ফেরার সময় বৃষ্টি নামে। বুকের মধ্যে ব্যক্তিগত মূর্ছনা
তুমি পড়ে ফেলেছ পাশবালিশ? অলিখিত ঝরনা?
*****
আমাদের
চটিপথ পলি জমে গুহা হয়ে গেছে। তার মধ্যে
স্ফটিক খুঁজেছ তুমি, পীচরঙা বিকেলের জ্বর?
আমাদের ঠোঁট থেকে কথা তুলে নাও, ঈশ্বর...
(কবিতাংশ)
ফেরার সময় বৃষ্টি নামে। বুকের মধ্যে ব্যক্তিগত মূর্ছনা
তুমি পড়ে ফেলেছ পাশবালিশ? অলিখিত ঝরনা?
*****
আমাদের
চটিপথ পলি জমে গুহা হয়ে গেছে। তার মধ্যে
স্ফটিক খুঁজেছ তুমি, পীচরঙা বিকেলের জ্বর?
আমাদের ঠোঁট থেকে কথা তুলে নাও, ঈশ্বর...
(কবিতাংশ)
১
কিছু একটা বলবে বলে
তুমি তার পেছনে ধাওয়া করেছ দূর
সে প্রতিটা বাঁক ঘোরার মুখে
তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে
ভ্রূ ভঙ্গিতে করছে ভাঙচুর
তুমি দৌড়াচ্ছ, ছুঁয়ে ফেলার আগেই
সে মোড় ঘুরছে, ভাঙছে ঢেউ
শেষ প্রান্তে এসে দেখলে
যে কথা বলবে বলে খুঁজেছিলে
তার বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে
সে কথাটা বলে গেছে অন্য কেউ...
৪
হত্যাকারী জানে
এই মূহুর্তে আলো পছন্দ করছ তুমি
তোমার আলোকে শেখাওনি জিততে গেলে
অন্ধকার ভালোবাসতে হয়
(কবিতাংশ)
আরো একটা বছর শেষ হয়ে গেলো।
বছরের প্রথম দিনে যে নীল সোয়েটারটা পরেছিলুম
বছরের শেষ দিনেও আমি সেটাই পরে আছি।
গায়ের রং হয়তো একটু উজ্জ্বল হয়েছে আমার, আর
কমে গেছে কোলাহলপ্রিয়তা।
অনেক অপছন্দের ব্যাপারও আমি এখন সহজে মেনে নিতে পারি,
একা একা রাস্তায় হাঁটার সময় আমি আর গান গাই না।
আরো একটা বছর কেটে গেলো, সারা বছরের
টুকরো টুকরো অপমানের ধারাবাহিক ছবি ভেসে আসছে মনে।
প্রোজেক্টারে ফাঁকা রীল ঘোরার মতো
কিরকিরে অবসাদ চারিদিকে।
তোমার কি মনে আছে, বছরের প্রথম দিনে
আমি তোমায় বলেছিলুম, আমার আর বাঁচতে ভালো লাগে না।
বছরের শেষ দিনে সেই কথাটাই একটু ফিরিয়ে বলতে চাই,
আমি ঘৃণা করি আমার বেঁচে থাকাকে।
এসব বর্ষাদিনে তুমি আমাকে ভেঙে দেবে। গোপনে
প্যান্ডোরার বাক্স খুলে উড়িয়ে দেবে রঙীন প্রজাপতি।
আমি কাঁদতেও পারবো না। কান্না শেখায়নি কেউ।
তবু আমার জানলা খুলে খুলে যায়। তুমি খুলে দাও
বেহেস্তের ক্লিপ। ভয় হয়, যদি এভাবেই বাঁধ ভেঙে যায়
যদি বুকে উঠে আসে বন্যার জল? তোমার জিভের নীচে
আমার অসমাপ্ত ঘরবাড়ি ভেসে আসে? চিঠি শেষ
এখন তোমার কাছে আমি মানে শাপলার ফুল
যেখানে জল জমে কান্না হয়নি কখনো
একটা বেড়াল শুধু বসে আছে ভেজা কার্নিশে.....
