়োজন
শিল্পীর মতো তিতীষ্ণু এক চাষা;
সখী, চাঁদ যদি রাখো হাঁড়ির ভিতরে বন্দী
কেউ কি জানবে কত সীমাহীন তার প্রতিভা,
এ হৃদয় যদি কারো নাহি বাসে ভালো
তুমি বলো : আহা কার কি তাতে ক্ষতি বা!
ভীষণ যে ক্ষতি বুঝবে না তুমি কোনোদিন,
বক্ষ তোমার বন্ধ্যামাটি কালো উপমা,
ভালোবাসা ছাড়া হৃদয় যে শুধু অর্থহীন
সেটাই বুঝতে তোমাকে করেছি প্রেমের ক্ষমা।
ভালবাসা যাযাবর- তরুণ চট্টোপাধ্যায়
ভালবাসা মানে এমন তো নয়, শুধু প্রেম প্রেম খেলা,
ভালবাসা মানে বাসনা-কুসুম একে একে ছিঁড়ে ফেলা।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু দাঁত দিয়ে মাড়ি কাটা,
ভালবাসা মানে কাঁটার ওপরে রক্তাভ হয়ে হাঁটা।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু রঙে রঙে হোলি খেলা,
ভালবাসা মানে স্বপ্ন অভ্রে হৃদয় রাঙিয়ে তোলা।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু প্রেমহীন মৈথুন,
ভালবাসা মানে লুকানো কবিতা মনে সেতারের ধুন।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু জ্যোৎস্নায় গান গাওয়া।
ভালবাসা মানে ফুলের মতন নিঃশেষে ঝরে যাওয়া।
ভালবাসা মানে এই নয় শুধু হাতে হাতখানি রাখা।
ভালবাসা মানে হৃদয় বেদনা মনের গভীরে ঢাকা।
ভালবাসা মানে শুধুই দুজন? বাকি আর সব পর?
ভালবাসা মানে সবাই আপন তুমি আমি যাযাবর।
টিয়া- বিকাশ গায়েন
যাকে ছেড়ে গিয়েছিলে তাচ্ছিল্য মাখিয়ে
সে কবেই ঠাঁই পেয়ে গেছে অন্যমনে।
তোমাকে না ভোলা তার চিরস্থায়ী হয়ে থাক
আজও তুমি ভেবে যাও অশ্রুর বিজনে।
ছেড়ে ছিলে যদি তবে কেন এত দ্বিধা ভুলে যেতে?
বিমুখ করার ছলে আসলে তুমিও তাকে
চেয়েছিলে পেতে।
সকলেই ভারে কাটে, কজনই বা ধারে!
নিরাপত্তা সুনিশ্চিত,
এইবার ঝুঁকি নিয়ে দেখা যেতে পারে?
শেষ কথা বলেছিলে, আরও কিছু ছিল তবে বাকি!
আকাশ পরিধি জুড়ে উড়ছে স্মৃতির টিয়াপাখি।
একটি কথার মৃত্যুবার্ষিকীতে- অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
তুমি যে বলেছিলে গোধূলি হলে
সহজ হবে তুমি আমার মতো,
নৌকো হবে সব পথের কাঁটা,
কীর্তিনাশা পথে নমিতা নদী!
গোধূলি হলো।
তুমি যে বলেছিলে রাত্রি হলে
মুখোশ খুলে দেবে বিভোর বিভা,
অহংকার ভুলে অরুন্ধতী
বশিষ্ঠের কোলে মূর্ছা যাবে!
রাত্রি হল।
তুমি জানলে না- প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়
যে-কোনও ছুতোয় আমি একদিন অভিমান করে
সব কিছু ছেড়ে চলে যাব,
তোমার ঘুমন্ত মুঠি তাই কি এভাবে ধরে রাখে
বসনের খুঁট? তুমি ভাবো,
দিগন্তের অন্ধকার হঠাৎ বন্ধুর মতো যদি অবিকল নাম ধরে
কোনওদিন ডাকে,
তুমি ফেরাবে আমাকে।
নিশি-পাওয়া মানুষেরা কত দূরে যায়? যেতে পারে?
