Thursday 25 March 2021

কষ্ট- শঙ্খ ঘোষ

তুমি বলে গেলে : তোমাতে আমার কোন মন নেই আর।
মৃৎনির্মাণের মতো বসে আছি।
সামনে দিঘির জল সে-রকমই টলটল করে
সে-রকমই হাওয়া বয়ে যায়।
আর কোন চিহ্ন পড়ে নেই
আমারও মনের মধ্যে কোন নীল রেখাপাত নেই। শুধু
তোমার কথাতে কোনো কষ্টের আঘাত পাইনি দেখে
অবিরাম কষ্ট হতে থাকে।

অভিশাপ- প্রভাত সাহা

যে ভাবেই জানি না কেন তোকে
পরিশেষে মনে হবে
যেভাবে জানা উচিত
তোকে জানিনি কখনও

যে ভাবেই চাই না কেন তোকে
প্রাপ্তির শেষে মনে হবে
যে ভাবে চাওয়া উচিত
তোকে চাইনি কখনও

চির-অসম্পূর্ণতার এই অভিশাপটুকুই
সুন্দরের বন্ধন

অপরিসীম মুক্তির বেদনা।

(প্রকাশিত : আত্মপ্রকাশ, বিশেষ কবিতা সংখ্যা, ২০১৪)

ছুটি- অরণি বসু

ছুটির কথা মনে হলেই দৌড়ে
তোমার কাছে আসি।

তোমার কাছে এলেই
বড়ো শান্তি শান্তি লাগে
তোমার শরীরের নরম পুকুরপাড়ে
তোমার শরীরের বটগাছের ছাতার তলায়
চুপ করে বসে থাকি।

ছুটির কথা মনে হলেই দৌড়ে
তোমার কাছে আসি।
তুমি তো আমার কেউ নও,
তবু, তোমার কাছে এলে
আমার অনন্ত ছুটি মনে হয়।

চাবি- শক্তি চট্টোপাধ্যায়

আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
                   তোমার প্রিয় হারিয়ে-যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরঙ্গ আজ খোলো ?

থুৎনি-'পরে তিল তো তোমার আছে
                এখন ? ও মন, নতুন দেশে যাবি ?
চিঠি তোমায় হঠাৎ লিখতে হলো ।

চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
                রেখেছিলাম, আজই সময় হলো -
লিখিও, উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?

অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
                  তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো
লিখিও, উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?

শুধু কবিতার জন্য- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম,
শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা,
শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা,
ভুবন পেরিয়ে আসা,
শুধু কবিতার জন্য অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী,
শুধু কবিতার জন্য এতো রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত 
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়। 
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা,
শুধু কবিতার জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।

কিংবদন্তি- তপন রায়

দুপুরে গল্পটা আমি মৌমাছিকে বলব
জলকে বলেছি খুব ভোরবেলা

সেবার আমরা শুধু আমাদের কথাই বলেছি
সেবার মৌমাছি আর পাখিদের কথা

এখন অন্ধকারে অতিসাধারণ ফুটেছে মালতী
এবার আমরা শুধু আমাদের ভেঙে গেছে ভুল

তাছাড়া তুমিও যেমন দেবযানী নও
এবং আমিও নই অসাধ্যসাধন কোনো কচ

Saturday 13 March 2021

সেই কবে থেকে - হুমায়ুন আজাদ

সেই কবে থেকে জ্বলছি
জ্ব’লে জ্ব’লে নিভে গেছি ব’লে
তুমি দেখতে পাও নি ।
সেই কবে থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাতিস্তম্ভের মতো ভেঙে পড়েছি ব’লে
তুমি লক্ষ্য করো নি ।
সেই কবে থেকে ডাকছি
ডাকতে ডাকতে স্বরতন্ত্রি ছিঁড়ে বোবা হয়ে গেছি ব’লে
তুমি শুনতে পাও নি ‘।
সেই কবে থেকে ফুটে আছি
ফুটে ফুটে শাখা থেকে ঝ’রে গেছি ব’লে
তুমি কখনো তোলো নি ।
সেই কবে থেকে তাকিয়ে রয়েছি
তাকিয়ে তাকিয়ে অন্ধ হয়ে গেছি ব’লে
একবারো তোমাকে দেখি নি ।

Monday 8 March 2021

কুড়ানি- মনীশ ঘটক

স্ফীত নাসারন্ধ্র. দু'টি ঠোঁট ফোলে রোষে,
নয়নে আগুন জ্বলে। তর্জিলা আক্রোশে
অষ্টমবর্ষীয়া গৌরী ঘাড় বাঁকাইয়া,
"খট্টাইশ, বান্দর, তরে করুম না বিয়া।"

এর চেয়ে মর্মান্তিক গুরুদন্ডভার
সেদিন অতীত ছিলো ধ্যানধারণার।
কুড়ানি তাহার নাম, দু'চোখ ডাগর
এলোকেশ মুঠে ধরি, দিলাম থাপড়।
রহিল উদ্‌গত অশ্রু স্থির অচঞ্চল,
পড়িল না এক ফোঁটা। বাজাইয়া মল
যায় চলি; স্বগত; সক্ষোভে কহিলাম
"যা গিয়া! একাই খামু জাম, সব্রি-আম।"

গলিতাশ্রু হাস্যমুখী কহে হাত ধরি,
"তরে বুঝি কই নাই? আমিও বান্দরী!"