Monday, 31 August 2020

আমি তোমায় গোলাপ দেব-মাইনুল এইচ সিরাজী

টবটা রাঙিয়েছি সবুজ রঙে। সবুজ টবে কী ফুল ফোটাব? কেন, লাল? তাহলে গোলাপই হোক। গোলাপ ছাড়া কোন ফুলে আর মানাবে তোমায়? লাল ছাড়া কোন রঙে আর রাঙাব তোমায়? সুতরাং তোমার জন্য গোলাপ। সবুজ টবে লাগিয়েছি। আমার জানালার পাশের বারান্দায়। প্রতি সকালে টবটা আমি সরিয়ে দিই আলোর দিকে। প্রতি বিকেলে জল ঢালি আমি গোলাপ চারায়। আর...

Saturday, 29 August 2020

রূপান্তর- শামসুর রাহমান

চঞ্চলা নর্তকী নও, অথচ যখন হাঁটো কিংবা ছুটে যাও, বর্ষার বৃষ্টি পরে রামধনু উঠলে আকাশে, বারান্দায়, চলায় সহজে লাগে ছন্দের বিদ্যুৎ। যখন আয়নার সামনে লিপস্টিক মাখো ঠোঁটে, হাই-হিল জুতো পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামো, হাতে বই, বুকের উপর কালো বেণী, চিবুকে ঘামের ফোটা, কী-যে ভালো লাগে। যখন বাগানে যাও, ফুল তোলো, ঝকঝকে দাঁতে হঠাৎ...

প্রতীক্ষা- শামসুর রাহমান

এতদিনে জেনে গেছি, সে তোমার পরিহাস ছিল পুরোপুরি, হয়তো কোনো দিন দেখা হবে,-কতবার ভেবেছি আবেগভরে আর তোমার আসার পথে দিয়েছি বিছিয়ে স্বপ্নময় বাসনার রক্তিম গালিচা। কিন্তু অলিখিত কবিতার মতো তুমি থেকে গেছ অদ্যাবধি চেতনায়। সে কোন রহস্যময় প্রাণী পরম সোহাগে করে পান সারাবেলা আমার আপন হৃদয়ের জল, কোনো কোনো দিন কিছুবা...

কী পরীক্ষা নেবে?- শামসুর রাহমান

কী পরীক্ষা নেবে তুমি আর বারবার? হাতে জপমালা নেই, তবু আমি তো তোমার নাম মন্ত্রের মতন করি উচ্চারণ সর্বক্ষণ। যেখানে তোমার ছায়া স্বপ্নিল বিলাসে অপূর্ব লুটিয়ে পড়ে, সেখানে আমার ওষ্ঠ রেখে অনেক আলোকবর্ষ যাপন করতে পারি, তোমারই উদ্দেশে সাঁতার না জেনেও নিঃশঙ্ক দ্বিধাহীন গহন নদীতে নেমে যেতে পারি। তোমার সন্ধানে ক্রোশ...

আমার মৃত্যুর পরেও যদি- শামসুর রাহমান

একটি পাখী রোজ আমার জানালায় আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে। কখনো দেয় শিস, বাড়ায় গলা তার; আবার কখনোবা পাখাটা ঝাপটায়। পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন, দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু; নদীর স্বপ্নের জলজ কণাগুলি এখনো তাঁর ঠোটে হয়তো গচ্ছিত। কাউকে নীড়ে তার এসেছে ফেলে বুঝি? হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা। তাই...

দাগ- শামসুর রাহমান

'না, আমি কস্মিনকালে তোমার এ নৈঃসঙ্গ্য ঘোচাতে পারবো না' ব'লে তুমি সেই ছোট ঘরটি গোছাতে মন দিলে। এটা-সেটা নেড়েচেড়ে তুলে নিলে দুল বালিসের নীচে থেকে, পরলে আবার। এলোচুল সহজে বিন্যস্ত হলো; পরিচিত গন্ধমাখা ঘরে বিধ্বস্ত স্নায়ুর রাজ্য, বন্দী আমি ভয়ের নিগড়ে। বুঝি তাই অকস্মাৎ বুকে টেনে নিলাম তোমাকে সংক্রামক হতাশায়।...

