Friday 10 April 2020

মুদ্রণপ্রমাদ- আবু হাসান শাহরিয়ার

রাত্রির আকাশও কবি; তারারা  বৈষ্ণব পদাবলি
বৃক্ষগণ চিত্রকর; বসন্ত এলেই খেলে হোলি

বৃষস্কন্ধ মহাকাব্যে রংচটা মুদ্রণপ্রমাদ—
        হিংস্র মানুষ

সে যদি মানুষ হয়, তাকে আজ চলে যেতে বলো

[বিমূর্ত প্রণয়কলা/প্রকাশসাল : ২০১৯]

Wednesday 8 April 2020

অভিশাপ- বীথি চট্টোপাধ্যায়

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যেই কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরবে
তখন তোমার ভীষণ ভাবে আমার কথাই মনে পড়বে।
আমার বুকের কলহাস্য এবং নিছক বুকের স্পর্শ—
আমার রূপের টুকরো টুকরো অনুষঙ্গ,
হাতের নরম আঙুলগুলো তোমার চুলে খেলা করবে।

এসব কথা বাড়িয়ে বলা একদমই নয়
যখন তুমি আমায় নিয়ে জড়িয়ে ছিলে
তখন থেকেই আমার ভুরু, চিবুকের ডৌল,
শাড়িতে ঢাকা পায়ের পাতা, বুঝতে পারলো
অন্যকোনও মেয়ের সঙ্গে শুয়ে থাকলেও . . .

পাপের মতো এসব কথা শোনায় যেন
কেমন করে পাপের গতি ভয় হারালো ?
পাপও এত পবিত্র হয়! জানা ছিল না।
সে যাই হোক, এবার তুমি যে মুহূর্তেই
প্রেমে পড়বে, তক্ষুনি ঠিক এমনভাবে
আমার কথাই মনে পড়বে।

তেজ- জয় গোস্বামী

তিনবার মরি যদি দুইবার জলে আর একবার
আগুনে স্বয়ং মৃত্যু হই
হই, যদি একবার তাকে পাই বুকে তবে ওই বক্ষে
ঢুকে গিয়ে আজীবন দুগ্ধ হয়ে থাকি
দুগ্ধ দিয়ে মারো, শুভ্র , বক্ষ চেপে মারো , তোর
মাথা মুখে চুলে ব্রহ্মতেজ মাখামাখি

এক জন্ম- তারাপদ রায়

অনেকদিন দেখা হবে না
তারপর একদিন দেখা হবে।
দুজনেই দুজনকে বলবো,
‘অনেকদিন দেখা হয় নি’।
এইভাবে যাবে দিনের পর দিন
বৎসরের পর বৎসর।
তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে
বা হয়ত জানা যাবে না,
যে তোমার সঙ্গে আমার
অথবা আমার সঙ্গে তোমার
আর দেখা হবে না।

দোল : শান্তিনিকেতন- জয় গোস্বামী


বকুল শাখা পারুল শাখা
তাকাও কেন আমার দিকে?

মিথ্যে জীবন কাটলো আমার
ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে-

কী করে আজ আবীর দেবো
তোমাদের ঐ বান্ধবীকে!


শান্ত বলে জানতে আমায়?
কলঙ্কহীন, শুদ্ধ বলে?
কিন্তু আমি নরক থেকে
সাঁতরে এলাম

তখন আমার শরীর থেকে
গরম কাদা গড়িয়ে পড়ছে
রক্ত-কাদা

হঠাৎ তোমায় দেখতে পেলাম
বালিকাদের গানের দলে

সত্যি কিছু লুকোচ্ছি না।

প্রাচীন তপোবনের ধারে
তোমার বাড়ি

কখন যাবো? - ঘুম পাচ্ছে-
বলো কখন মুখ রাখবো
তোমার কোলে!
বারণ করবে?

Tuesday 7 April 2020

মনে পড়ে- মহাদেব সাহা

এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে
মনে পড়ে মেঘ, মনে পড়ে চাঁদ,
জলের ধারা কেমন ছিলো-
সেসব কথাই মনে পড়ে;
এখন শুধু মনে পড়ে, নদীর কথা মনে পড়ে,
তোমার কথা মনে পড়ে,
এখন এই গভীর রাতে মনে পড়ে
তোমার মুখ, তোমার ছায়া,
তোমার বাড়ির ভেতর-মহল,
তোমার উঠোন, সন্ধ্যাতারা
এখন শুধু মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে;
তোমার কথা মনে পড়ে
অনেক কথা মনে পড়ে,
এখন শুধু মনে পড়ে, এখন শুধু মনে পড়ে;
এখন শুধু মনে পড়ে আর মনে পড়ে
আকাশে মেঘ থেকে থেকে
এখন বুঝি বৃষ্টি ঝরে।

