Saturday 9 October 2021

অনুবাদ শায়েরী ২৪

আলোকপ্রদীপ নিভিয়ে, তারা দেখতে যেও না
এই পাগলামিতে আমার ঘর গেছে সেই কবে।
এতখানি বিশ্বাসই বা কোথায় পাবে 'ফারাজ'!
যে অন্য কাউকে ছেড়ে সে শুধুই আমার হবে।

- আহমেদ ফারাজ

Thursday 19 August 2021

মূর্খ- রাণা রায়চৌধুরী

তোমার প্রবল-হাওয়ায়
          আমার ইশারা ভেঙে যাচ্ছে
ছিঁড়ে যাচ্ছে পাল
আমার নৌকো তোমাকে পার হতে পারছে না

তুমি নোনতা, সীমাহীন---
              কূল নেই, কিনারা নেই---
আমার আঙ্গিক তোমাকে চিনতে পারছে না

তুমি শ্রদ্ধা, প্রবল বিদ্যা নিয়ে ঘুরছ
আমি ঝড়ঝাপটায় মূর্খ হয়ে যাচ্ছি
মাঝি আমায় বকাবকি করে
শুনি, চুপ করে থাকি---
        দেখি আমার নৌকো ভাষাবদলের কথা ভাবছে
        দেখি আমার অহং পাশ ফিরে শুচ্ছে

তোমার প্রবল ইঙ্গিত           আমি মূর্খ হয়ে যাচ্ছি

তুমি ঢেউ, আমি অল্পস্বল্প মাঝি

এখনো প্রেমের কাছে ১৬ - শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়

আবার কখনো যদি দেখা হয় কোনো দূর জন্মের ওপারে-
একা পথে যেতে ছায়া নির্জন গোধূলি
আলোর বিষাদে আমি তোমার বিষণ্ণ মুখ ঠিক চিনে নেবো,
তোমার চোখের
পাতায় পুরোনো ছবি স্বপ্ন আর স্মৃতিরেখা গভীর কাজল
দেখে আমি চিনে নেবো আমার বিনষ্ট পরিচয়!

যন্ত্রণা পেয়েছি এত, এ জীবনে সীমা তার সমাপ্ত হবে না:
যত দূরে যাব যত আকাশ বঙ্কিম মাঠে ক্রমশ হারাবো,
দিগন্ত-রেখার মতো সেই ব্যথা ক্রমে সরে যাবে চিরকাল
আরও দূর দৃশ্যে, নীলিমায়।
আর সেই প্রসারিত নিঃশব্দ বেদনা
আবার তোমাকে দ্রুত চিনে নিতে পটভূমি হবে।

মা-কে - পঙ্কজ চক্রবর্তী

তুমি আমাকে জ্যোৎস্না রাতে গীতবিতান পড়ে বোঝাতে চেয়েছিলে
শস্যের সম্ভাবনা থেকে বৃষ্টির প্রাক্কথনের কথকতাগুলি
বলেছিলে এভাবে সময়ের সন্ধিভেদে হাত বাড়াবেন তোমার ঈশ্বর
আজ আমি আমার কবিতা পড়ে তোমাকে বলছি
আমার ঈশ্বর বিষাদের কথা, বৃষ্টি নয় লৌহের উপকথা
তুমি চমকে উঠলে এরকম বিপ্রতীপ বার্তায়, বিরক্ত হলে না
কেননা দাড়িওলা সন্ন্যাসীর চেয়ে তুমি আমাকে কম ভালোবাস না
অমঙ্গলে কেঁপে উঠল তোমার বুক; সেই স্পন্দনের আঘাত আমাকে
ছুঁতেই, আমি স্পষ্ট দেখলাম আড়ালে হেসে উঠলেন আমার ঈশ্বর

Saturday 31 July 2021

Saturday 3 July 2021

Friday 16 April 2021

পাঁচ টাকা দূরত্বে তুমি এখন- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

উচিত ছিলো তোমার বাড়ি এক্কেবারে
আমার বাড়ির পাশেই হওয়া । জানলা খুলে
চোখ দুটোকে মেলে দিলেই দেখতে পাবো
টুকিটাকি জিনিশপত্র শোবার ঘরে
অলস চুলে বোলাচ্ছ সেই স্নিগ্ধ লাজুক
আঙুলগুলো । উচিত ছিলো জানলা খুললে
তোমার আমার দেখতে পাওয়া সারাটি ক্ষন ।

উচিত ছিলো । উচিত ছিলো রাত্রিবেলা
হাসনুহানার শাড়ির মতো তোমার চুলের
গন্ধচূর্ন আবেশ আবেশ ভেসে আসা,
উচিত ছিলো তোমার গাওয়া আনমনা গান
অসংলগ্ন একটু আধটু শুনতে পাওয়া
সম্পূর্ন অলক্ষিতে । উচিত ছিলো তোমার বাড়ি
এক্কেবারে আমার বাড়ির পাশেই হওয়া ।

উচিত ছিলো শোবার ঘরে শাড়ির বাঁধন
খুলতে গিয়ে আমায় দেখে মুখ লুকানো
লজ্জারাঙা স্নিগ্ধ হাসা আঁচল তলে ।
কিন্তু কপাল তোমার বাড়ি এখান থেকে
সেই কতদূর, পুরোপুরি বিশটি মিনিট
খরচ কোরে পৌঁছতে হয় এবং যেটা
বলতে বাধে তোমার কাছে যেতে হলেই
এই বাজারে পুরোপুরি পাঁচটি টাকা!