কেউ কি এখন- শামসুর রাহমান

কেউ কি এখন এই অবেলায় আমার প্রতি বাড়িয়ে দেবে হাত? আমার স্মৃতির ঝোপেঝাড়ে হরিণ কাঁদে অন্ধকারে এখন আমার বুকের ভেতর শুকনো পাতা, বিষের মতো রাত। দ্বিধান্বিত দাঁড়িয়ে আছি একটি সাঁকোর কাছাকাছি চোখ ফেরাতেই দেখি সাঁকো এক নিমেষে ভাঙলো অকস্মাৎ। গৃহে প্রবেশ করবো সুখে? চৌকাঠে যায় কপাল ঠুকে। বাইরে থাকি নতমুখে, নেকড়েগুলো...

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়- শামসুর রাহমান

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ? তেমন যোগ্য সমাধি কই ? মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো অথবা সুনীল-সাগর-জল- সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই ! তাইতো রাখি না এ লাশ আজ মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে, হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁ...

তোর কাছ থেকে দূরে- শামসুর রাহমান

তোর কাছ থেকে দূরে , সে কোন্‌ নিশ্চিন্তিপুরে পালাতে চেয়েছি                               প্রতিদিন , বুঝলি মতিন ! হয়তোবা টের পেয়ে অবশেষে  নিজেই উধাও হয়ে...

শতাব্দীর জন্যে- শামসুর রাহমান

শতাব্দী হঠাৎ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে- আচ্ছা ধরো, যদি তোমার হাত থেকে এখন কবিতার বই ছিনিয়ে নিই, কী করবে তুমি? তোমার মেজাজ চৈত্রের দুপুর হয়ে যাবে নিশ্চয়। এই দ্যাখো, কেড়ে নিলাম তোমার সাধের আধুনিক বাংলা কবিতা। মাথা পেছনে হেলিয়ে বলি, যখন খোদ কবিতাই আলিঙ্গনে বেঁধেছে আমাকে, তখন কয়েকটি মুদ্রিত অক্ষর নিয়ে কী...

টেলিফোনে তুমি- শামসুর রাহমান

টেলিফোনে তুমি সেদিন সন্ধ্যেবেলা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলে প্রিয়তমা। বুঝতে পারি নি তোমার ভেতরে কত কত ব্যথা আর হাহাকার ছিল জমা। তোমার হৃদয় গোলাপবাগান জেনে ছিলাম ব্যস্ত একাকী নিজেরই মনে। তোমার গোলাপ ছিন্ন হয়েছে শুধু এবং আমিও বিদ্ধ কাঁটার বনে। যে যুগে আমরা করি আজ বসবাস, তার সন্ত্রাসে জীবনের ভিত কাঁপে। তুমি কি...

যদি তুমি ফিরে না আসো- শামসুর রাহমান।

তুমি আমাকে ভুলে যাবে, আমি ভাবতেই পারি না। আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে তুমি আছো এই সংসারে, হাঁটছো বারান্দায়, মুখ দেখছো আয়নায়, আঙুলে জড়াচ্ছো চুল, দেখছো তোমার সিঁথি দিয়ে বেরিয়ে গেছে অন্তুহীন উদ্যানের পথ, দেখছো তোমার হাতের তালুতে ঝলমল করছে রূপালি শহর, আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে তুমি অস্তিত্বের ভূভাগে ফোটাচ্ছো...

তোমার সৃষ্টি ভিত্তি পাক- শামসুর রাহমান

কেন তুমি আজ এ-ভাবে তাকাও আমার দিকে? তোমার দৃষ্টি মুক্তি পেলো কি ঝোড়ো আকাশে? পাঁচ দশকের সত্তা আমার বাত্যাহত, দু'জনের মাঝে প্রণয়াকাঙ্ক্ষী পিশাচ হাসে। এ-রকম জানি প্রায়শই ঘটে, সিঁড়ির ধাপ বেয়ে উঠি আমি, তুমি নেমে যাও তরতরিয়ে। সংলাপহীন কাটে কতকাল, আমরা যেন দু'মেরুর প্রাণী। কারা বিষধোঁয়া দেয় ছড়িয়ে? কেউ কারো...

Tuesday, 18 August 2020

জলেশ্বরীর শিষ- ফারুক ওয়াসিফ

বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে গচ্ছিত হয়েছি মেঘের শরীর ঘেঁষে, এখানে তো দেশ নাই, ঘ্রাণময় স্মৃতি নাই কোনো ভাষায় আন্ধার টান শুধু, মুখে ধূলিগান— আমাদের দেশ নাই কোনো, কেবল ব্যথার মাচান। জল জবা জয়তুন (২০১...