Saturday 4 April 2020

আর কোনোদিন হইনি এমন মর্মাহত – মহাদেব সাহা

এর আগে আর কোনোদিন আমি
হইনি এমন মর্মাহত
যেদিন তোমার চোখে প্রথম দেখেছি আমি জল,
অকস্মাৎ মনে হলো নিভে গেলো সব পৃথিবীর আলো
গোলাপবাগান সব হয়ে গেলো রুক্ষ কাঁটাবন।
সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি
মর্মাহত হইনি এমন
সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি
মর্মাহত হইনি এমন
যেদিন প্রথম পথে দেখলাম অনাথ কিশোর এক
ক্ষুধায় কাতর কেঁদে মরে,
তখনই আমার মনে হলো পৃথিবীতে কোথাও
তেমন আর সুখ কিছু নেই
ফুলের দোকানগুলি হয়ে গেছে অস্ত্রের গুদাম।

আমি আর কোনোদিন মর্মাহত হইনি এমন
যেদিন প্রথম দেখি
ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় রক্ত লেগে আছে,
যেদিন প্রথম সবুজ বৃক্ষের দিকে চেয়ে দেখলাম
সেখানে লুকিয়ে আছে বিষধর সাপ, নদীর গভীরে
চোখ ফেলে দেখি এই জলে দূষণের বিষ, হাঙর-কুমির
তখনই দুহাতে ঢেকে মুখ বুঝলাম কতোখানি দুঃখী
এই কাছের পৃথিবী।
যেদিন প্রথম আমি আকাশের দিকে চেয়ে দেখলাম
মেঘে বজ্র, ক্রূর ঘূর্ণিঝড়
অরণ্যে ভীষণ সব পশু, লোকালয়ে খুনী আততায়ী
তখনই আমার মনে হলো পৃথিবীর আলো অস্তমিত।
এর আগে আমি আর  কোনদিন মর্মাহত হইনি এমন
যেদিন প্রথম শুনি প্রেমিক অক্লেশে বসিয়েছে ছুরি প্রেমিকার বুকে
তখন বুঝেছি পৃথিবীতে দুঃখ ছাড়া চাষবাস হবে না কিছুই।

এর আগে কোনোদিন এমন হইনি মর্মাহত
যেদিন বৃক্ষের কাছে গিয়ে দেখলাম রক্ত ঝরে বৃক্ষের শরীরে
নদীর নিকটে গিয়ে দেখি নেই তার বুকে এতোটুকু তৃষ্ণারও জল
তখনই বুঝেছি কতোটা নির্দয় হতে পারে এই ভালোবাসার পৃথিবী।
সত্যি এর আগে আর কোনোদিন আমি হইনি এমন মর্মাহত
যেদিন দেখেও তুমি চোখ তুলে ফিরে তাকালে না।

পালক- শঙ্খ ঘোষ

সবকিছু মুছে নেওয়া এই রাত্রি তোমার সমান।
সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি পড়ে। কখনো-কখনো
কাছে দূরে জ্বলে ওঠে ফসফরাস। কিছুরই কোথাও
ক্ষান্তি নেই। প্রবাহ চলেছে শুধু তোমারই মতন
একা একা, তোমারই মতন এত বিকারবিহীন।
যখনই তোমার কথা ভাবি তবু, সমস্ত আঘাত
পালকের মতো এসে বুকের ওপরে হাত রাখে
যদিও জানি যে তুমি কোনোদিনই চাওনি আমাকে।

আড়ালে– শঙ্খ ঘোষ

দুপুরে রুক্ষ গাছের পাতার
কোমলতাগুলি হারালে-
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে ।
যখন যা চাই তখুনি তা চাই ।
তা যদি না হবে তাহলে বাঁচাই
মিথ্যে, আমার সকল আশায়
নিয়মেরা যদি নিয়ম শাসায়
দগ্ধ হাওয়ার কৃপণ আঙুলে-
তাহলে শুকনো জীবনের মূলে
বিশ্বাস নেই, সে জীবন ছাই!
মেঘের কোমল করুণ দুপুর
সূর্যে আঙুল বাড়ালে-
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে ।।

