গভীর ঘুমের মধ্যে
হাসিমুখে সর্বনাশ এসে দাঁড়ায়
তার আদরে আদরে ভরে যেতে থাকে আমার অপাবৃত শরীর
ক্ষতগুলি চেনা যায় জেগে উঠবার বহু পরে
ততক্ষণে, সেও কাছে নেই
গভীর ঘুমের মধ্যে
হাসিমুখে সর্বনাশ এসে দাঁড়ায়
তার আদরে আদরে ভরে যেতে থাকে আমার অপাবৃত শরীর
ক্ষতগুলি চেনা যায় জেগে উঠবার বহু পরে
ততক্ষণে, সেও কাছে নেই
কোথাও কিছু পুড়ছে, তার গন্ধ পাই,
পুরনো ভালবাসা
কোথাও কিছু মুচড়ে ওঠে যন্ত্রণায়
পুরনো ভালবাসা
কে যেন আজ দাঁড়িয়ে আছে কুয়োতলায়
আমার ভালবাসা
শব্দ করে জানলা-দরজা খুলে দিয়েছি
এখন তুমি এসো
আকাশটাকে ঘরের মধ্যে টেনে দিয়েছি
এখন তুমি এসো
যদিও ইতিমধ্যে নাম ভুলে গিয়েছি
তবুও তুমি এসো
আকাশ, আমার ক্লান্তি কেন হয়
আকাশ আমার ফুরিয়ে গেল কথা
আমাকে আজ সূর্য করে দাও
দেখুক রাতের ক্লিন্ন নীরবতা
আকাশ, আমার ইচ্ছে-নদী স্থির
আকাশ, আমি কিচ্ছু যে পারিনা
আকাশ, তুমি আদর লিখে দাও
আকাশ, আমি এমনি লজ্জাহীনা
আকাশ, আমার অসাবধানি চলা
মৃত্যু আমার বিপন্নতায় বাজে
আকাশ, আমার সত্যি ভালবাসা
একলা ঘরে বাঁধতে পারিনা যে।
মনে নেই,
আমি নিজে ফিরে গিয়েছিলাম, অথবা
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম,
এখন
আর কিছু মনে নেই, তবু দুঃখ হয়
এখন, যখন একেকদিন খুব বৃষ্টি নেমে আসে
এখন, যখন একেকদিন খুব শীতের বাতাস
শুধু পাতা উড়িয়ে উড়িয়ে
আমার চারদিকে বৃষ্টি ও ঠান্ডা বাতাস ঘুরে ঘুরে;
এমন কি যখন সেই পুরনো কালের সাদা রোদ
হঠাত্ ভোরবেলা ঘর ভাসিয়ে ছাপিয়ে,
‘কি ব্যাপার এবার কোথাও যাবে না?’
এখন আর কোনোখানে যাওয়া নেই,
এখন কেবল ঠান্ডা বাতাস, এখন বৃষ্টি, জল
আমার চারপাশ ঘিরে পাতা ওড়ে আর জল পড়ে।
এখন তোমার জন্য দুঃখ হয়,
এখন আমার জন্য দুঃখ হয়,
আমি নিজে ফিরে গিয়েছিলাম অথবা
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, এখন দুঃখ হয় ।
যদি ভুলে যাবার হয়, ভুলে যাও।
দূরে বসে বসে মোবাইলে, ইমেইলে হঠাৎ হঠাৎ জ্বালিয়ো না,
দূরে বসে বসে নীরবতার বরফ ছুড়ে ছুড়ে এভাবে বিরক্তও করো না।
ভুলে গেলে এইটুকু অন্তত বুঝবো ভুলে গেছো,
ভুলে গেলে পা কামড়ে রাখা জুতোগুলো খুলে একটু খালি পায়ে হাঁটবো,
ভুলে গেলে অপেক্ষার কাপড়চোপড় খুলে একটু স্নান করবো,
ভুলে গেলে পুরোনো গানগুলো আবার বাজাবো,
ভুলে গেলে সবগুলো জানালা খুলে একটু এলোমেলো শোবো।
রোদ বা জ্যোৎস্না এসে শরীরময় লুকোচুরি খেলে খেলুক, আমি না হয় ঘুমোবো,
ঘুমোবো ঘুমোবো করেও নিশ্চিন্তের একটুখানি ঘুম ঘুমোতে পারিনা কত দীর্ঘদিন!
কেবল অপেক্ষায় গেছে। না ঘুমিয়ে গেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে গেছে।
কেউ আমাকে মনে রাখছে, কেউ আমাকে মনে মনে খুব চাইছে, সমস্তটা চাইছে,
কেউ দিনে রাতে যে কোনও সময় দরজায় কড়া নাড়বে,
সামনে তখন দাঁড়াতে হবে নিখুঁত, যেন চুল, যেন মুখ, যেন চোখ, ঠোঁট,
যেন বুক, চিবুক এইমাত্র জন্মেছে, কোথাও ভাঙেনি, আঁচড় লাগেনি, ধুলোবালি ছোঁয়নি।
হাসতে হবে রূপকথার রাজকন্যার মতো,
তার ক্ষিধে পায় যদি, চায়ের তৃষ্ণা পায় যদি!
সবকিছু হাতের কাছে রাখতে হবে নিখুঁত!
