Saturday, 29 August 2020

তোর কাছ থেকে দূরে- শামসুর রাহমান

তোর কাছ থেকে দূরে , সে কোন্‌ নিশ্চিন্তিপুরে পালাতে চেয়েছি
                              প্রতিদিন , বুঝলি মতিন !

হয়তোবা টের পেয়ে অবশেষে  নিজেই উধাও হয়ে গেলি
একটি নদীর তীরে  মাঠ - ঘেঁষা , গাছ- ঘেরা, জুঁই  কি চামেলি
ইত্যাদির ঘ্রাণময়  বিজন নিবাসে। আমি তোকে
দীর্ঘ  চৌদ্দ বছরের সাইকেডেলিক স্মরণের  তীব্র ঝোঁকে
                          ডাকি  মধ্যরাত্রির মতো  বুক  ছিঁড়ে বারংবার,
প্রতিধ্বনি , শুধু গূঢ়  প্রতিধ্বনি  ফিরে আসে মগজে  আমার ।

কেমন আছিস তুই?  এখনো  কি ভীষণ  অস্থির তুই, ওরে ?
এখনো কি অতি  দ্রুত হেঁটে  যাস দুঃস্বপ্নের  ঘোরে
অলীক অলিন্দে কোনো ? অবাস্তব  বন - বাদাড়ে  ঘুরিস একা
ছিন্ন বেশ , নগ্নপদ সন্তের মতন? তোর দেখা ,
মানে তোর ঝলমলে প্রকৃত  সত্তার দেখা পাবো কি  আবার
কোনো  দিন ? তোকে হারাবার
পর তুই অতিশয়  বেগানা  আমার বড়ো  বেশি উদাসীন
হয়ে গেলি , রুপান্তরে  আমার দুঃখের মতো , বুঝলি মতিন !

যখন এখানে ছিলি, বুকের নিকটে ছিলি, তোর হস্তদ্বয়
আমার স্বপ্নের ঝাড়লন্ঠন  বেবাক অতিশয়
হিংস্রতায় বারংবার  দিয়েছে দুলিয়ে । চুরমার
হয়েছে এ -ঘরে নিত্য যা কিছু ভঙ্গুর আর প্রগাঢ়  সুর্মার
মতো অন্ধকার চোখে  নেমে এসেছে  আমার ভরদুপুরেই
এখন এখানে নেই , তুই নেই ; আমার বুকের মধ্যে
                                           সবুজ পুকুর।

এইতো  সেদিন আমি খাতার পাতায়  মগ্ন ছিলাম একাকী
অপরাহ্ণে  অক্ষরের গানে তরঙ্গিত। ' সবই ফাঁকি ' ,
কে যেন চেঁচিয়ে বলে । দেখি খুব থম্থমে সমুখে দাঁড়িয়ে
কাল- কিশোরের  মতো তুই। যেন দীর্ঘ পথ  নিমেষে মাড়িয়ে
এসেছিস ব'লে দিতে আমার উদ্যম  সব এলোমেলো ,
                               দারুণ  বেঠিক ।
দিচ্ছিস চক্কর তুই ঘরময় , আমিও ঘুরছি দিগ্বিদিক
জনাকীর্ণ এ - শহরে কে জানে কিসের টানে পরিনামহীন ,
                                              বুঝলি মতিন !

যখন এখানে ছিলি , ছিলো  এক ঝাঁক  চিলের ক্রন্দন ঘরে ,
ছিলো তীক্ষ্ণ কলরব সকল সময় , মনে পড়ে ।
এখন আমার ঘর অত্যন্ত নীরব , যেন  স্লেট , মূক , ভারি ।
কখনো  চাইনি  আমি নিশ্চুপ  ঘর - বাড়ি ।

0 comments:

Post a Comment