নৌকাডুবি- অমিতাভ দাশগুপ্ত

সরলের মধ্যে আছে কত মারাত্মক প্রতারণা,
যখন তা জানা যায়–
বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে।
ঐ গ্রীক নাক নিয়ে বিনয়ে সন্নত
যে-যুবক বসেছে সামনে,
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে কত তীব্র আর্সেনিক,
যখন তা বোঝা যায়–
সারা দেহ নীল হয়ে গেছে।
নীলের কাঙাল তুমি?
নদী দ্যাখো, সাঁতারে যেয়ো না,
ওর বুকে কমপক্ষে
গোটাকুড়ি নৌকাডুবি আছে।

মনে মনে বহুদূর চলে গেছি- শক্তি চট্টোপাধ্যায়

মনে মনে বহুদূর চলে গেছি
যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়
জন্মেই হাঁটতে হয়
হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে
একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি
পথ তো একটা নয় –
তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধা
নদীর দু – প্রান্তের মূল
একপ্রান্তে জনপদ অন্যপ্রান্ত জনশূণ্য
দুদিকেই কূল, দুদিকেই এপার-ওপার, আসা-যাওয়া, টানাপোরেন –
দুটো জন্মই লাগে
মনে মনে দুটো জন্মই লাগে।

তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি- মহাদেব সাহা

তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি
ভালোবেসে ফেলি
তোমাকে ছাড়াতে গিয়ে আরো
বেশি গভীরে জড়াই,
যতোই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই
দূরে
ততোই তোমার হাতে বন্দি হয়ে পড়ি,
তোমাকে এড়াতে গেলে এভাবেই
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাই

এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি;
তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ
জড়িয়ে যাই আমি
আমার কিছুই আর করার থাকে না।
তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে
যেতে চাই
যদি ডুবে যেতে চাই
তুমি দুহাতে জাগাও।
এমন সাধ্য কী আছে তোমার চোখের
সামান্য আড়াল হই,
দুই হাত দূরে যাই
যেখানেই যেতে চাই সেখানেই
বিছিয়ে রেখেছো ডালপালা,
তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনও সম্ভব
তুমি সমুদ্রের চেয়েও সমুদ্র
আকাশের চেয়েও আকাশ তুমি আমার
ভেতরে জেগে আছো।
তোমাকে ভুলতে চেয়ে তাই আরো
বেশি ভালোবেসে ফেলি,
তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে
আরো কাছে টেনে নেই
যতোই তোমার কাছ
থেকে আমি দূরে যেতে চাই
ততো মিশে যাই নিঃশ্বাসে
প্রশ্বাসে,
ততোই তোমার আমি হয়ে পড়ি ছায়ার
মতন;
কোনোদিকে যাওয়ার আর একটুও
জায়গা থাকে না
তুমিই জড়িয়ে রাখো তোমার কাঁটায়।
তোমাকে ছাড়তে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে
আরো জড়িয়েছি
তোমাকে ভুলতে গিয়ে আরো
ভালোবেসেছি তোমাকে।

কে চায় তোমাকে পেলে- মহাদেব সাহা

বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অর্থ-পদ চায়
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণসিংহাসন
জয়ের শিরোপা আর খ্যাতির সম্মান,
কে চায় সোনার খনি তোমার বুকের এই স্বর্ণচাঁপা পেলে?
তোমার স্বীকৃতি পেলে কে চায় মঞ্চের মালা
কে চায় তাহলে আর মানপত্র তোমার হাতের চিঠি পেলে,
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বলো কে চায় বৃক্ষের ছায়া
তোমার শুশ্রূষা পেলে কে চায় সুস্থতার ছাড়পত্র বলো,
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ চায় শ্রেষ্ঠ পদ
কে চায় তাহলে বলো স্বীকৃতি বা মিথ্যা সমর্থন,
তোমার প্রশ্রয় পেলে কে চায় লোকের করুণা
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণমুদ্রা কিংবা রাজ্যপাট?
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অন্য কিছু চায়,
কে আর তোমার বুকে স্থান পেলে অন্যখানে যায়!