আমি তারও চেয়ে বহু দূর
যোজন-যোজন পথ পার হয়ে যাই। রুক্ষ, অচেনা, কঠিন,
প্রতি রাত্রে অদ্ভুত বন্ধুর
দিগন্তের কাছাকাছি, দিগন্ত ছাড়িয়ে, শূন্য নির্জন আঁধারে
নিরালম্ব, আশ্রয়বিহীন।
তুমি জানলে না, কোনওদিন।
Thursday 17 September 2020
অনুবাদ শায়েরী ১৬
কে বলে কাফন শুধু সাদা রঙের দেখতে?
আমি তো এক লাল বেনারসিতে
আমার জানাজা দেখেছিলাম।
- আল্লামা ইকবাল
অনুবাদ শায়েরী ১৫
একটু একটু করে তাকে ভুলেছি আমি,
কিস্তিতে আত্মহত্যার স্বাদ আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারো ।
- খুমার বারাবানকাভি
Sunday 13 September 2020
বসন্ত নয় অবহেলা- দর্পন কবির
বসন্ত নয় আমার দরজায় প্রথম কড়া নেড়েছিল অবহেলা।
ভেবেছিলাম অনেকগুলো বর্ষা শেষে শরতের উষ্ণতা মিশিয়ে এলো বুঝি বসন্ত!
দরজা খুলে দেখি আমাকে ভালোবেসে এসেছে অবহেলা।
মধ্য দুপুরে তীর্যক রোদের মত অনেকটা নির্লজ্জের মত আমাকে আলিঙ্গন করে নিয়েছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত অবহেলা।
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখেছিলাম আমার দীন দশায় কারো করুণা বা আর্তিব পেখম ছড়িয়ে আছে কী না!
ছিলো না।
বৃষ্টিহীন জনপদে খড়খড়ে রোদ যেমন দস্যুর মত অদমনীয়
তেমনি অবহেলাও আমাকে আগলে রেখেছিল নির্মোহ নিঃসঙ্কোচিত।
আমি অবহেলাকে পিছনে ফেলে একবার ভো-দৌড় দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম।
তখন দেখি আমার সামনে কলহাস্যে দাঁড়িয়েছে উপেক্ষা।
উপেক্ষার সঙ্গেও একবার কানামাছি খেলে এগিয়ে গিয়েছিলাম তোমাদের কোলাহল মুখর আনন্দ সভায়।
কী মিলেছিলো?
ঠোঁট উলটানো ভৎসনা আর অভিশপ্ত অনূঢ়ার মত একতাল অবঙ্গা।
তাও শয়ে গিয়েছিলাম একটা সময়।
হ্যাঁ একবার তুমি বা তোমরা যেন দয়া করে বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলে আমার দিকে।
তাচ্ছিল্য নয় একটু মায়াই যেন ছিল,
হতে পারে কাঁপা আবেগ ও মিশ্রিত ছিল তোমার দৃষ্টিতে।
ওইটুকুই আমার যা পাওয়া।
আমি ঝরে যাওয়া পাতা,
তুমি ছিলে আকষ্মিক দমকা হাওয়া।
তারপর ও অবহেলার চাদর ছাড়িয়ে উপেক্ষার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে ও অবহেলার লাল দাগ মুছে জীবনের কোনো সীমারেখা ভাঙ্গতে পারিনি আমি।
একথা জানে শুধু অন্তর্যামী...
Sunday 6 September 2020
সে তোমাকে পাবে না- মইনুল আহসান সাবের
তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে কেন তুমি ভেসে যাও
কে তোমায় বাজায় তখন,
কার কন্ঠে গান গায় একান্তের স্মৃতি,
কোন সে হাত এসে সিঁথি কাটে তোমার চুলে,
তোমাকে শয্যা থেকে তুলে নেয়,
তোমাকে তোমার শরীর থেকে তুলে নেয়,
কোন সে পুরুষ?
