Tuesday 3 March 2020

আশ্চর্য একটা তারিখ- আলফ্রেড খোকন

আশ্চর্য একটা তারিখ চেয়ে আছে

গণিতের খাতার ভিতর

পুরনো একটা ফুলের পাপড়ি যেমন

প্রিয়তম বইয়ের পৃষ্ঠায় চাপা পড়ে বছর বছর

 

আশ্চর্য একটা তারিখ চেয়ে আছে

ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠার উপর

মোনালিসার মত অনেক বছর ধরে

চেয়ে আছে চোখের ভিতর

 

আশ্চর্য একটা মুখ এই দিকে চেয়ে আছে

শতাব্দী থেকে শতাব্দীর পর

পুরনো শেলফে যেমন দগদগে ক্ষত থাকে

যেমনটা থাকে তোমার মনের ভিতর।

ভালোবেসেছিলাম- আবদুল মান্নান সৈয়দ

ভালোবেসেছিলাম একজনকে।
তখন ছিল আমার একুশ বছর বয়েস।
পুরুষ হয়েও চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়েছিলাম।
আমার আবহমান কবিতার কেন্দ্র সে-ই।
তাকে ঘিরেই বিকশিত হয়েছে আমার অ-কবিতাও।

কিন্তু তারপরও এক-একজন নারীর প্রতি আতীব্র আকৃষ্ট হয়েছি।
তাহলে কি আমার সেই প্রথম ভালোবাসায় খাদ ছিল?
এই সেদিন আর-একজনকে দেখে আমূল নড়ে উঠলাম কেন?
তাহলে কি আমার সেই প্রথম প্রেমে শুদ্ধতা ছিল না?
কী জানি!

এবারের বইমেলায় প্রেমের কবিতার একটি বই
বের করবার জন্যে একজন প্রকাশক ধরেছে খুব।
ভাবছি, নবাগতাকে নিয়ে আর-কয়েকটি কবিতা লিখে
মেলায় তিন ফর্মার কবিতার বইটি বের করলে কেমন হয়!

আচ্ছা, বইয়ের ভেতরে কি একটু ছবিটবি দেওয়া উচিত হবে?

২১.১১.২০০৫

Monday 2 March 2020

দু'টি কবিতা- হুমায়ূন ফরিদী

১.
ভাঙা দরোজায় ভুল-কান পেতে থাকি
যদি কোনদিন দ্বিধা-থরো টোকা পড়ে
চৌকাঠ জুড়ে সারা বুক ফেলে রাখি
মৃদু পায় পায় ফিরে আসো যদি ঘরে

২.
জন্মের মত স্থাপত্য কিছু নেই
কিছু নেই প্রাপ্তি মৃত্যুর মত

(আল বেরুনী হল সাহিত্য সাময়িকী, ১৯৮০)

Tuesday 25 February 2020

পদ্মিনী- শঙ্খ ঘোষ

ভোরের আলোয় ফুটে উঠল চোখ
পদ্মপাতা ভেসে ভেসে পুরোনো ঘাটলায় এসে দাঁড়ায়।

তোমার সৌজন্য আমি ভুলে গেছি
তোমার দুর্জনতাও।

সেইসব স্মৃতিহীনতার দিকে সরে যেতে যেতে
বিশেষণহীনতার দিকে

মুছে যেতে যেতে
কিছুই না থাকত যদি কে তবে জানাত

তুমি শুধু তুমি
তোমার দু'চোখ শুধু নয়, সমস্ত শরীর পদ্মজাত ।

এ পৃথিবী জানে- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এ পৃথিবী জানে কারো কারো বুক শূন্য
এ পৃথিবী জানে কেউ ভ্রমরের খুনি
কেউ অবেলায় বিজনে হারায়, বিষণ্ণ বালিয়াড়ি
এ পৃথিবী জানে, মানুষে মানুষে
                    আজও চেনাশুনো হয়নি।

ভেবেছি- দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

ভেবেছি, এরপর থেকে যা কিছু লিখব, তাতে তোমার কথা থাকবে না

আমি বেসিনে দাঁড়িয়ে দেখব অবিরল জল ঝরছে
লাল নীল রুমালগুলো উড়িয়ে দেব হাওয়ায়
দেয়াল ঘড়ি থেকে নির্মমভাবে ব্যাটারি খুলে নেব আমি
সূর্যের দামামা বাজাব মধ্যরাতে

তোমার তীক্ষ্ণ জটিল চাউনির কথা, শান্ত পা ফেলে
চলে যাওয়ার কথা মনে এলে
আমি নির্ভুল এক ক্রিসমাস ট্রির ছবি এঁকে রাখব দেয়ালে