রঙবুদ্বুদ- রণজিৎ দাশ

ঝাঁকে ঝাঁকে চিঠি উড়িয়ে দিয়েছি তোমার চতুর্দিকে
ফু দিয়ে যেভাবে বালক ওড়ায় রঙবুদ্বুদ, এবং
নিজেই খুশিতে হাততালি দেয়, মশগুল চোখে হাসে।
পৃথিবীতে শুধু বুদ্বুদ-ই জানে বিচ্ছুরণের জাদু-
আপাতত তাই বালক বুঝেছে, সাবানফেনার পিছল
তাকে চিনিয়েছে স্কুল পালানোর অন্ধনতুন গলি
আমি তো চিনেছি তারও থেকে বেশি, জেনেছি কঠিন প্রিজম
শাদা আলোরেখা চুর চুর করে, নিহিত বর্ণমালা
তোমার শরীরে কেন ফুটে ওঠে আলিঙ্গনের আগে;
জেনেছি শরীরে কেন ফুটে ওঠে আলিঙ্গনের আগে;
জেনেছি তোমাকে - শাদা আলোরেখা, তুমিই ভ্রান্তি,
                                                     তোমারই বর্ণমালা
দেখেছি তোমার চুম্বনছবি শস্যে ও গানে, দেশি থিয়েটারে,
                                         মানুষের বোকা ঠোঁটে
আমি-ও সকল চিঠিতে লিখেছি 'চুম্বন দাও, আলজিভ', তুমি
এত আর্তিকে অবহেলা করে গোপনে কেবল পালিয়ে গিয়েছো দূরে
যেখানে অজ্ঞ বালক ওড়ায় রঙবুদ্বুদ, ভাবে-
               পৃথিবীতে শুধু বুদ্বুদ-ই জানে বিচ্ছুরণের মায়া

সামান্য কবিতা- ভাস্কর চক্রবর্তী ।

ঝড়-বাতাসের দিনে আবার তোমার সঙ্গে দেখা!
আবার তোমার সঙ্গে কথা!
আবার তোমার সঙ্গে গান ।

এরকম মনে হয় কোনোদিন যখন জীবন খানখান ।

       (কৃত্তিবাস ১৪-০১-১৯৮২)

সৃজা ৮

রোদ পড়েছে মন খারাপের আস্তিনে
কান্না চিবুক ছোঁয়ার আগেই শুকিয়ে যায়
আজও হৃদয় ভাঙার কোনো বিধান নেই
আমার ঘরে কিম্বা ওদের পঞ্জিকায়।

অনেকগুলো দিন কেটেছে এই করে
বেডরুমে তাই ধূসরতার পাশ বালিশ
নিয়মমাফিক জ্বর আসেনি আজ ভোরে
বুকের ভেতর আর লাগেনি সব খালি।

সব অভ্যেসই সময়মতো ফুরোয় ঠিক
এই জীবনে কোনো আদর স্থবির নয়
যার যতটা সুযোগ নেবার, সে তাই নিক।
থাকার মানুষ সারিয়ে দেবে এসব ক্ষয়

লক্ষ্য যদি স্থির রেখে দেয় মাছের চোখ,
দুঃখ চুলের ক্লিপের মত - আনমনা;
মায়ার শরীর এবার যতই মেঘলা হোক
যত্ন করে সেসব তুলে রাখব না।

বরং তাকে ছড়িয়ে দেবো জীবনভোর
লাল মিছিলে, দূরের কোনো নীল গ্রহে
অপেক্ষাতে যে বোঝাবে আসল জোর,
তাকেই নেব নীরব প্রেমে, বিদ্রোহে।

তাই বৃষ্টি, এবার না হয় ধরেই যা...
আর ভয় নেই ঝড় অথবা বর্ষাতে
ঘরহীন মানুষ হাঁটতে জানে হাজার পা
কেবল আপন ইচ্ছেটুকুর ভরসাতে(ই)।

রোদ পড়েছে মন খারাপের আস্তিনে
কান্না চিবুক ছোঁয়ার আগেই শুকিয়ে যায়
জীবন ছেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই
বাঁচব আমি, বাঁচছি আমি নির্দ্বিধায়।

সোনালি কাবিন- আল মাহমুদ

বৃষ্টির দোহাই বিবি, তিলবর্ণ ধানের দোহাই

দোহাই মাছ -মাংস দুগ্ধবতী হালাল পশুর,

লাঙল জোয়াল কাস্তে বায়ুভরা পালের দোহাই

হৃদয়ের ধর্ম নিয়ে কোন কবি করেনা কসুর।

কথার খেলাপ করে আমি যদি  জবান নাপাক

কোনদিন করি তবে হয়ো তুমি বিদ্যুতের ফলা,

এ-বক্ষ বিদীর্ণ করে নামে যেন তোমার তালাক

নাদানের রোজগারে না উঠিও আমিষের নলা।

রাতের নদীতে বাসা পানিউড়ী পাখির ছতরে,

শিষ্ট ঢেউয়ের পাল যে কিসিমে ভাঙে ছল ছল

আমার চুম্বনরাশি ক্রমাগত তোমার গতরে

ঢেলে দেব চিরদিন মুক্ত করে লজ্জার আগল

এর ব্যতিক্রমে বানু  এ -মস্তকে নামুক লানৎ

ভাষার শপথ আর প্রেমময় কাব্যের শপথ।

মানুষের মত- সৃজা ঘোষ

একটা খুশি আমার হয়ে থাকুক
একটা খুশি রাখুক তোমার মন;
একটা খুশি আনুক কোনো হাওয়া
যুদ্ধ মুকুব থাকুক ততক্ষণ।

একটু আলো তোমার নিজের হোক
আর একটু, রোজ আমায় ফেরাক ঘরে
মৃত্যু গুলোর আগেই যেন রোজ
আমরা বুঝি- জীবন পরষ্পরের।

তোমার ভাঙুক সমস্ত ভয়, রাগ
আমিও ঘৃণা এই ফেললাম ছুঁড়ে,
সকল পথ আজ আবার খুলে যাক
তোমার এবং আমার হৃদয়পুরে...

