Saturday 4 April 2020

মানুষের মত- সৃজা ঘোষ

একটা খুশি আমার হয়ে থাকুক
একটা খুশি রাখুক তোমার মন;
একটা খুশি আনুক কোনো হাওয়া
যুদ্ধ মুকুব থাকুক ততক্ষণ।

একটু আলো তোমার নিজের হোক
আর একটু, রোজ আমায় ফেরাক ঘরে
মৃত্যু গুলোর আগেই যেন রোজ
আমরা বুঝি- জীবন পরষ্পরের।

তোমার ভাঙুক সমস্ত ভয়, রাগ
আমিও ঘৃণা এই ফেললাম ছুঁড়ে,
সকল পথ আজ আবার খুলে যাক
তোমার এবং আমার হৃদয়পুরে...

একটা হাসি তোমার মুখে থাক
আর একটা ছাপ ফেলুক আমার ঠোঁটে,
এই পৃথিবীর সকল অভিমান
আবার যেন গোলাপ হয়ে ফোটে।

বাঘিনী- হুমায়ুন আজাদ

বাঘিনীর মতো ওৎ পেতে আছে চাঁদ
ঝাউয়ের মসৃণ ডালে বটের পাতায়/ধ'সে পড়া দালানের ছাদে/
রাস্তায়/ ধাবমান টেলিফোনের তারে/ডাস্টবিনে/
জ্বলজ্বলে নর্দমায়। ব্যগ্র হয়ে ধরা দেয়
ফড়িং/হরিণ/সাপ/মাকড়শা/কাঠবিড়ালি/
নিঅন পেরিয়ে ওড়ে চন্দ্রগ্রস্ত পোকা। এমন ছোবল দিতে জানে
লক্ষবর্ষ পুরাতন নির্মম বাঘিনী।

আমাকে কি ডাক দিলে মিথ্যাভাষী হে বাঘিনী
এ-নিষ্ঠুর চৈতরাতে? মিথ্যে অভিনন্দন বিছিয়ে দিলে
মুমূর্ষু পাতার পংক্তিতে?
তুমি নেই তাই প্রতারণা করার মতোও
                          কেউ নেই এই শূন্য প্রান্তরে।
তোমাকে ধিক্কার দিই/ঘৃণা করি/চড়কষি/
তবু কী ক'রে ভুলি হে বাঘিনী চাঁদ
একদা ছয়ঘন্টা শান্তি দিয়েছিলো সহপাঠী নীলিমা রহমান?

সমুদ্রস্নান- সৃজা ঘোষ

এখনও তোমার খেলাঘরে
আমার সমুদ্র ভেঙে পড়ে।
গড়ে ওঠে বিষাদের বাড়ি
কান্নার গাছ সারি সারি...

এখনো তোমার প্রিয় চাঁদে
আমার রাতেরা একা কাঁদে,
বালি ধরে হেঁটে যাওয়া সার
কোথাও যাওয়ার নেই আর।

এখনো তোমার দেওয়া গানে
শুয়ে থাকি একা- অভিমানে।
এত ব্যথা, জ্বর এসে যায়...
বেঁচে থাকা আজও মৃতপ্রায়।

এখনো তোমার দেওয়া ঘা তে
চোরা বালি খুঁজে ফিরি যাতে
অকপটে ডুবে যাওয়া সোজা
শেষ হলে তোমার হাত খোঁজা।

বৃষ্টিতে মেয়েরা যেমন- সৃজা ঘোষ

একটা মেয়ে মেঘের মুখোমুখি
অন্ধকারে জড়িয়ে গেছে পা,
একটা মেয়ে আকাশ দেখেই সুখী
সেই মেয়েটা বৃষ্টি বোঝে না।

একটা মেয়ের ঝাপসা হাওয়ার চোখ
একটা মেয়ে তাকাচ্ছে না মোটে
একটা মেয়ে নিথর শ্রাবণ মাসে
কাঁদতে গিয়েই বৃষ্টি হয়ে ওঠে৷

একটা মেয়ে বিদ্যুতে ঝলসানো
ভালবেসেই হারিয়ে ফেলে চোখ।
একটা মেয়ে জানলা খুলে দিয়ে
চাইছে বোধহয় একটু আলো হোক

একটা মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে কবেই
ছেড়ে আসার বিভৎস সন্ধ্যায়;
একটা মেয়ে সোঁদা মাটির মত
সেই মেয়েটা বিষের অপেক্ষায়...

সমস্ত মেয়ে বৃষ্টি হতে চায়
একটুখানি বৃষ্টি হতে চায়...

