Saturday 7 November 2020

নিবেদিতা - ওবাইদুল হক

আমার আকাশে দেখি চাঁদ নেই,
আছো তুমি।
আমার বুকে দেখি হৃদয় নেই,
আছো তুমি।
আমার চক্ষুর অন্তর্লীনে মনি নেই,
আছো তুমি।
আমার দেহের সবটাজুড়ে অস্তিত্ব নেই,
আছো তুমি।
আমার গানের শব্দজুড়ে স্বর নেই,
আছো তুমি।
প্রকৃতির অস্থিমজ্জায় সৌন্দর্য নাই,
আছো তুমি।
ঘাসের চোখে শিশির নেই,
আছো তুমি।
জগতের সবটাজুড়ে ছেয়ে আছো তুমি,
অথচ তুমি আমার না।
কবে হবে আমার তুমি নিবেদিতা?

Friday 6 November 2020

জন্মদিন- শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়

সুদূর বিদেশে থাকে, এমনি বন্ধুর মতো চেনা হাসিমুখে
সময়ের ট্রেন থেকে নেমে আসে কার্তিকের একটি সকাল --
বাঁশের নির্জন সাঁকো পার হয়ে এদিক ওদিক
চেয়ে দেখে, তারপর
রৌদ্র-ছায়া-নকশাকাটা উঠোনে দাঁড়িয়ে সে আমার
কুশল জিজ্ঞাসা করে ।
তাকে দেখে বারান্দায় পাখি নাচে, কাঠের পুতুল
হাতে নিয়ে শৈশবের স্মৃতিগুলি দরোজায় ভিড় করে আসে :
আমার মায়ের চোখ মনে পড়ে, আমার দিদিমা
'সুখে থাকো'- লেখা এক প্রাচীন আসনে
আমাকে বসিয়ে যেন এখনি পাশের ঘরে গেছে,
রুপোর রেকাবি ভরে মিষ্টি, ফল, নিয়ে ফিরে এলে
অনুষ্ঠান শুরু হবে শাঁখের ধ্বনিতে,
হাওয়া থেকে হাতের আড়ালে রেখে পিলসুজে ঘৃতের প্রদীপ
কোমল বুকের স্নেহ আমাকে বলবে তুমি দীর্ঘজীবী হও --
এই সব রূপকথা খুব ভাবি জন্মদিন এলে ৷
আমি সুখে আছি কিনা দীর্ঘজীবী হবো কিনা, সে সব কথার
অনেক দূরত্বে আজ বাস করি জীবনের কঠিন মাটিতে :
ঝ'ড়ো হাওয়া একা পথে নদীর স্রোতের
বিপরীতে যেতে হয়,
অবিরাম দুঃখ থেকে আমাকে বাঁচাতে আর কোন
হাতের আড়াল নেই !
তবু কেন কুশল সংবাদ নিতে জন্মদিন আসে ?

Saturday 31 October 2020

Friday 30 October 2020

Thursday 15 October 2020

প্রিয় উক্তি

এসো, আমার মধ্যে একটু ডুব দাও।
যদি নিঃশ্বাস নিতে পারো, তাহলে ধরে নিবে আমি তোমাকে ভালবাসি।
আর যদি তোমার দম বন্ধ হয়ে আসে, তাহলে জেনে রেখ; আমার ভালবাসা সহ্য করার ক্ষমতা তোমার নেই।
-Rakim Rayes

Tuesday 13 October 2020

পরাজিত পদাবলী- আবুল হাসান

আমার বাহু বকুল ভেবে গ্রীবায় পরেছিলে
মনে কি পড়ে প্রশ্নহীন রাতের অভিসার?
অন্ধকারে আড়াল পেয়ে ওষ্ঠে তুলে নিলে
হঠাৎ গাঢ় চুম্বনের তীব্র দহনগুলি?

মনে কি পড়ে বলেছিলে এ পোড়া দেশে যদি
বিরহ ছাড়া কিচ্ছুতে নেই ভালোবাসার বোধি-
রাজ্য জুড়ে রাজার মতো কে আর থাকে কার
রাতের পথে সহজ হবে দিনের অভিসার?

হৃদয় আজ কুপিয়ে দেই বিচ্ছেদের চারায়
দোলাই তাতে মন চেতনা মনস্তাপের ফুল!
তোমার ইন্দ্রিয়ে তার সৌরভেরা হারায়
যখোন তুমি বাঁধতে বসো তোমার এলোচুল?

তোমার কাছে গিয়েছিলাম রাতে নদীর ঢেউ
তোমায় আমি পরিয়েছিলাম অঙ্গুরীয় মেয়ে

ভুল বুঝা সে মানুষ তাকে বোঝেনি আর কেউ
তুমি যেমন তোমার মতো বুঝতে চেয়েছিলে।

তার ইচ্ছায়- সিকদার আমিনুল হক

ঘুমিয়ে কাটলাে বেলা : যেই শুরু হলাে ফের রাত্রি
দেখি দূরে পর্বত আবার!
ক্রমশ বড়ােই হচ্ছে, যত নিচ্ছি চামড়ার গন্ধ...
উপচে পড়ে আমার খাবার।

সকল দিকেই আলাে। এত ফরসা। সাত দিকে শাদা... তাই তাে আদর করি চুল;
কিছু ত্রুটি ভালাে লাগে। স্বাস্থ্য, আয়ু কত দিন আর
চেটে খাবাে অবেলার ভুল!

স্মৃতির সম্বল জল, বাষ্প হয়ে ওড়ে না আকাশে
থাকে শুধু লেহনের তৃষ্ণা;
হে নগ্ন, এখানে আয়। সিল্কগুলি পরাবাে সকালে অকারণ যাতনা দিস না!