একটা হাসি তোমার মুখে থাক
আর একটা ছাপ ফেলুক আমার ঠোঁটে,
এই পৃথিবীর সকল অভিমান
আবার যেন গোলাপ হয়ে ফোটে।

বাঘিনী- হুমায়ুন আজাদ

বাঘিনীর মতো ওৎ পেতে আছে চাঁদ
ঝাউয়ের মসৃণ ডালে বটের পাতায়/ধ'সে পড়া দালানের ছাদে/
রাস্তায়/ ধাবমান টেলিফোনের তারে/ডাস্টবিনে/
জ্বলজ্বলে নর্দমায়। ব্যগ্র হয়ে ধরা দেয়
ফড়িং/হরিণ/সাপ/মাকড়শা/কাঠবিড়ালি/
নিঅন পেরিয়ে ওড়ে চন্দ্রগ্রস্ত পোকা। এমন ছোবল দিতে জানে
লক্ষবর্ষ পুরাতন নির্মম বাঘিনী।

আমাকে কি ডাক দিলে মিথ্যাভাষী হে বাঘিনী
এ-নিষ্ঠুর চৈতরাতে? মিথ্যে অভিনন্দন বিছিয়ে দিলে
মুমূর্ষু পাতার পংক্তিতে?
তুমি নেই তাই প্রতারণা করার মতোও
                          কেউ নেই এই শূন্য প্রান্তরে।
তোমাকে ধিক্কার দিই/ঘৃণা করি/চড়কষি/
তবু কী ক'রে ভুলি হে বাঘিনী চাঁদ
একদা ছয়ঘন্টা শান্তি দিয়েছিলো সহপাঠী নীলিমা রহমান?

সমুদ্রস্নান- সৃজা ঘোষ

এখনও তোমার খেলাঘরে
আমার সমুদ্র ভেঙে পড়ে।
গড়ে ওঠে বিষাদের বাড়ি
কান্নার গাছ সারি সারি...

এখনো তোমার প্রিয় চাঁদে
আমার রাতেরা একা কাঁদে,
বালি ধরে হেঁটে যাওয়া সার
কোথাও যাওয়ার নেই আর।

এখনো তোমার দেওয়া গানে
শুয়ে থাকি একা- অভিমানে।
এত ব্যথা, জ্বর এসে যায়...
বেঁচে থাকা আজও মৃতপ্রায়।

এখনো তোমার দেওয়া ঘা তে
চোরা বালি খুঁজে ফিরি যাতে
অকপটে ডুবে যাওয়া সোজা
শেষ হলে তোমার হাত খোঁজা।

বৃষ্টিতে মেয়েরা যেমন- সৃজা ঘোষ

একটা মেয়ে মেঘের মুখোমুখি
অন্ধকারে জড়িয়ে গেছে পা,
একটা মেয়ে আকাশ দেখেই সুখী
সেই মেয়েটা বৃষ্টি বোঝে না।

একটা মেয়ের ঝাপসা হাওয়ার চোখ
একটা মেয়ে তাকাচ্ছে না মোটে
একটা মেয়ে নিথর শ্রাবণ মাসে
কাঁদতে গিয়েই বৃষ্টি হয়ে ওঠে৷

একটা মেয়ে বিদ্যুতে ঝলসানো
ভালবেসেই হারিয়ে ফেলে চোখ।
একটা মেয়ে জানলা খুলে দিয়ে
চাইছে বোধহয় একটু আলো হোক

একটা মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে কবেই
ছেড়ে আসার বিভৎস সন্ধ্যায়;
একটা মেয়ে সোঁদা মাটির মত
সেই মেয়েটা বিষের অপেক্ষায়...

সমস্ত মেয়ে বৃষ্টি হতে চায়
একটুখানি বৃষ্টি হতে চায়...

অক্ষমতা- সৃজা ঘোষ

বিস্তর পুড়ে গেছ জানি।
কাঁটায় কাঁটায় শুধু
দুঃখকে গাঢ় করে আনি...

