Thursday 2 April 2020

সৃজা ২

চাঁদের আলোয় আকাশ ধুয়ে গেছে
বিচ্ছেদে আজ চোখ পড়েনি তাই
কোথাও জানি আমার ঘরও আছে
আজ সেখানে পৌঁছে যেতে চাই।

মুঠোয় আবির ভরেই রাখা থাকে
রঙ খেলাতে বিপক্ষ হয় নাকি?
কে আমাকে ছাড়ল ভুলে গিয়ে
কে আমাকে চাইল মনে রাখি...

ঘুমের ভেতর স্বপ্ন জড়ো করি
আদর চাদর মন শরীরের পাশে
এমন দিনে শান্ত মেয়ের কোলে
ছাদের মায়ায় জ্যোৎস্না নেমে আসে

কোন তারাটা আমার কাছাকাছি
না ডাক পেয়েও পড়তে পারে খসে!
ডাকলে সাড়া দেবার তো কেউ নেই
তাই সারারাত চাঁদের কাছে বসে

পায়ের কাছে অল্প ধূলোর রেশ
ঠান্ডা হাওয়ায় শিরশিরে গান চালু
যাওয়ার কথা কোথায়?- জানি না তো!
অসার হয়ে আসছে হাতের তালু

এখন এ চাঁদ ধরব কেমন করে?
তার চেয়ে বরং এ বিষ গায়ে মাখি
যে আমাকে সামলাতে আসবেই-
আমিই তো তার বসন্ত হই, নাকি?

তোমার সাথে কোথায় প্রথম দেখা?
তোমায় আমি কেমন করে চিনি!
অভিমানের চরকা কাটে সুতো
বাসলে ভাল, সবাই কলঙ্কিনী

ফেরার হবার রাস্তা কোথায় বলো? 
সারাটা রাত জেগেই আছি তবে...
চাঁদের আলোয় আকাশ ধুয়ে গেছে
তোমার কাছেও আমায় যেতে হবে

(সৃজা ঘোষ)

পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে ফুটে উঠছে আলো
ঘুম ভাঙছে মফঃস্বলের, ঘুম ভাঙছে পাড়ার
আয়না জুড়ে অন্যরকম প্রতিবিম্ব, ঢালও
অসম্ভবের দরজা খুলে ঢুকে পড়ল কারা!

বসন্তের কারুকার্য রক্তে ফুটে ওঠে
চতুর্দিকে অসুখ বিসুখ, দীর্ঘ মহামারি
ভোরের আগেই ঠান্ডা চোখে কৃষ্ণচূড়া ফোটে
বিপদ এখন আরামপ্রদই, হাওয়ায় নেশা ভারি

অনন্ত এই ভুবনডাঙা শান্ত হলে গানে
মৃত গাছের কোটর থেকেই কোকিল যাবে চুরি
অন্ধ হয়েও যেকটা লোক রঙের হদিশ জানে
তাদের কাছে সব আগুনই - ব্যার্থ বাহাদুরি...

কয়েক জন্ম পেছন দিকে ছুটতে হবে বুঝি
অনুসঙ্গ ভাল জিনিস, চিনতে শেখায় জল।
আয়না ভেঙে বসন্তদিন দাঁড়ায় সোজাসুজি
ঘুমিয়ে পড়ে দূরের পাড়া, কাছের মফঃস্বল

আলবিদা- সৃজা ঘোষ

এবার দেখো সত্যি সত্যি সেরে উঠব আমি
ছুঁড়ে ফেলব কাঁচের শিশি, সব নিয়মের ঘটা
অসুখ বুকে নিয়েও যারা স্বপ্ন দেখতে পারে
তাদের কাছে দুঃখ থিতু, বসন্ত রগচটা।

শরীর পরীক্ষা করে হাতিঘোড়াই হবে
অনেক কাল ভোগা হল, এবার ছাড়ান দাও
মুঠো ভেঙে সময় কেমন বেড়িয়ে যাচ্ছে, দ্যাখো
এর মধ্যেই মরব নাকি!? যাব না এক পা-ও?