অক্ষমতা- সৃজা ঘোষ

বিস্তর পুড়ে গেছ জানি।
কাঁটায় কাঁটায় শুধু
দুঃখকে গাঢ় করে আনি...

ভরসারা ঢেকে গেছে ঘায়ে,
পারিনি রাখতে মুখ
রক্ত ঝরেছে পায়ে পায়ে।

সামনে দাঁড়িয়ে ওরা
অসম্মানের ঢেউ-এ
ভেঙে গেছে আগাগোড়া!

পারি নি গুঁড়িয়ে দিতে,
বিশ্বাসঘাতকেরা
এসেছে অতর্কিতে।

যখনই পেয়েছি ভয়-
সততার অবয়ব
দেখেছি কি দৃঢ় হয়!

ক্ষতর মধ্যে তাই
যতদূর পারি আমি
চেঁচিয়ে বলতে চাই

যতদিন বেঁচে আছি,
থেকে যেতে চাই শুধু
শেষ আলোর কাছাকাছি।

মাধবীকে- দীপক রায়

তিরিশ বছর আগের চিঠিগুলি রেখে দিয়ে কী আনন্দ পাও তুমি!
মাধবী, তোমার নামটাই কীরকম ম্লান হয়ে গেছে।

এখন কি মেয়েদের গীতা বা দুর্গা নাম রাখা যায়?
কতবার বলেছি তোমাকে, চিঠিগুলো নষ্ট করে দাও।
পুড়িয়ে ফেলতে না পার, ভাসিয়ে দাও অলকানন্দায়।

শোনো মাধবী, বদলে যাচ্ছে সবকিছু, নিজেকে বদলে নাও তুমিও।
তোমার নাম বদল করতে বলছি না।
তোমার লম্বা চুল ছেঁটে ফেলতে বলছি না।
শাড়ি বদলে ছোটো পোশাক--তাও বলছি না।
গান শুনতে ভালোবাস তুমি, তোমাকে গীতা ঘটক কিনে দেব।
আসলে আমি নিজেও জানি না, কী বলব তোমাকে?

ওই চিঠিগুলো নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওই চিঠিগুলোতে
আমার তাপউত্তাপ আমার লজ্জা আমার দুপুর বিকেল
চিঠিগুলো নষ্ট করে দাও মাধবী।

হ্যাঁ গৌরী, তোমাকেই ভালবাসি- শামসুর রাহমান

হ্যাঁ গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
তোমাকে ভালো না বেসে পারা যায় না,
তোমাকে ভালো না বেসে বাঁচা অসম্ভব।
আমার প্রতি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে
তোমার বসতি।
কী ক’রে আমি পথ হাঁটবো, আকাশের দিকে
দৃষ্টি মেলে দেবো সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত দেখার জন্যে,
কী ক’রে আমি আঁজলায় ভরে নেবো শান্তির জলধারা,
কী ক’রে আমি কবিতা লিখবো
তোমাকে ভালো না বেসে?
হ্যাঁ, গৌরী, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন
অচল মুদ্রা বৈ তো নয়।
হ্যাঁ, গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
সুন্দরবনের আরণ্যক শোভার শপথ,
গারো পাহাড়ের আর্ত নিস্তব্ধতার শপথ,
উত্তরবঙ্গের রাঙামাটির পথের শপথ,
পার্বত্য চট্রগ্রামের পাকদন্ডি, ঝর্ণা আর
পাহাড়ি যুবার অপার বেদনার শপথ,
মেঘনার অজস্র ঢেউয়ের শপথ,
পদ্মার ঝলসে ওঠা চকচকে ইলিশের শপথ,
পরিযায়ী পাখিদের অনলস রঙিন ডানার শপথ,
তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

হ্যাঁ গৌরী, তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
মসজিদের কবুতরময় গম্বুজ আর উঁচু মিনারের শপথ,
মন্দিরের সন্ধ্যাপ্রদীপ আর ঘন্টাধ্বনির শপথ,
গির্জার আইকনের, অর্গানের প্রার্থনা-মন্দ্রিত সঙ্গীতের শপথ,
বৌদ্ধ বিহারের নিরলঙ্কার সৌম্য কান্তির শপথ,
তোমাকে, হ্যাঁ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

(কাব্যগ্রন্থ - তুমিই নিঃশ্বাস তুমিই হৃৎস্পন্দন )

সাহসী- সৃজা ঘোষ

এখনো গাছের গায়ে জল লেগে আছে
কাগজের কেরামতি, নৌকোর ভয়...
হেরে যাওয়া চিরকালই যুদ্ধের কাছে
স্বাভাবিক, তবে 'মাঠ ছেড়ে যাওয়া' নয়।

হাওয়া জানে হিসেবের মানে নেই কোনো,
ঝড় এলে তাকে বয়ে যেতে দেওয়া শ্রেয়।
তুমি কেন একা বসে দুঃখকে গোণো?
যখন যা ঘটে, জেনো- তাই-ই উপাদেয়

সম্ভবনার ফুল ফুটে ওঠে ঘাসে
আমাদের যাতায়াতই ভুলে যায় দেখা;
ব্যথারা বিবর্ধিত হয় আর হাসে
কেন চুপ করে বাঁচি? কেন একা একা!