ভ্রষ্টপ্রেম- প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত

সে এসে দাঁড়ায় বুঝি আকাশের মতো,
তবু স্থির, আলোয় আনত
শরীরে কোথাও আমি চামেলি কি জুঁই
রাখি না কিছুই;

সে যদি হাওয়ায় সরে, জলে ভেসে যায়,
দাবানলে পোড়ে-
তার মৃতদেহে, নাকি স্মৃতির শরীর
ভীরুহাতে, চুপিচুপি ছুঁই।

Thursday 8 October 2020

বাউল- শঙ্খ ঘোষ

বলেছিলাম, তােমায় নিয়ে যাব অন্য দূরের দেশে
সেই কথাটা ভাবি,
জীবনের ওই সাতটা মায়া দুরে দুরে দৌড়ে বেড়ায়
সেই কথাটা ভাবি।
তাকিয়ে থাকে পৃথিবীটা, তােমার কাছে হার মেনে সে বাঁচবে কেমন ক'রে।
যেখানে যাও অতৃপ্তি আর তৃপ্তি দুটো জোড়ায়
জোড়ায় সদরে-অন্দরে।

উদাসিনী নও কিছুতে-বুঝতে পারি তােমার বুকে
অন্য কিছু আছে,
যন্ত্রণা তার পাকে পাকে হৃদয় খােলে, সে-খােলাটার অন্য মানে আছে।
ঘুমের মধ্যে দেখি আলাের ভরা-কুসুম নীলাংশুকে বাঁধতে পারে না, এ :
উঠেই দেখি কী বিচিত্র, একটি আঁচড় লাগেনি তার ভালােবাসার গায়ে।

বলেছিলাম তােমায় আমি ছড়িয়ে দেব দুর হাওয়াতে সেই কথাটা ভাবি।
তােমার বুকের অন্ধকারে সুখ বেজেছে মদির হাতে
সেই কথাটা ভাবি।

দুঃখ- অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

তবু কি আমার কথা বুঝেছিলে, বেনেবউ পাখি?
যদি বুঝতে পারতে
নারী হতে।

আমাকে বুঝতে পারা এতই সহজ?
কারুকেই বোঝা যায় নাকি!

শুধু বহে যায় বেলা, ঈশ্বর নিখোঁজ ;
কিংবা বুঝি এ-দুঃখ পোশাকি,
না-হলে কী করে আজও বেঁচে আছি রোজ,
বেনেবউ পাখি!

পান্থ- অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

মাঝে-মাঝে স্পষ্ট করে বলা দরকার
ঈশ্বর আছেন,
মগডালে-বসে-থাকা পাপিয়াকে আর
পর্যবসিত বস্তুপৃথিবীকে স্নান করাচ্ছেন।

মাঝে মাঝে স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন
তুমি যে আমার
সাধনার ধন,
তুমি চলে গেছ বলে আমাকে গাহন করাবার
কেউ নেই, যত্রতত্র সেরে নিই মধ্যাহ্নভোজন।।

তোমার যে হাতে- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

তুমি যে হাতে স্বপ্ন সাজিয়ে গড়ো আপন পৃথিবী
                  আমার সে হাত নেই,
প্রতিবার তাই নত হয়ে আসি তোমার চোখের কাছে ।

ওই চোখ জানে কতোটা প্লাবনে ভেসেছে জীবন
কতোটা খরার খরতায় বুকে জ্বলেছে সবুজ মাটি,
নিশিদিন জুড়ে জেগে থাকা সেই ধ্বংসের স্মৃতি
                     নত হয়ে আসি তাতে ।

যে হাতে জড়ানো অমেয় সাহসে গড়েছো শব্দহীনতা
            আমার সে হাতে সে সাহস আজো নেই
প্রতিবার তাই নত হয়ে আসি তোমার পৃথিবী ছুঁয়ে ।

ফেরার সময় হয়ে গেছে বোলে সাজিয়েছি পাখা
জানি, পথ টেনে নিয়ে যাবে দুজনায় দুই প্রান্তে
কোনোদিন আর স্মৃতির সম্মুকে বিশ্বাস বেঁধে হবে না আসা
              ভুলে যাওয়া সত্যি হবে অন্য প্রয়োজনে ।

যদি শেষ বাঁশি বেজে থাকে বুকে
তবে একটি মুহূর্ত শুধু বিস্মৃতিবিহীন
একটি না বলা কথা এসে পোড়াক হৃদয়
                          নীল অনন্ত আগুনে ।

নির্দিষ্ট ব্যবধান- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

তোমার থেকে আমার মাঝের
        ব্যবধান শুধু একটি রাত
        সুনির্দিষ্ট একটি দিন,
তোমার থেকে আমার মাঝের
        ব্যবধান শুধু একটি ঘর
        অলৌকিক এক শূন্যতা ।

তোমার থেকে আমার বুকের
        ব্যবধান এক করুন চাঁদ
        আগুন ঘষা আকাশটা,
তোমার থেকে আমার চোখের
ব্যবধান এক রম্য কাঁচ
        কালো ফ্রেমের ব্যর্থতা ।

তোমার থেকে আমার পথের
ব্যবধান এই বাতাসটুকু
        ঘৃন্যতম নিসর্গ,
তোমার থেকে আমার মাঝের
ব্যবধান ঐ নীল হাসি
       বিষন্নতার দুইটি ঠোঁট ।
তোমার থেকে আমার মাঝের
        ব্যবধান শুধু তুমি আমি,
অমীমাংসিত তিনটি হাত ।