ক্ষত সারতে অনেক বাকি, তবুও য'দিন আছি
চতুর্দিকে ছড়িয়ে যাবো হাসির মহামারি...
আমরা যারা অবহেলাও হজম করে নিলাম,
বিদায় নেবার আগে তারাই বাঁচিয়ে যেতে পারি।

কিন্তু এসব বোঝার মত ধৈর্য নেই কারোর
হয়ত প্রিয় সমুদ্রতেই মিথ্যে জাহাজ ভাসে
কাছের লোকের সঙ্গে এসব যুদ্ধ করতে গেলে
অস্ত্র ছোঁড়ার আগেই দু চোখ ঝাপসা হয়ে আসে

ভালবাসতে সাহস লাগে, আমি দুঃসাহসী
আরোগ্য আশাতীত, অভিজ্ঞতাও যম।
মরতে মরতে তবুও যা যা স্বপ্ন রেখে যাবো,
তাতেই জেনো সফল হবে প্রেম আর পরিশ্রম।

ভয় পেও না বন্ধুমহল, ভয় পেও না পাড়া
চোখের জল বহুমূল্য, খরচ করতে নেই
আমরা যারা কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম
এখন তারা হাসতে হাসতে যাচ্ছি এভাবেই..

চাইছি কৃষ্ণচূড়া হতে- সৃজা ঘোষ

দুর্বল নই তাও প্রবল ক্লান্ত হয়ে আছি
আক্রমণের চোটে বিশ্বাস ভাসিয়েছি স্রোতে
ক্রমাগত সব হারাবে এ নিয়তি মানবার পরও
তোমাকে দেখেছি যত, চেয়েছি কৃষ্ণচূড়া হতে।

আঘাতে সবটা গেছে। প্রিয় আলো, মায়া, ঘুম, হাসি
অন্ধকারের পরে আলো দেখে ভয় পায় চোখ।
যে মানুষ প্রতিবার ভালবেসে হেরে যাচ্ছিল
মনে মনে সেই চায়- সকলের ঘর সুখী হোক...

বাইরে অনেক খ্যাতি। ভেতরে তো তোলপাড় ক্ষত
কাছে আসবার দাবি বহু জন বহু ভাবে করে
ভালমানুষির দায়- ফেরাতে পারিনি কোনোদিনই
অতএব ব্যবহার, ছুঁড়ে ফেলা ঠিক তারপরে৷

এসবের মাঝখানে হুট করে কেউ কেউ আসে
ভীতু মনটিকে কাছে নিয়ে বসে নিভৃতের জনই...
যাদের বসন্তদিন বহু আগে চুরি হয়েছিল
তাদের ব্যথাকে নিয়ে কোনোদিন কেউই ভাবো নি।

তুমি ভাবো, এটুকুই আজকের আঁধারে জরুরি
নির্বাসনের পরে কোনও দিন যদি ফেরা হয়,
আমার যেটুকু আলো, যতটুকু খ্যাতি তা তোমারই।
কেননা তুমিই বলো- দুঃখটা বড় কথা নয়

অতএব অভিমান ভেঙে গেল হাওয়াতে হাওয়াতে
হয়ত ক্লান্ত তবে এবার শক্ত হবো, দেখো...
যারা চলে যেতে চায়, তাদের যাবারই কথা ছিল
তোমাকে ভরসা করি। তুমি শুধু পাশটাতে থেকো।

আর যদি না চাও তো- বলে যেও, ব্যাস এতটুকু।
আটকানো যায় না যে শেখা হয়ে গেছে এ কথাটি...
একাই পারতে হয় তবু কেউ সাথে রয়ে গেলে
আমরা বাকিটা পথ তাকেই সঙ্গে নিয়ে হাঁটি।

ততটা শক্ত নই যতটা বাইরে থেকে লাগে...
আক্রমণের দিনে বিশ্বাস বয়ে যায় স্রোতে
ক্রমাগত সব হারাবে এ নিয়তি মানবার পরও
তোমাকে দেখছি যত, চাইছি কৃষ্ণচূড়া হতে

তবুও আশা থাকে- সৃজা ঘোষ

কবিতার পায়ে ছায়া রাখে রূপকথা
আদরের ফুল কাঁটায় পা ফেলে বাড়ে
ভালবাসবার মানুষ এখন বিরল
চারিদিকে শুধু দানব নজর কাড়ে...

