Monday 29 June 2015

হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে....

হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। একদল তাঁর অন্ধ ভক্ত এমনই যে তাকে বিশ্বের সেরা লেখক বলতেও এরা দ্বিতীয় বার ভাবে না, অন্যদল চরম বিদ্বেষী এতটাই যে মনে হয় স্যারের বাড়ির ইয়ের বর্জ্য সব এদের উঠোনে গিয়ে পরে। 
আমি এ দুটোর কোনটাই নই। 
ওনার অনেক অনেক লেখা পড়ে আমি জাস্ট "থ" মেরে গিয়েছি... অসাধারণ এর চেয়েও বেশি মনে হয়েছে। 
হাসতে হাসতে ডিগাবাজি খেয়ে উলটে পড়েছি, আবার কান্না আটকাতে চোখ মুখ শক্ত করে বসে থেকেছি...
কিছু লেখা আবার প্রচন্ড হতাশ করেছে, সস্তা মনে হয়েছে, চাপে পড়ে বা জাস্ট লিখতে হবে বলেই লিখে আস্ত একটা বই ছাপিয়ে দিয়েছেন এমন মনে হয়েছে।

আমি মুগ্ধ হয়েছি, বিরক্ত হয়েছি।
তারিফ করেছি, কপাল কুঁচকে থেকেছি।
কিন্তু আমার অন্ধ আবেগ আসেনি, ভ্রান্ত বিদ্বেষ আসেনি।

অনেকে আবার লেখক হুমায়ুনের সাথে ব্যক্তি হুমায়ুনকে, তার দাম্পত্য জীবন কে শরবত বানিয়ে ফেলেন।
আমি এই বাতিকটায়ও আক্রান্ত নই।
যারা এ রোগের রোগী তাদের ও আমি হুমায়ুন প্রসংগে এড়িয়ে চলি।
এরা কোন কথা বুঝতে চাইবে না। শুধু শুধু আমার গুষ্টি উদ্ধার করে দেবে তাই।

আমি সাহিত্যের সুধা টা চেখে দেখতে ভালবাসি। আর সাহিত্যের বিশাল সাম্রাজ্যে "হুমায়ুন আহমেদ" একটা বিরাট সুসমৃদ্ধ রাজ্যের নাম। পরিব্রাজক হিসেবে এ রাজ্যে ঢুঁ মারাটাও আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তা নইলে যে অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে।
এজন্য হুমায়ুন প্রেমিক হতে হয়না।
আগ্রহই যথেষ্ট বলে বোধ করি। আর আগ্রহ উদ্রেকের প্রায় সমস্ত উপাদানই এ রাজ্যে আছে।
আর একটা রাজ্যের সব কিছুই যে অতুলনীয়, মোহনিয়, প্রশংসাযোগ্য হবে এমন নমুনা তো পরাক্রমশালী মুঘল রাও দেখাতে পারেনি। ওদের ও তো কত সীমাবদ্ধতা ছিল।


হুমায়ুন আহমেদ যেমন ৮০-৯০ এর দশকের শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনের টানা পোড়েন, মূল্যবোধের অদ্ভুত রকম স্পস্ট ছবি বার বার এঁকেছেন তেমনি একেবারে গ্রামীণ জীবন ধারার সাথেও আলাপ করিয়ে এনেছেন একি নৈপুণ্যে।
এত এত এত অসাধারণ সব চরিত্র, প্রেক্ষাপট, সময়, বিষয়বস্তু, কাহিনী, কোন টা রেখে কোনটার প্রতি আলাদা করে ভাল লাগার কথা বলব! আবার শেষের দিকের কিছু লেখা বিরক্ত লেগেছে যে খুব সেটার লিস্টও না হয় না দিলাম :)
বলেও আসলে শেষ করা দুষ্কর সবকিছু।

আর একটা কথা সেই সকল পাঠক দের জন্যে যারা, রবীন্দ্রনাথ সহ বাংলা সাহিত্যের সেই সময়কার অনেক রথী- মহারথী এবং ওপার বাংলার সমরেশ-সুনীল-শীর্ষেন্দু এই ঘরানার বই পড়ে এসে হুমায়ুন কে যাচ্ছে তাই বলে বিজ্ঞ সাজেন।
সবারই তো একটা নিজস্বতা আছে, নয় কি?
হুমায়ুন যদি রবি ঠাকুর বা সুনীল- সমরেশের মতই লিখবেন তবে আর তিনি হুমায়ুন আহমেদ হতেন কি করে!! আপনারও হুমায়ুন কে পড়ার কি দরকার!! ওঁদের কেই পড়ুন না শুধু।
হুমায়ুন আহমেদ একটা নিজস্ব ধারা তৈরি করেছিলেন সেটাই বা কয়জনে পারে? যেমনটা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
আর আমার মনে হয় হুমায়ুন আহমেদের এই প্রায় ৩ শতাধিক বই লিখে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন এটাই। নিজস্ব একটা ব্রান্ড/ ঘরানা তৈরি করতে পারা।
যদিও যে কারও দ্বিমত থাকতেই পারে।

পরিশেষে একটা কথা বলি, একচোখা পক্ষপাতিত্ব বা একরোখা বিদ্বেষ দুটোই কিন্তু খারাপ।
গোঁড়ামি সবক্ষেত্রেই বর্জনীয়।

বিঃ দ্রঃ জানিনা এই লেখার প্রতিক্রিয়া কি হবে। লেখকের অতিমাত্রায় ভক্তরা হয়তো কোন একটা ভুল ধরে বা সমালোচনা করেছি বলে আমার গুষ্টি উদ্ধার করে দেবেন।
আর বিদ্বেষী রা হয়ত আবার কেন প্রশংসা করলুম এই দোষ (!!!) ধরে আমাকে ধুয়ে দেবেন।

0 comments:

Post a Comment