ভরসারা ঢেকে গেছে ঘায়ে,
পারিনি রাখতে মুখ
রক্ত ঝরেছে পায়ে পায়ে।

সামনে দাঁড়িয়ে ওরা
অসম্মানের ঢেউ-এ
ভেঙে গেছে আগাগোড়া!

পারি নি গুঁড়িয়ে দিতে,
বিশ্বাসঘাতকেরা
এসেছে অতর্কিতে।

যখনই পেয়েছি ভয়-
সততার অবয়ব
দেখেছি কি দৃঢ় হয়!

ক্ষতর মধ্যে তাই
যতদূর পারি আমি
চেঁচিয়ে বলতে চাই

যতদিন বেঁচে আছি,
থেকে যেতে চাই শুধু
শেষ আলোর কাছাকাছি।

মাধবীকে- দীপক রায়

তিরিশ বছর আগের চিঠিগুলি রেখে দিয়ে কী আনন্দ পাও তুমি!
মাধবী, তোমার নামটাই কীরকম ম্লান হয়ে গেছে।

এখন কি মেয়েদের গীতা বা দুর্গা নাম রাখা যায়?
কতবার বলেছি তোমাকে, চিঠিগুলো নষ্ট করে দাও।
পুড়িয়ে ফেলতে না পার, ভাসিয়ে দাও অলকানন্দায়।

শোনো মাধবী, বদলে যাচ্ছে সবকিছু, নিজেকে বদলে নাও তুমিও।
তোমার নাম বদল করতে বলছি না।
তোমার লম্বা চুল ছেঁটে ফেলতে বলছি না।
শাড়ি বদলে ছোটো পোশাক--তাও বলছি না।
গান শুনতে ভালোবাস তুমি, তোমাকে গীতা ঘটক কিনে দেব।
আসলে আমি নিজেও জানি না, কী বলব তোমাকে?

ওই চিঠিগুলো নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওই চিঠিগুলোতে
আমার তাপউত্তাপ আমার লজ্জা আমার দুপুর বিকেল
চিঠিগুলো নষ্ট করে দাও মাধবী।

হ্যাঁ গৌরী, তোমাকেই ভালবাসি- শামসুর রাহমান

হ্যাঁ গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
তোমাকে ভালো না বেসে পারা যায় না,
তোমাকে ভালো না বেসে বাঁচা অসম্ভব।
আমার প্রতি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে
তোমার বসতি।
কী ক’রে আমি পথ হাঁটবো, আকাশের দিকে
দৃষ্টি মেলে দেবো সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত দেখার জন্যে,
কী ক’রে আমি আঁজলায় ভরে নেবো শান্তির জলধারা,
কী ক’রে আমি কবিতা লিখবো
তোমাকে ভালো না বেসে?
হ্যাঁ, গৌরী, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন
অচল মুদ্রা বৈ তো নয়।
হ্যাঁ, গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
সুন্দরবনের আরণ্যক শোভার শপথ,
গারো পাহাড়ের আর্ত নিস্তব্ধতার শপথ,
উত্তরবঙ্গের রাঙামাটির পথের শপথ,
পার্বত্য চট্রগ্রামের পাকদন্ডি, ঝর্ণা আর
পাহাড়ি যুবার অপার বেদনার শপথ,
মেঘনার অজস্র ঢেউয়ের শপথ,
পদ্মার ঝলসে ওঠা চকচকে ইলিশের শপথ,
পরিযায়ী পাখিদের অনলস রঙিন ডানার শপথ,
তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

হ্যাঁ গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
মসজিদের কবুতরময় গম্বুজ আর উঁচু মিনারের শপথ,
মন্দিরের সন্ধ্যাপ্রদীপ আর ঘন্টাধ্বনির শপথ,
গির্জার আইকনের, অর্গানের প্রার্থনা-মন্দ্রিত সঙ্গীতের শপথ,
বৌদ্ধ বিহারের নিরলঙ্কার সৌম্য কান্তির শপথ,
তোমাকে, হ্যাঁ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

(কাব্যগ্রন্থ - তুমিই নিঃশ্বাস তুমিই হৃৎস্পন্দন )

সাহসী- সৃজা ঘোষ

এখনো গাছের গায়ে জল লেগে আছে
কাগজের কেরামতি, নৌকোর ভয়...
হেরে যাওয়া চিরকালই যুদ্ধের কাছে
স্বাভাবিক, তবে 'মাঠ ছেড়ে যাওয়া' নয়।

হাওয়া জানে হিসেবের মানে নেই কোনো,
ঝড় এলে তাকে বয়ে যেতে দেওয়া শ্রেয়।
তুমি কেন একা বসে দুঃখকে গোণো?
যখন যা ঘটে, জেনো- তাই-ই উপাদেয়

সম্ভবনার ফুল ফুটে ওঠে ঘাসে
আমাদের যাতায়াতই ভুলে যায় দেখা;
ব্যথারা বিবর্ধিত হয় আর হাসে
কেন চুপ করে বাঁচি? কেন একা একা!