মিথ্যের কাছে আদরের পোয়াবারো
শেকড়েও বিষ চোখের আড়ালে ঢালি
এখন রাত্রি বলতে- না আসা ঘুম
কোনো কোনোদিন জোটে চাঁদ, একফালি।

ঘরের পর্দা ব্যথা লেগে বেশ ওড়ে
ছায়াঘেরা বাড়ি- শীতল, যেমন হয়
আমরা তো সেই ছোটো থেকে শুনে গেছি
যন্ত্রণা হলে, সহ্য করতে হয়।

তাই হাসিমুখ পরিজন দিয়ে ঘেরা
সংসার আর হিসেবের খড়কুটো
মাঝরাত্তিরে পাশ ফিরে কেউ নেই
প্রেমের অভাবে ভরে যায় সারা উঠোন!

সে উঠোনে হাঁটি পায়ে পায়ে স্বপ্নতে
নুন আনতে গেলে পান্তা ফুরিয়ে যায়
ভাল থাকবার চেষ্টা করতে গেলে
যতটা শক্তি, সবটা ফুরিয়ে যায়

তবু আশা থাকে একদিন পাশ ফিরে
অভাব না আর, মানুষ দেখব পাশে
চেনা ভিড় থেকে সে আসবে হুট করে
অনটনে ভরা এ মরা ফাগুন মাসে!

সুন্দর- বদরে মুনীর

শত শত সুন্দর মুখ দেখে আমাদের দিন চলে গেছে
শত শত সুন্দর মানুষ দেখে জীবনের বারোটা বেজেছে

বেলুনের বাতাস ফুরালে তবু থেকে যায় ছেঁড়া ছেঁড়া দাগ
যে-রকম জননী জঠরে থাকে ধারণের স্মৃতিরা সজাগ

আর কোন পাওনা নাই কারও কাছে, মগজে কোথাও নাই ঘোর
যে-যার বেতনে চলি, পাল-পাল, একা একা জঘন্য সুন্দর

Wednesday 1 April 2020

Saturday 28 March 2020

বিরহ- শঙ্খ ঘোষ

গভীর ঘুমের মধ্যে
হাসিমুখে সর্বনাশ এসে দাঁড়ায়
তার আদরে আদরে ভরে যেতে থাকে আমার অপাবৃত শরীর

ক্ষতগুলি চেনা যায় জেগে উঠবার বহু পরে
ততক্ষণে, সেও কাছে নেই

Friday 27 March 2020

তবু এসো- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

কোথাও কিছু পুড়ছে, তার গন্ধ পাই,
পুরনো ভালবাসা
কোথাও কিছু মুচড়ে ওঠে যন্ত্রণায়
পুরনো ভালবাসা
কে যেন আজ দাঁড়িয়ে আছে কুয়োতলায়
আমার ভালবাসা
শব্দ করে জানলা-দরজা খুলে দিয়েছি
এখন তুমি এসো
আকাশটাকে ঘরের মধ্যে টেনে দিয়েছি
এখন তুমি এসো
যদিও ইতিমধ্যে নাম ভুলে গিয়েছি
তবুও তুমি এসো

পূর্বরাগ- রজতশুভ্র মজুমদার

আকাশ, আমার ক্লান্তি কেন হয়
আকাশ আমার ফুরিয়ে গেল কথা
আমাকে আজ সূর্য করে দাও
দেখুক রাতের ক্লিন্ন নীরবতা

আকাশ, আমার ইচ্ছে-নদী স্থির
আকাশ, আমি কিচ্ছু যে পারিনা
আকাশ, তুমি আদর লিখে দাও
আকাশ, আমি এমনি লজ্জাহীনা

আকাশ, আমার অসাবধানি চলা
মৃত্যু আমার বিপন্নতায় বাজে
আকাশ, আমার সত্যি ভালবাসা
একলা ঘরে বাঁধতে পারিনা যে।

এখন-তারাপদ রায়

মনে নেই,
আমি নিজে ফিরে গিয়েছিলাম, অথবা
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম,
এখন
আর কিছু মনে নেই, তবু দুঃখ হয়
এখন, যখন একেকদিন খুব বৃষ্টি নেমে আসে
এখন, যখন একেকদিন খুব শীতের বাতাস
শুধু পাতা উড়িয়ে উড়িয়ে
আমার চারদিকে বৃষ্টি ও ঠান্ডা বাতাস ঘুরে ঘুরে;
এমন কি যখন সেই পুরনো কালের সাদা রোদ
হঠাত্‍ ভোরবেলা ঘর ভাসিয়ে ছাপিয়ে,
‘কি ব্যাপার এবার কোথাও যাবে না?’