মেঘ ডাকছে ডাকুক
আমার কাছেই থাকুক
ভালো থাকবো, সুখে থাকবো-- এই বাসনা রাখুক।
কষ্ট হয়তো একটু হবে, এই তো ছিরির ঘর
আমার কাছে অল্প সময় বাইরে অতঃপর--
বৃষ্টি ভালো লাগছে যখন, পদ্মপাতায় রাখুক।
ওইটুকু তো মেয়ে
ছোট্ট আমার চেয়ে
এতোই যদি লজ্জা তাহার, দু হাতে মুখ ঢাকুক
আমার কাছে থাকুক, তবু আমার কাছে থাকুক।
চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙাল,
এ কথা বলিতে চাও বোলো।
এই ক্ষণটুকু হোক সেই চিরকাল;
তার পরে যদি তুমি ভোলো
মনে করাব না আমি শপথ তোমার,
আসা যাওয়া দুদিকেই খোলা রবে দ্বার,
যাবার সময় হলে যেয়ো সহজেই,
আবার আসিতে হয় এসো।
সংশয় যদি রয় তাহে ক্ষতি নেই,
তবু ভালোবাসো যদি বেসো।
বন্ধু, তোমার পথ সম্মুখে জানি,
পশ্চাতে আমি আছি বাঁধা।
অশ্রুনয়নে বৃথা শিরে কর হানি
যাত্রায় নাহি দিব বাধা।
আমি তব জীবনের লক্ষ্য তো নহি,
ভুলিতে ভুলিতে যাবে হে চিরবিরহী;
তোমার যা দান তাহা রহিবে নবীন
আমার স্মৃতির আঁখিজলে,
আমার যা দান সেও জেনো চিরদিন
রবে তব বিস্মৃতিতলে।
দূরে চলে যেতে যেতে দ্বিধা করি মনে
যদি কভু চেয়ে দেখ ফিরে
হয়তো দেখিবে আমি শূন্য শয়নে
নয়ন সিক্ত আঁখিনীরে।
মার্জনা করো যদি পাব তবে বল,
করুণা করিলে নাহি ঘোচে আঁখিজল,
সত্য যা দিয়েছিলে থাক্ মোর তাই,
দিবে লাজ তার বেশি দিলে।
দুঃখ বাঁচাতে যদি কোনোমতে চাই
দুঃখের মূল্য না মিলে।
দুর্বল ম্লান করে নিজ অধিকার
বরমাল্যের অপমানে।
যে পারে সহজে নিতে যোগ্য সে তার,
চেয়ে নিতে সে কভু না জানে।
প্রেমেরে বাড়াতে গিয়ে মিশাব না ফাঁকি,
সীমারে মানিয়া তার মর্যাদা রাখি,
যা পেয়েছি সেই মোর অক্ষয় ধন,
যা পাই নি বড়ো সেই নয়।
চিত্ত ভরিয়া রবে ক্ষণিক মিলন
চিরবিচ্ছেদ করি জয়।
'...একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে ৷'
'বলো ৷'
'মনে থাকবে, আমাকে ?'
'থাকবে ৷'
'...তবে, আর একটা কথা ৷'
'... বলো ৷'
'মনে থাকুক না থাকুক, আমি বলি, একটু মনে রেখো ৷'
চোখ ফেরাতে পারিনি
মিনিবাসে চলে গেছে বিকেল
দুটো ফিঙে জাপটাজাপটি করে
গুছিয়ে নিয়েছে সংসার
তার মধ্যে এক বিন্দু জল
স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে তোমার কপালে
যে আলো অন্ধ করে দেয়
আমি তার কাছে ঋণী
সে আলোয় দেখেছি তোমার
উপেক্ষা কতটা নরম হতে পারে
বৃষ্টি নামলে
উঠোনে জমেছে জল
আমার চোখের উপরে পা রেখে
হেঁটে যাও অতল
আশ্চর্য মিনিবাসের দিকে
চোখের কথা আর কে শুনেছে কোথায়
এক উঠোনে এত জল আটকে রাখা যায়!