কত লোক আগুনকে ভালবেসে আজও
মাঝরাতে পুড়ে গিয়ে হা হা করে হাসে
এতসব পার করে আসা কিছু কাজও
মুহূর্তে ডুবে যায় বাজি রেখে তাসে।

ভুল জুড়ে থাকা এই দাগ উদ্বায়ী
ছাতা নিয়ে দুর্যোগে রাস্তায় নামা,
মানুষ তো একই থাকে- সাহসী ও স্থায়ী
শুধু কিছু বর্ষায় ভিজে যায় জামা।

তবু বর্ষাতে আসে চেনা গন্ধেরা
দেখি ঝড় জল ভয়াবহ নয় মোটে
ভেজবার কারসাজি জানা নাবিকেরা
মেঘ টেঘ পার করে আলো হয়ে ওঠে।

যাও, পত্রদূত- রফিক আজাদ

যাও, পত্রদূত, বোলো তাকে কানে-কানে, মৃদু স্বরে,
সলজ্জ ভাষায় এই বার্তা : "কোমল পাথর, তুমি
সূর্যাস্তের লাল আভা জড়িয়ে রয়েছো বরতনু;
প্রকৃতি জানে না নিজে কতোটা সুন্দর বনভূমি।"

যাও, বোলো তার কানে ভ্রমরসদৃশ গুঞ্জরণে,
চোখের প্রশংসা কোরো, বোলো তাকে 'সুঠাম সুন্দর
শরীরের প্রতি বাঁকে তার মরণ লুকিয়ে আছে',
অন্য কেউ নয়, সে আমার আকন্ঠ তৃষ্ণার জল :
চুলের প্রশংসা কোরো, তার গুরু নিতম্ব ও বুক
সব কিছু খুব ভালো; উপরন্তু, হাসিটি মধুর।

যাও, পত্রদূত, বোলো, "হে মাধবী, কোমল পাথর,
দাঁড়াও সহাস্য মুখে সুদূর মধুর মফঃস্বলে।"
বিনম্র ভাষায় বোলো, "উপস্থিতি খুবই তো উজ্জ্বল,
যুক্তিহীন অন্ধ এক আবেগের মধ্যে, বেড়াজালে,
আবদ্ধ হয়েছো, উভয়েই, পরস্পর নুয়ে আছো।

একটি নদীর দিকে"--বোলো তাকে, "অচ্ছেদ্য বন্ধন
ছিঁড়ে ফেলা সহজ তো নয় মোটে, কোমল পাথর!"

যাও, পত্রদূত, বোলো--ভালোবাসা গ্রীষ্মের দুপুর?
নীরব দৃষ্টির ভাষা-বিনিময়--দিগন্ত সুদূর? ।

জ্বর- সৃজা ঘোষ

আঘাতে স্তব্ধ হই, অভিমানে সোলো।
সেইবার ছেড়ে গেলে, ধুম জ্বর হল

সারারাত হুঁশ নেই, মুখে তবু সাড়
বিড়বিড় করে গেছি- নামটুকু তার।

এইভাবে একটানা বেশ কিছু দিন
তুমি নেই কোত্থাও; আছে- জ্বর, ঋণ

সেদিন একটু ভাল। চোখ খোলা যায়।
রোদ এসে পড়েছিল মৃত জানালায়

শুয়ে শুয়ে শুনলাম বাইরের ঘরে
সারাদিন ভয়ে কারা প্রার্থনা করে।

নীচু হয়ে আসে চোখ, বারোয়ারি ঘুমে
তোমাকে দেখেছি কবে? কোন মরশুমে?

তুমি কবে এসেছিলে? কতটুকু ছিলে?
জ্বর স্মৃতি গ্রাস করে নেয় তিলে তিলে

চোখের কাছেই জল, তবু খুঁজি হাতে
গলাও শুকিয়ে আসে স্থির পিপাসাতে।

কান বেয়ে গান ছোটে, শিরা ভেসে যায়
জ্বর ঠোঁটে ঠায় বসে থাকি বিছানায়।

বাইরে তো কত লোক। কত শোক আরও
আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারো?