তোমার পুরুষ সে তো জানেনা, বোঝেনা, মাঝ রাতে বৃষ্টির অর্থ,
জানেনা নির্জন করিডোরে নতজানু এক নিঃসঙ্গ যুবক,
তোমাকে মাঝরাতে বৃষ্টির কথা বলেছিল,
তোমার চমকিত চোখে বরিষন দেখেছে সে,
বলেছিল- তোমার নিজস্ব পুরুষ; সে তো জানেনা,
নিজস্ব ছাড়িয়ে আরো কিছু থাকে।
আগুনে পোড়াব- কৃষ্ণা বসু
আগুনে পোড়াব তোর স্মৃতি , জলে ভাসাবো না ,
আগুনে সমস্ত খায় ,
স্মৃতি খায় , সর্বস্বতা খায় , জৈব চুম্বকের মতো
যেই শরীরের কাতরতা , তা -ও খায়
আগুন সমস্ত খেয়ে ছাই ফেলে রাখে !
ছাইয়ের নিজস্ব কোনো অবয়ব নেই
উদলা হওয়ায় হু হু ছাই উড়ে যায়
হৃদয় শ্মশান হোক ! সব স্মৃতি পুড়ে যাক তোর
শ্মশান হৃদয় নিয়ে একা জেগে থাকি ,
নদী তীরে নিরালায় পবিত্র একাকী !
জলে ভাসাবো না তোর স্মৃতি
জলের অপর নাম জীবন ,জেনেছি !
জলের সারল্যে ফের জেগে উঠতে পারে
তোর স্বয়ংভরা স্মৃতি
তাই জলে ভাসাবো না ,---
আগুনে পোড়াবো তোর স্মৃতি !
পাখি- বিজয়া মুখোপাধ্যায়
যে পাখি বুকের ভেতরে থাকে, তার
কোনও-না-কোনও ডানায় কেন বারবার
আঘাত লাগাও? তাকে শুশ্রূষা করোনি কখনও
মন দিয়ে?
আজ তার আহত ডানায় বুলিয়ে দাও হাত
সাফ করে দাও ওর ধুলোবালি, সংক্রমণ
কাছে থাকো, ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখো ওর বুকের ধুকপুক।
ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলো ওকে
তার পর ছেড়ে দাও আকাশে
না-ফেরার স্বাধীনতা দাও
সালিম আলি অন্ধকার থেকে তোমাকে স্নেহ জানাবেন।
তার পর
অর্ধজন্ম তুমি কাটিয়ে দাও পাখিহীন
কষ্ট নাও বুকে
তোমার নতুন জন্ম হোক।
পাতা ঝরে গেলে- কালীকৃষ্ণ গুহ
পাতা ঝরে গেলে
তবু তুমি ছায়ার ভিতর দাঁড়িয়ে থাকো
রুগ্ন পবিত্রতা।
পাতা ঝরে গেলে
বুকের ভিতর কান্না তুমি গোপন করে রাখো
ছিন্ন করো কথা?
পাতা ঝরে গেলে
কুয়াশা তোমার জীবনের নীচে নেমে যায়, তবু ঢাকো
মুখ। সে কি সবই পাতার বিষণ্ণতা?