কত লোক আগুনকে ভালবেসে আজও
মাঝরাতে পুড়ে গিয়ে হা হা করে হাসে
এতসব পার করে আসা কিছু কাজও
মুহূর্তে ডুবে যায় বাজি রেখে তাসে।

ভুল জুড়ে থাকা এই দাগ উদ্বায়ী
ছাতা নিয়ে দুর্যোগে রাস্তায় নামা,
মানুষ তো একই থাকে- সাহসী ও স্থায়ী
শুধু কিছু বর্ষায় ভিজে যায় জামা।

তবু বর্ষাতে আসে চেনা গন্ধেরা
দেখি ঝড় জল ভয়াবহ নয় মোটে
ভেজবার কারসাজি জানা নাবিকেরা
মেঘ টেঘ পার করে আলো হয়ে ওঠে।

যাও, পত্রদূত- রফিক আজাদ

যাও, পত্রদূত, বোলো তাকে কানে-কানে, মৃদু স্বরে,
সলজ্জ ভাষায় এই বার্তা : "কোমল পাথর, তুমি
সূর্যাস্তের লাল আভা জড়িয়ে রয়েছো বরতনু;
প্রকৃতি জানে না নিজে কতোটা সুন্দর বনভূমি।"

যাও, বোলো তার কানে ভ্রমরসদৃশ গুঞ্জরণে,
চোখের প্রশংসা কোরো, বোলো তাকে 'সুঠাম সুন্দর
শরীরের প্রতি বাঁকে তার মরণ লুকিয়ে আছে',
অন্য কেউ নয়, সে আমার আকন্ঠ তৃষ্ণার জল :
চুলের প্রশংসা কোরো, তার গুরু নিতম্ব ও বুক
সব কিছু খুব ভালো; উপরন্তু, হাসিটি মধুর।

যাও, পত্রদূত, বোলো, "হে মাধবী, কোমল পাথর,
দাঁড়াও সহাস্য মুখে সুদূর মধুর মফঃস্বলে।"
বিনম্র ভাষায় বোলো, "উপস্থিতি খুবই তো উজ্জ্বল,
যুক্তিহীন অন্ধ এক আবেগের মধ্যে, বেড়াজালে,
আবদ্ধ হয়েছো, উভয়েই, পরস্পর নুয়ে আছো।

একটি নদীর দিকে"--বোলো তাকে, "অচ্ছেদ্য বন্ধন
ছিঁড়ে ফেলা সহজ তো নয় মোটে, কোমল পাথর!"

যাও, পত্রদূত, বোলো--ভালোবাসা গ্রীষ্মের দুপুর?
নীরব দৃষ্টির ভাষা-বিনিময়--দিগন্ত সুদূর? ।

জ্বর- সৃজা ঘোষ

আঘাতে স্তব্ধ হই, অভিমানে সোলো।
সেইবার ছেড়ে গেলে, ধুম জ্বর হল

সারারাত হুঁশ নেই, মুখে তবু সাড়
বিড়বিড় করে গেছি- নামটুকু তার।

এইভাবে একটানা বেশ কিছু দিন
তুমি নেই কোত্থাও; আছে- জ্বর, ঋণ

সেদিন একটু ভাল। চোখ খোলা যায়।
রোদ এসে পড়েছিল মৃত জানালায়

শুয়ে শুয়ে শুনলাম বাইরের ঘরে
সারাদিন ভয়ে কারা প্রার্থনা করে।

নীচু হয়ে আসে চোখ, বারোয়ারি ঘুমে
তোমাকে দেখেছি কবে? কোন মরশুমে?

তুমি কবে এসেছিলে? কতটুকু ছিলে?
জ্বর স্মৃতি গ্রাস করে নেয় তিলে তিলে

চোখের কাছেই জল, তবু খুঁজি হাতে
গলাও শুকিয়ে আসে স্থির পিপাসাতে।

কান বেয়ে গান ছোটে, শিরা ভেসে যায়
জ্বর ঠোঁটে ঠায় বসে থাকি বিছানায়।

বাইরে তো কত লোক। কত শোক আরও
আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারো?