ভালোবাসতে হবে নিখুঁত!
নিমগ্ন হতে হবে নিখুঁত!
ক্ষুদ্র হতে হবে নিখুঁত!
দুঃস্বপ্নকে কত কাল সুখ নামে ডেকে ডেকে নিজেকে ভুলিয়েছি!
ভুলে যেতে হলে ভুলে যাও, বাঁচি।
যত মনে রাখবে, যত চাইবে আমাকে, যত কাছে আসবে,
যত বলবে ভালোবাসো, তত আমি বন্দি হতে থাকবো তোমার হৃদয়ে, তোমার জালে,
তোমার পায়ের তলায়, তোমার হাতের মুঠোয়, তোমার দশনখে।
ভুলে যাও, মুখের রংচংগুলো ধুয়ে একটু হালকা হই, একটুখানি আমি হই।
নির্নিমেষ তাকিয়ে আছি সুন্দরের দিকে
কার এমন স্পর্ধা আছে ফিরিয়ে নেয় চোখ?
চোখের কাছে গলে যাচ্ছে পাথর সমুদয়
হেরে যাচ্ছে জুয়োয় বসে দক্ষ জুয়োচোর।
দৃষ্টি যদি লক্ষ্যভেদী হয়
কার এমন সাধ্য আছে ফিরিয়ে নেয় মন?
নির্নিমেষ তাকিয়ে আছি তোমার দিকে শুধু-
চারিদিকে যে ঊষর মরু ধু ধু,
তোমার মতো নস্যি ছেলে
কোথায় যাবে চোখের কাছে না হয়ে বশীভূত!
আমি ও তুমি মিলে এই সন্ধ্যার কুয়াশা
দ্রুততম বিএমডব্লিউ বাপাশ দিয়ে উড়ে গেল
বাংলা মোটর মোড়ে
এলোমেলো হলো আমার রিকশার ভাষা
পথ তো সুদূর
প্রত্যেকেরই যেতে হবে আরও
কিছুটা দূর;
তুমি, আমি ও আশা
সুদূর পথের মত
প্রতিদিন খুঁজেছি তার ভাষা
যেমন শেখা হয়নি আজও পাখিদের গান
যেমন সারাদিন তোমার সঙ্গে থেকেও
পৃথক পালঙ্কে ঘুমিয়েছি আমরা দুজন
আমিও তুমি মিলে গাঢ় হল প্রেম
দুজন দুদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর
অন্ধকারের হাত ধরে যা ছুঁয়েছি তাতেই
ট্যাবু ও টোটেম
আশ্চর্য একটা তারিখ চেয়ে আছে
গণিতের খাতার ভিতর
পুরনো একটা ফুলের পাপড়ি যেমন
প্রিয়তম বইয়ের পৃষ্ঠায় চাপা পড়ে বছর বছর
আশ্চর্য একটা তারিখ চেয়ে আছে
ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠার উপর
মোনালিসার মত অনেক বছর ধরে
চেয়ে আছে চোখের ভিতর
আশ্চর্য একটা মুখ এই দিকে চেয়ে আছে
শতাব্দী থেকে শতাব্দীর পর
পুরনো শেলফে যেমন দগদগে ক্ষত থাকে
যেমনটা থাকে তোমার মনের ভিতর।
ভালোবেসেছিলাম একজনকে।
তখন ছিল আমার একুশ বছর বয়েস।
পুরুষ হয়েও চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়েছিলাম।
আমার আবহমান কবিতার কেন্দ্র সে-ই।
তাকে ঘিরেই বিকশিত হয়েছে আমার অ-কবিতাও।
কিন্তু তারপরও এক-একজন নারীর প্রতি আতীব্র আকৃষ্ট হয়েছি।
তাহলে কি আমার সেই প্রথম ভালোবাসায় খাদ ছিল?
এই সেদিন আর-একজনকে দেখে আমূল নড়ে উঠলাম কেন?
তাহলে কি আমার সেই প্রথম প্রেমে শুদ্ধতা ছিল না?
কী জানি!
এবারের বইমেলায় প্রেমের কবিতার একটি বই
বের করবার জন্যে একজন প্রকাশক ধরেছে খুব।
ভাবছি, নবাগতাকে নিয়ে আর-কয়েকটি কবিতা লিখে
মেলায় তিন ফর্মার কবিতার বইটি বের করলে কেমন হয়!
আচ্ছা, বইয়ের ভেতরে কি একটু ছবিটবি দেওয়া উচিত হবে?
২১.১১.২০০৫
অধিবর্ষ দিনে, আলোকবর্ষ দূরত্ব নিয়ে কারও জন্য প্রার্থনা করছি-
জীবন শুভ্র হোক,
শাঁখ ও শঙ্খের মত।
১.
ভাঙা দরোজায় ভুল-কান পেতে থাকি
যদি কোনদিন দ্বিধা-থরো টোকা পড়ে
চৌকাঠ জুড়ে সারা বুক ফেলে রাখি
মৃদু পায় পায় ফিরে আসো যদি ঘরে
২.
জন্মের মত স্থাপত্য কিছু নেই
কিছু নেই প্রাপ্তি মৃত্যুর মত
(আল বেরুনী হল সাহিত্য সাময়িকী, ১৯৮০)