যখন ঝুম বৃষ্টি নামবে
সব কটি কাঁচ নামিয়ে আমি স্টিয়রিং-এর ওপর
ঘুমিয়ে পড়ব ।

Sunday 23 February 2020

হরিণ- আবুল হাসান

‘ তুমি পর্বতের পাশে বসে আছো:
তােমাকে পর্বত থেকে আরাে যেনাে উঁচু মনে হয়,
তুমি মেঘে উড়ে যাও, তােমাকে উড়িয়ে
দ্রুত বাতাস বইতে থাকে লােকালয়ে, তুমি স্তনের কাছে কোমল হরিণ পােষাে,
সে-হরিণ একটি হৃদয়।'

লীন- কুশল ইশতিয়াক

যে জীবন চলে গেছে
দূর এক মাঘে
লাল মেঘ বাঁশরীতে
পড়ে ছিল ছায়া
রেডিওতে কলতান
সুরে সুরে বাজে
ভোরবেলা ডোবাজলে
বইছিল হাওয়া
কোন ক্ষণে এসেছিলে?
কবে চলে গেলে?
পাতাটি লেখার কথা
ছিল এক শীতে
ফিরিয়েছো মুখ কেন?
কোন অভিমানে?
বাতাসের আলাপন
পালকেরা জানে
মুগ্ধতা ঢেকে রাখি
গাঢ় হল স্মৃতি
ঝরণা কলমে কবে
লেখা এক চিঠি
স্মৃতির ভিতরে তবু
উড়ে চলে ছাই
যার পাশে শুয়েছিলে
তাকে ছোঁও নাই

প্রণয়কলঙ্কের পদ্য- আবু হাসান শাহরিয়ার

কলঙ্ক কি চাঁদের গায়েও নেই?
জোছনা তবু অনির্বচনীয়
প্রেমের মড়া বাঁচে কলঙ্কেই

আকাশ বোঝে, ব্রহ্মাণ্ডের স্বাদ
বোকার স্বর্গ মহার্ঘ হয় প্রেমে
বৃষ্টি মানে, মেঘের অনুবাদ

প্রেমের পাগল ঢেঁকিতে মন ভানে
উতলা মেঘ আষাঢ়-শ্রাবণ ভুলে
ফুল ফোটাতে এসেছে অঘ্রানে

২৯ কার্তিক, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
১৪ নভেম্বর, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ

যে গোলাপ অনন্ত সুন্দর- আবু হাসান শাহরিয়ার

একটি আশ্চর্য সকাল হাতে দাঁড়াল সুন্দর
একটি আশ্চর্য প্রান্তর চিরে তৈরি হল গোলাপ সড়ক
একটি আশ্চর্য চিবুক বেয়ে নেমে এল চুম্বনের ধারা
একটি আশ্চর্য হৃদয় খুঁড়ে লেখা হল সহস্র হৃদয়
একটি বিমর্ষ জীবন ফুঁড়ে জন্ম নিল আশ্চর্য জীবন

আমি সেই আশ্চর্যের উত্তরাধিকার। "একমাত্র" এই গাড় উচ্চারণে
কে আমাকে ডাকে? আমি তার পায়ের নূপুর। সে চলুক গোলাপপথে;

আমি তার অনুপ্রাস হব। আজীবন... আজীবন...

যতদিন বাঁচি তাকে সঙ্গ দেব; যেন তাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি।

অন্ধ জেনেও তুমি চোখ মেলে তাকিয়েছ; হৃদয়দর্শন দেব
তোমাকেই, জেনো। এই অন্ধ চিত্রকর,  জেনে রাখো, আঁকবে তোমারই ছবি;
মুখচ্ছবি গোলাপেরই। ডোবার সমগ্র থেকে সমুদ্রের খন্ড যদি

সে আর আমি- শ্রীজাত

সে আর আমি- শ্রীজাত

তার যেরকম তছনছিয়া স্বভাব
ঝড়ের পিঠে সওয়ার হয়ে আসে,

আমিও তেমন অজ পাড়াগাঁর নবাব
সন্ধেবেলা মুক্তো ছড়াই ঘাসে

তার যেরকম বিরুদ্ধতার মেজাজ
হঠাত্ করে উল্টোদিকে ছোটে

আমিও তেমন আগুনজলে ভেজা
সময় বুঝে ঠোঁট বসাব ঠোঁটে

তার যেরকম উল্টোপাল্টা খুশি
হালকা রঙের বাতাসে চুল বাঁধে

আমিও তেমন সিঁদুরে মেঘ পুষি
কেমন একটা গন্ধ ছড়ায় ছাদে ..

তার যেরকম মন খারাপের বাতিক
সন্ধে হলে ভাল্লাগে না কিছু,

আমিও তেমন জলের ধারে হাঁটি
বুঝতে পারি আকাশ কত নিচু

তার যেরকম জাপটে ধরে সোহাগ
আমায় ছাড়া চলে না একদিনও,

আমিও তেমন দু-চার লাইন দোহা
লেখার ওপর ছড়িয়ে থাকা তৃণ …..