৫.৭.৬৬
Monday 31 August 2020
আমি তোমায় গোলাপ দেব-মাইনুল এইচ সিরাজী
টবটা রাঙিয়েছি সবুজ রঙে। সবুজ টবে কী ফুল ফোটাব? কেন, লাল? তাহলে গোলাপই হোক। গোলাপ ছাড়া কোন ফুলে আর মানাবে তোমায়? লাল ছাড়া কোন রঙে আর রাঙাব তোমায়? সুতরাং তোমার জন্য গোলাপ। সবুজ টবে লাগিয়েছি। আমার জানালার পাশের বারান্দায়। প্রতি সকালে টবটা আমি সরিয়ে দিই আলোর দিকে। প্রতি বিকেলে জল ঢালি আমি গোলাপ চারায়। আর সারা দিনমান, দুপুর কিংবা সন্ধ্যাগুলোয় অথবা রাতবিরাতে আমার বুকের গভীরে গজিয়ে ওঠা আরেকটি গোলাপের গাছের যত্ন নিই আমি। অতি আদরে। ভালোবাসায়। গোলাপের কাঁটায় আমার হৃৎপিণ্ডে রক্তক্ষরণ হয়। ডালপালা ছড়িয়ে যায় আমার সারাটা অস্তিত্বে। এই আমি হয়ে যেতে থাকি আস্ত একটা গোলাপগাছ। তোমার জন্য। আমার সবুজ টবের গাছটাও বাড়তে থাকে। ডালপালা ছড়ায়। চলে ফুল ফোটানোর আয়োজন। তোমার জন্য।আমার অপেক্ষার প্রহরগুলো ছড়িয়ে পড়ে জলে-হাওয়ায়, কখনো বা ডালপালা আর পাতায় পাতায়। তোমার সাড়া পাওয়ার অপেক্ষা অথবা অপেক্ষা গোলাপ ফোটার। কিংবা দুটোরই।তুমি আসবে বলেছিলে। না, বলোনি। তোমার ভেজা চোখে, নোয়ানো পাপড়িতে, তোমার কম্পমান ঠোঁটে প্রশ্রয়ের মায়া দেখেছিলাম আমি। তাই তো বুনেছি সবুজ টবে গোলাপের চারা।আসবে তুমি। কোনো মিথ্যে নেই। সবুজ শাড়িতে গোলাপি মুখাবয়ব ফুটে উঠবে তোমার। তোমাকে নিয়ে যাব বারান্দায়। হাত ধরে। যেখানে আমার গোলাপ অপেক্ষায় আছে। ফোটার জন্য। তোমার জন্য। তোমাকে নিয়ে রাখব বুকের মাঝে। যেখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বহুদিন। তোমাকে দেখার পর থেকে। চুড়িতে-নূপুরে টুংটাং শব্দ তুলে আসবে তুমি। সেই শব্দে পাপড়ি মেলবে আমার গোলাপ। সেই শব্দে বন্ধ হবে বুকের রক্তপাত। ...অতঃপর আমার প্রতীক্ষা নীল হয়ে ছড়িয়ে যায় আকাশে আকাশে। ভালোবাসাও। আমার গোলাপটা ঝরে যায়। বিবর্ণ হয়ে যায় টবের সবুজ। রক্ত ঝরে ঝরে অনুভূতিশূন্য হয়ে যায় বুকটা। না-ই বা যদি আসবে, কেন তবে ঠোঁট কাঁপালে? পাপড়ি নোয়ালে? না-ই বা যদি আসবে, কেন তবে চোখ ভেজালে?
প্রকাশ: ৭ এপ্রিল ২০১৩ (প্রথম আলো- বন্ধুসভা)
https://www.bondhushava.com/আমি-তোমায়-গোলাপ-দেব
Saturday 29 August 2020
রূপান্তর- শামসুর রাহমান
চঞ্চলা নর্তকী নও, অথচ যখন হাঁটো কিংবা ছুটে যাও,
বর্ষার বৃষ্টি পরে রামধনু উঠলে আকাশে,
বারান্দায়, চলায় সহজে লাগে ছন্দের বিদ্যুৎ।
যখন আয়নার সামনে লিপস্টিক মাখো ঠোঁটে, হাই-হিল জুতো
পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামো, হাতে বই, বুকের উপর
কালো বেণী, চিবুকে ঘামের ফোটা, কী-যে ভালো লাগে।
যখন বাগানে যাও, ফুল তোলো, ঝকঝকে দাঁতে
হঠাৎ কামড়ে ধরো সবুজ পেয়ারা, ময়নাকে
ছাতু দাও খেতে আর ভাঁড়ারের অন্ধকার কোণে
আঁতকে ওঠো আরশোলা দেখে, পানি চেয়ে
ভেঙে ফ্যালো গ্লাস, নখ খাও এবং চাবির রিং
ঘোরাও আঙুলে
অথবা সুরের তাল কেটে গেলে তন্ময় বিকেলে
খিলখিল ওঠো হেসে, ক্যারম খেলতে গিয়ে সারা
খেলাটাই করো মাটি
কী ক’রে বোঝাই কত ভালো লাগে তোমাকে তখন।
অবশ্য কখনো কবিতা পড়ো না তুমি (ক্লাসের বরাদ্দ পদ্য ছাড়া)
তাতে কী? তবুও এ সুন্দর শরীরী সৌরভে মেতে
চেনা পৃথিবীতে আছো তাই মেটাই চোখের তৃষ্ণা সারাক্ষণ।
হয়ত পারতে হ’তে সোনালি-নিবিড় বালুকণা।
আমার মুঠোয় ঝলোমলো, ভাবি তুমি অর্গানের
ধ্বনির মতোই শ্রাবণের কালো ফোটা পাতাবাহারের বুকে,
বাগানের টসটসে ফলের সুরভি, মাংসে-বেঁধা
গোলাপের কাঁটা পারতে হ’তে...