কবিতা শান্ত হয়ে বসে এক কোণে
শব্দের ঘেরাটোপে বাস্তব শোনে।

দিন কেটে যায় শুধু। সেরে উঠি কই!
আমার মতন তারও জ্বর নিশ্চই?

উপসংহার- সৃজা ঘোষ

ঝিম ধরে আসে ভেজা তারাটার গা-তে
আমি ভাবতাম এমনই একটা রাতে
তাহার সঙ্গে পালাবো অনেক দূরে।

ছাদ ভেঙে দেবে আকাশের কারসাজি,
দু চোখ জানবে ঠিক কত কাছাকাছি
বর্ষা বুনছে মেঘমল্লার জুড়ে...

স্থবির পারদ কার কাছে নেমে যেত
কে কপাল ছুঁয়ে জ্বরের আভাস পেত
জন্মের দাগে ঢেকে দিত ভালবাসা?

আদরে মোছাতো অভিমানীটির দেহ
জানত কাঁদলে কোন পথে পরিমেয়
খাতার পাতায় গাঢ় হয়ে ওঠে ভাষা!

তার কথা আজ একবার বলে যাও-
কেন তাকে আর পাইনিকো কোত্থাও,
কার মৃত্যুতে বাজছে উলুধ্বনি?

গাছেদের মত রুমাল ভিজছে ক্রমে
হৃদয়ের গায়ে কালসিটে আছে জমে
পারলে তাহাকে নিয়ে এসো এক্ষুণি।

বিদ্রোহ- সৃজা ঘোষ

ব্যথারা গৃহপালিত, রাস্তায় বের হয় দেহ...
প্রেমের অশ্রু জানে- অবহেলা কত পরিমেয়?
আঘাত বাড়তে থাকে, যত্নের ছায়া ভোলে গাছই!
মানুষ ছিটকে যায়। মানুষই তো আসে কাছাকাছি।

রোজ কত খুন হয়, আদালত বসে না এখানে
সেই চোখ বড় সুখী, যে সহজে ভুলে যেতে জানে।
লেগে থাকে মায়া আর অভিমানে ঠাসা বিদ্বেষও
ছাই হয়ে যাওয়া দিনে জোছনাকে তুমি ভালবেসো

সহজাত ঘুম আসে অভাবের ক্ষত সেরে গেলে
যে গোপনে ভালবাসে, প্রকাশ্যে সেই যায় ফেলে।
পরাধীন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে গাঢ় অভিমান
আদর বৃহত্তর, তাকে ছেয়ে ফেলে পিছুটান...

দরদিয়া বসে থাকে সারারাত ঘরের উঠোনে
কাঁধের পাশেই কাঁধ, তবু তারা কই কথা শোনে?
উলুধ্বনিতে গান ফোটায় না আর কোনো খই
থেকে থেকে বলে উঠি- আমি আর তার কেউ নই।

আলো ফোটে বারবার, যন্ত্রণা সয়ে যায় ঘা-এ
স্নান সেরে সব্বাই খেতে আসি জল পায়ে পায়ে
চোখের ভেতর শেষে ঘুম আসে- অভিযোগহীনা
আমার এ ব্যথায় আর তোমাকেও কারণ মানিনা।

সৃজা ৭

শেষের আগে কয়েকটা মুখ স্পষ্ট হয়ে
হাওয়ায় হাওয়ায় অবাধ্যতা রাখছে জারি।
তোমায় এত ভালবাসি- এই কথা কি
এমনভাবে হঠাৎ করে ভুলতে পারি?!

বছর খানেক আগের কোনো সন্ধ্যেবেলায়
তোমার কথায় মোমের মত পুড়ত মায়া,
যত্ন দিয়ে ভরিয়ে দিতে দুঃখ আমার
রূপকথাতে সোনালী রঙ ফেলত ছায়া।

একটা ভীষণ নরম মেয়ে আর কঠিন ছেলে
বানিয়েছিল ম্যাজিক জীবন গোপন ঘরে
এখন তাতে অযত্ন আর পলেস্তারা
সারাটাক্ষণ মেঘ জমা হয়, বৃষ্টি পড়ে...

মুঠোর ভেতর দুঃসাহসী ইচ্ছে ছাড়া
যত্নগুলোর হিসেব সে মেয়ে রাখত কবে!
বোকার মত সারা বিকেল থাকত বসে
ভাবত বোধহয়, 'ভালবাসাই সত্যি হবে'

গল্প কেন এমন ভাবেই ফুরোতে হয়!
সকল প্রিয় গাছ মুড়িয়ে যাবেই শেষে
পৃথিবীতে মানুষ মরে দুই উপায়ে-
এক অসুখে, তা না হলে ভালবেসে।