০৩.১২.৭৪ (সন্ধ্যা) লালবাগ ঢাকা

Saturday 10 April 2021

অশোকপত্র- পরিতোষ হালদার

স্পর্শ ছাড়া কোনো শব্দ আসে না আর...আয়ু খোলো, হে ঈপ্সিত হরিণ।
প্রতিবেশির চোখে মৌনিরেখা, নীল হয়ে আসে রাত ও অপেক্ষাবেলা।

অতসী গন্ধে কতবার ডুবে গেছে চাঁদ। দূরে জন্মের নামতাগান—
অসংখ্য কন্যাপ্রবাহ...
পুত্র প্রবাহধারা।

প্রতিদিন ভ্রান্তি নামে, ঘুমের ভেতর দোল খায় রাত
অশোকপত্র...
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে তাকিয়ে দেখি—ঘরের মতো বদলে গেছে ঘর।

আমিও যেতে যেতে রোজ সন্ধ্যা বদল করি।
আমার হংস জুড়ে জল, ক্রিয়াময় জোড়া অন্ধকার।

তােতাকাহিনি - বিভাস রায়চৌধুরী

আমিই বলেছিলাম। তুমি হয়তাে খেয়াল করােনি। শরীরের দিকে দিকে এসে গেছে তােমার ফাল্গুন।
তুমি তাকে এইবেলা পাঠিয়েছ চায়ের দোকানে?

টিউশনি শেষে রােজ এককাপ চা-পান করি আমি। তােমাকে ছোঁব না। আমি কামনা করব না কোনােদিন। শুধু চায়ের ধোঁয়ায় মিশে যাক অমেয় ফাল্গুন।
পৃথিবী এখনও জানি প্রতিদিন কবিতাকে চায় জঙ্গলে-জ্যোৎস্নায় আর নােটস দেওয়া পাতায় পাতায়...

কিন্তু পরীক্ষা খারাপ মানেই ছাত্রীরা ছেড়ে যাবে।

আমার বিরহ সহ্য, কিন্তু যদি পয়সার অভাবে
ছােট মেয়ে চুপচাপ না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকে? তাই

চায়ের দোকানে বসে মনে মনে কোকিল তাড়াই...

Thursday 25 March 2021

কষ্ট- শঙ্খ ঘোষ

তুমি বলে গেলে : তোমাতে আমার কোন মন নেই আর।
মৃৎনির্মাণের মতো বসে আছি।
সামনে দিঘির জল সে-রকমই টলটল করে
সে-রকমই হাওয়া বয়ে যায়।
আর কোন চিহ্ন পড়ে নেই
আমারও মনের মধ্যে কোন নীল রেখাপাত নেই। শুধু
তোমার কথাতে কোনো কষ্টের আঘাত পাইনি দেখে
অবিরাম কষ্ট হতে থাকে।

অভিশাপ- প্রভাত সাহা

যে ভাবেই জানি না কেন তোকে
পরিশেষে মনে হবে
যেভাবে জানা উচিত
তোকে জানিনি কখনও

যে ভাবেই চাই না কেন তোকে
প্রাপ্তির শেষে মনে হবে
যে ভাবে চাওয়া উচিত
তোকে চাইনি কখনও

চির-অসম্পূর্ণতার এই অভিশাপটুকুই
সুন্দরের বন্ধন

অপরিসীম মুক্তির বেদনা।

(প্রকাশিত : আত্মপ্রকাশ, বিশেষ কবিতা সংখ্যা, ২০১৪)

ছুটি- অরণি বসু

ছুটির কথা মনে হলেই দৌড়ে
তোমার কাছে আসি।

তোমার কাছে এলেই
বড়ো শান্তি শান্তি লাগে
তোমার শরীরের নরম পুকুরপাড়ে
তোমার শরীরের বটগাছের ছাতার তলায়
চুপ করে বসে থাকি।

ছুটির কথা মনে হলেই দৌড়ে
তোমার কাছে আসি।
তুমি তো আমার কেউ নও,
তবু, তোমার কাছে এলে
আমার অনন্ত ছুটি মনে হয়।

চাবি- শক্তি চট্টোপাধ্যায়

আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
                   তোমার প্রিয় হারিয়ে-যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরঙ্গ আজ খোলো ?

থুৎনি-'পরে তিল তো তোমার আছে
                এখন ? ও মন, নতুন দেশে যাবি ?
চিঠি তোমায় হঠাৎ লিখতে হলো ।

চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
                রেখেছিলাম, আজই সময় হলো -
লিখিও, উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?

অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
                  তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো
লিখিও, উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?

শুধু কবিতার জন্য- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম,
শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা,
শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা,
ভুবন পেরিয়ে আসা,
শুধু কবিতার জন্য অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী,
শুধু কবিতার জন্য এতো রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত 
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়। 
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা,
শুধু কবিতার জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।