প্রতীক্ষা- শামসুর রাহমান
এতদিনে জেনে গেছি, সে তোমার পরিহাস ছিল
পুরোপুরি, হয়তো কোনো দিন
দেখা হবে,-কতবার ভেবেছি আবেগভরে আর
তোমার আসার পথে দিয়েছি বিছিয়ে স্বপ্নময়
বাসনার রক্তিম গালিচা।
কিন্তু অলিখিত কবিতার মতো তুমি থেকে গেছ
অদ্যাবধি চেতনায়। সে কোন রহস্যময় প্রাণী
পরম সোহাগে করে পান সারাবেলা
আমার আপন
হৃদয়ের জল, কোনো কোনো দিন কিছুবা শোণিত!
এখন তোমাকে দেখি (মনে হয় দেখি) পথে পথে,
গাছের ছায়ায় পার্কে, স্মৃতির মতন গোধূলির ছোপ-লাগা
বারান্দায়, বাস টার্মিনালে,
প্রত্যেক নারীর মধ্যে তোমাকেই দেখি, মানে খুঁজি
ইতস্তত বারবার। এখনো তোমার রূপ নিতান্ত অচেনা
আমার নিকট?
অস্পষ্ট ধারণা তুমি এক? স্বপ্নকুয়াশায় ঢাকা?
যখন তোমার মুখে চিবুকে গ্রীবায় স্তনমূলে
নামে জলধারা,
তখন তোমাকে কী রকম মনে হয়,
পারব না বলতে কখনো;
যখন তোমার পিঠে শ্যাম্পু করা চুল একরাশ
গীতিকবিতার মতো শুয়ে থাকে কোমল-উজ্জ্বল,
তখন তোমার মুখে কতটুকু তুমিত্ব বিরাজে,
জানি না, অথবা
কারো অভিযানপ্রিয় হাত তোমার স্তনের দিকে
অগ্রসর হ’লে তুমি কেমন বিহ্বল হ’য়ে যাও,
এবং তোমার ওষ্ঠে কেউ চুমু খেলে
তোমার চোখের পাতা অতি দ্রুত নেমে আসে কিনা-
আমি তা’ জানি না।
এখন তোমাকে খুঁজে বেড়ানোর অসুখ নিয়ত
ভোগাচ্ছে আমাকে।
যে কানো নারীর মুখ হঠাৎ দেখলে
ধুক ধক ক’রে ওঠে-সে কি তুমি? হৃৎস্পন্দন, ওষ্ঠ, বাহু-
চোখ হয়ে যায় সবই একটি নিমেষে। সে কি তুমি?
কোনোখানে তোমাকে না দেখে বারংবার
কেবলি আমার মন ভীষণ খারাপ হ’য়ে যায়।
তবে কি স্বপ্নের ঘোরে আজীবন জ্বলন্ত রাত্তিরে
তোমার উদ্দেশে আমি বিষণ্ণ কবিতা লিখে যাব?
এক্ষুণি আমাকে এসে ব’লে দাও সাফ-
তুমি আর প্রতীক্ষায় থেকো না নির্বোধ।
কী পরীক্ষা নেবে?- শামসুর রাহমান
কী পরীক্ষা নেবে তুমি আর বারবার?