এখন আর কোনোখানে যাওয়া নেই,
এখন কেবল ঠান্ডা বাতাস, এখন বৃষ্টি, জল
আমার চারপাশ ঘিরে পাতা ওড়ে আর জল পড়ে।

এখন তোমার জন্য দুঃখ হয়,
এখন আমার জন্য দুঃখ হয়,
আমি নিজে ফিরে গিয়েছিলাম অথবা
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, এখন দুঃখ হয় ।

Saturday 7 March 2020

Thursday 5 March 2020

মুক্তি- তসলিমা নাসরিন

যদি ভুলে যাবার হয়, ভুলে যাও।

দূরে বসে বসে মোবাইলে, ইমেইলে  হঠাৎ হঠাৎ  জ্বালিয়ো না,

দূরে বসে বসে নীরবতার বরফ  ছুড়ে ছুড়ে  এভাবে বিরক্তও করো না।

ভুলে গেলে এইটুকু অন্তত বুঝবো ভুলে গেছো,

ভুলে গেলে পা কামড়ে রাখা জুতোগুলো  খুলে একটু খালি পায়ে হাঁটবো,

ভুলে গেলে  অপেক্ষার কাপড়চোপড় খুলে  একটু স্নান  করবো,

ভুলে গেলে   পুরোনো গানগুলো  আবার বাজাবো,

ভুলে গেলে সবগুলো জানালা খুলে একটু এলোমেলো শোবো।

রোদ  বা জ্যোৎস্না এসে শরীরময় লুকোচুরি খেলে খেলুক,  আমি না হয় ঘুমোবো,
ঘুমোবো ঘুমোবো করেও  নিশ্চিন্তের একটুখানি  ঘুম ঘুমোতে পারিনা কত দীর্ঘদিন!

কেবল অপেক্ষায় গেছে। না ঘুমিয়ে গেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে গেছে।

কেউ আমাকে মনে রাখছে, কেউ আমাকে মনে মনে খুব চাইছে, সমস্তটা চাইছে,

কেউ দিনে রাতে যে কোনও সময় দরজায়  কড়া নাড়বে,

সামনে তখন  দাঁড়াতে হবে নিখুঁত, যেন চুল, যেন মুখ, যেন চোখ, ঠোঁট,

যেন বুক, চিবুক এইমাত্র জন্মেছে,  কোথাও   ভাঙেনি, আঁচড়  লাগেনি, ধুলোবালি ছোঁয়নি।

হাসতে হবে রূপকথার রাজকন্যার মতো,

তার ক্ষিধে পায় যদি,  চায়ের তৃষ্ণা  পায় যদি!

সবকিছু হাতের কাছে রাখতে হবে  নিখুঁত!

ভালোবাসতে হবে নিখুঁত!

নিমগ্ন হতে হবে নিখুঁত!

ক্ষুদ্র হতে হবে নিখুঁত!

দুঃস্বপ্নকে কত কাল সুখ নামে ডেকে ডেকে নিজেকে ভুলিয়েছি!
ভুলে যেতে হলে ভুলে যাও, বাঁচি।

যত মনে রাখবে, যত চাইবে আমাকে, যত কাছে আসবে,

যত বলবে ভালোবাসো, তত আমি বন্দি হতে থাকবো তোমার  হৃদয়ে, তোমার জালে,

তোমার পায়ের তলায়, তোমার হাতের মুঠোয়, তোমার দশনখে।

ভুলে যাও, মুখের রংচংগুলো ধুয়ে একটু হালকা হই, একটুখানি আমি হই।

দৃষ্টিপাত-তসলিমা নাসরিন

নির্নিমেষ তাকিয়ে আছি সুন্দরের দিকে
কার এমন স্পর্ধা আছে ফিরিয়ে নেয় চোখ?

চোখের কাছে গলে যাচ্ছে পাথর সমুদয়
হেরে যাচ্ছে জুয়োয় বসে দক্ষ জুয়োচোর।
দৃষ্টি যদি লক্ষ্যভেদী হয়
কার এমন সাধ্য আছে ফিরিয়ে নেয় মন?

নির্নিমেষ তাকিয়ে আছি তোমার দিকে শুধু-
চারিদিকে যে ঊষর মরু ধু ধু,
তোমার মতো নস্যি ছেলে
কোথায় যাবে চোখের কাছে না হয়ে বশীভূত!