কবিতা শান্ত হয়ে বসে এক কোণে
শব্দের ঘেরাটোপে বাস্তব শোনে।

দিন কেটে যায় শুধু। সেরে উঠি কই!
আমার মতন তারও জ্বর নিশ্চই?

উপসংহার- সৃজা ঘোষ

ঝিম ধরে আসে ভেজা তারাটার গা-তে
আমি ভাবতাম এমনই একটা রাতে
তাহার সঙ্গে পালাবো অনেক দূরে।

ছাদ ভেঙে দেবে আকাশের কারসাজি,
দু চোখ জানবে ঠিক কত কাছাকাছি
বর্ষা বুনছে মেঘমল্লার জুড়ে...

স্থবির পারদ কার কাছে নেমে যেত
কে কপাল ছুঁয়ে জ্বরের আভাস পেত
জন্মের দাগে ঢেকে দিত ভালবাসা?

আদরে মোছাতো অভিমানীটির দেহ
জানত কাঁদলে কোন পথে পরিমেয়
খাতার পাতায় গাঢ় হয়ে ওঠে ভাষা!

তার কথা আজ একবার বলে যাও-
কেন তাকে আর পাইনিকো কোত্থাও,
কার মৃত্যুতে বাজছে উলুধ্বনি?

গাছেদের মত রুমাল ভিজছে ক্রমে
হৃদয়ের গায়ে কালসিটে আছে জমে
পারলে তাহাকে নিয়ে এসো এক্ষুণি।

বিদ্রোহ- সৃজা ঘোষ

ব্যথারা গৃহপালিত, রাস্তায় বের হয় দেহ...
প্রেমের অশ্রু জানে- অবহেলা কত পরিমেয়?
আঘাত বাড়তে থাকে, যত্নের ছায়া ভোলে গাছই!
মানুষ ছিটকে যায়। মানুষই তো আসে কাছাকাছি।

রোজ কত খুন হয়, আদালত বসে না এখানে
সেই চোখ বড় সুখী, যে সহজে ভুলে যেতে জানে।
লেগে থাকে মায়া আর অভিমানে ঠাসা বিদ্বেষও
ছাই হয়ে যাওয়া দিনে জোছনাকে তুমি ভালবেসো

সহজাত ঘুম আসে অভাবের ক্ষত সেরে গেলে
যে গোপনে ভালবাসে, প্রকাশ্যে সেই যায় ফেলে।
পরাধীন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে গাঢ় অভিমান
আদর বৃহত্তর, তাকে ছেয়ে ফেলে পিছুটান...

দরদিয়া বসে থাকে সারারাত ঘরের উঠোনে
কাঁধের পাশেই কাঁধ, তবু তারা কই কথা শোনে?
উলুধ্বনিতে গান ফোটায় না আর কোনো খই
থেকে থেকে বলে উঠি- আমি আর তার কেউ নই।

আলো ফোটে বারবার, যন্ত্রণা সয়ে যায় ঘা-এ
স্নান সেরে সব্বাই খেতে আসি জল পায়ে পায়ে
চোখের ভেতর শেষে ঘুম আসে- অভিযোগহীনা
আমার এ ব্যথায় আর তোমাকেও কারণ মানিনা।

সৃজা ৭

শেষের আগে কয়েকটা মুখ স্পষ্ট হয়ে
হাওয়ায় হাওয়ায় অবাধ্যতা রাখছে জারি।
তোমায় এত ভালবাসি- এই কথা কি
এমনভাবে হঠাৎ করে ভুলতে পারি?!

বছর খানেক আগের কোনো সন্ধ্যেবেলায়
তোমার কথায় মোমের মত পুড়ত মায়া,
যত্ন দিয়ে ভরিয়ে দিতে দুঃখ আমার
রূপকথাতে সোনালী রঙ ফেলত ছায়া।

একটা ভীষণ নরম মেয়ে আর কঠিন ছেলে
বানিয়েছিল ম্যাজিক জীবন গোপন ঘরে
এখন তাতে অযত্ন আর পলেস্তারা
সারাটাক্ষণ মেঘ জমা হয়, বৃষ্টি পড়ে...

মুঠোর ভেতর দুঃসাহসী ইচ্ছে ছাড়া
যত্নগুলোর হিসেব সে মেয়ে রাখত কবে!
বোকার মত সারা বিকেল থাকত বসে
ভাবত বোধহয়, 'ভালবাসাই সত্যি হবে'

গল্প কেন এমন ভাবেই ফুরোতে হয়!
সকল প্রিয় গাছ মুড়িয়ে যাবেই শেষে
পৃথিবীতে মানুষ মরে দুই উপায়ে-
এক অসুখে, তা না হলে ভালবেসে।