হাতে জপমালা নেই, তবু
আমি তো তোমার নাম মন্ত্রের মতন
করি উচ্চারণ সর্বক্ষণ। যেখানে তোমার ছায়া
স্বপ্নিল বিলাসে
অপূর্ব লুটিয়ে পড়ে, সেখানে আমার ওষ্ঠ রেখে
অনেক আলোকবর্ষ যাপন করতে পারি, তোমারই উদ্দেশে
সাঁতার না জেনেও নিঃশঙ্ক দ্বিধাহীন
গহন নদীতে নেমে যেতে পারি।
তোমার সন্ধানে ক্রোশ দাউ দাউ পথ হেঁটে
অগ্নিশুদ্ধ হতে পারি, পারি
বুকের শোণিতে ফুল ফোটাতে পাষাণে।
যখন পাথরে হাত রাখি,
পাথর থাকে না আর অরূপ পাথর,
হয়ে যায় প্রতিমা তোমার।
যখন বৃক্ষের দিকে দৃষ্টি মেলে দিই,
বৃক্ষ হয় তোমার শরীর।
প্রত্যহ তোমার প্রতীক্ষায় এক বুক উপদ্রব নিয়ে থাকি,
ব্যাকুলতা বারবার সিঁদ কেটে ঢোকে,
হৃদয়ের ঘরগেরস্থালি, বনস্থলী
লুট হয়ে যায়
প্রত্যহ তোমার প্রতীক্ষায়, আমি তাই তুমি ছাড়া
কারুর জন্যেই
পারি না অপেক্ষা করতে আর।
ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়েছি তোমার ওষ্ঠজাম, তুমি না থাকলে
আমার সকল চুমো যাবে বনবাসে,
তোমার অমন হাত স্পর্শ ক’রে ছুঁয়েছি স্বর্গের
মল্লিকার, তুমি চ’লে গেলে
আমার ছোঁয়ার মতো অন্য কোনো হাত থাকবে না আর।
এরপর অনুরাগ নিক্তিতে মাপতে চাও, চাও
আমার পরীক্ষা নিতে নানা অছিলায়?
আর কি ভোগ চাও? নাকি একে নির্দ্বিধায়
সবি তো দিয়েছি।
হৃদয়ের আসবাবপত্তর সবি তো
স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিতে চাই, তবু কেন যাবতীয়
সম্পদ আমার
ক্রোক করবে বলে নিত্য আমাকে শাসাও?
আমি তো আমাকে সুখ দিতে চেয়ে কেবলি নিজের
অসুখ বাড়াই।
মাটি ছুঁয়ে বলছি এখন,
এই বৃক্ষমূলে আমি শীর্ণ হই, অন্ন আনি নিজে,
কান্নায় ধোয়াই পদযুগ।
কী পরীক্ষা নেবে তুমি আর বারবার?
আমার সম্মুখে তুলে ধরো বিষপাত্র,
নিষ্পলক দ্বিধাহীন নিমেষে উজাড় ক’রে দেবো।
আমার মৃত্যুর পরেও যদি- শামসুর রাহমান
একটি পাখী রোজ আমার জানালায়
আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে।
কখনো দেয় শিস, বাড়ায় গলা তার;
আবার কখনোবা পাখাটা ঝাপটায়।
পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন,
দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু;
নদীর স্বপ্নের জলজ কণাগুলি
এখনো তাঁর ঠোটে হয়তো গচ্ছিত।
কাউকে নীড়ে তার এসেছে ফেলে বুঝি?
হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা।
তাই তো চোখ তার এমন গাঢ় নীল,
মেললে পাখা জাগে নীলের উৎসব।
যখন লিখি আমি টেবিলে ঝুঁকে আর
পড়তে বসি বই, তখন সেই পাখি
চকিতে দোল খায় আমার জানালায়-
খাতার পাতা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় খুশি।
আমার মৃত্যুর পরেও যদি সেই
সুনীল পাখি আসে আমার জানালায়,
আবার শিস দেয়, আমার বইখাতা
যদি সে ঠোকরায়, দিও না বাধা তাকে।