কত কাছে এসেছিলে। অত কাছে এসে
সরে যাওয়া শক্ত, এ বয়সে।
কিন্তু সরে যাওয়াই নিয়তি।
চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে ছুরি খুলে নেওয়ার পরেও
আগুন কি ফোয়ারা চায় না? তখনও থর থর কেঁপে চলে
পাহাড় ঘুমন্ত আজ। ঢালু সূর্য। ছায়া পড়ছে জলে।
আগুন কি সম্পূর্ণ নেভে? দু-জনে জলের ধারে এলেই এখনও
তলা থেকে দেখা দেয় রক্তরঙ আভাতাপ--- ঘাটের পাষাণে
ধাক্কা দেয়, কিছুই না বুঝতে-চাওয়া ঢেউ
আবার কী লাভ তাতে? দমবন্ধ তাপ চেপে রেখে
কত পরিকল্পনায় আবার দু-জনে একলা হওয়া
কয়েক মুহূর্ত যেন কয়েক ঘণ্টার অবসান
দু-জন দু-জনকে শুধু মরিয়ার মতো ছেঁড়াখোড়া
আবার ক্লান্তির পর ক্লান্তি আর অনুতাপ
ঘাট থেকে ফিরে যাওয়া ঢেউ
এত যদি লুকোছাপা করলাম দু-জনে
বলো, শান্তি পেলাম কি দু-জনের কেউ ?
কিছুটা অংক মিলে যায়, কিছুটা দিন পাগলাটে
কষ্ট জমাট হলে শীত প্রবল শব্দ করে ফাটে
কিছুটা তোমার ঘুড়ি কাটে, কিছুটা আমার বলিরেখা
ঠিকানা পালটে ফেলে লোক, বিয়োগফলের থেকে শেখা
চোখের পশম ছুঁড়ে ফেলো। বাতিল পুরানো সোয়েটার
ট্রেনের কামরা খালি হলে ভীষণ কান্না পাবে তার
কান্নায় কী বা যায় আসে! শীতের আগুন মাপা শোক
জড়িয়ে ধরবে বলে তুমি এখনও বিষাদ ভালোবাসো
ভালোবেসে ফিরে আসো তুমি। জানালায় জমে যায় ঝুল
শীতের কুয়াশা জানে শুধু রোদের আদর ছিল ভুল!
আবার এসে দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে-
আবার অন্ধকার, অন্ধকারে ফসফরাসের দাঁত,
আমিষ গন্ধ, ফেরিওয়ালাদের হাতছানি।
আবার এসে দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে
একা, পরিত্রাণহারা।
গোপন ক্ষত, মায়া, অসহায় উদাসীনতা, জগন্নাথ।
ঝাঁপ বন্ধ করে কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়েছে
সেই আগুন থেকে আমি উত্তাপ শুষে নিই।
বার বার ফিরে আসি, আসতেই হয়,
ঝিনুকে পা কাটলে সহজে সারে না।
অন্ধকারে সমুদ্রের মুখোমুখি এসে দাঁড়াই। একা।
বুঝতে পারি আপনিও এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে।
সান্ধ্যকালীন বাজার এখন ধু ধু বালিয়াড়ি,
দূরে দিকচক্রবালের কাছে অস্পষ্ট এক আলোর সংকেত।
কোনো কথা হয় না, ইশারাও নেই কোনো,
শুধু বুঝতে পারি আমার সকল অন্ধকারে
আপনি নীরবে এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে।
সমস্ত ট্যুরিস্ট পায়ে পায়ে ঢুকে পড়েছে নিজস্ব ঠেকে।
আমাদের সমস্ত না-বলা কথা,
আমাদের সমস্ত না-গাওয়া গান মিশে যায়
সমুদ্রের অনর্গল গর্জনের ভিতর।
ঝিলকিয়ে ওঠে ফসফরাসের মায়া,
কাছে আসে, দূরে চলে যায়।
যে সমস্ত সূঁচ বিঁধে আছে পৃথিবীর গায়ে
তাকে তুমি সরিয়ে ঘন পায়ে
আমার বিছানার ধারে এসে দাঁড়াও
যে কথা বলবে বলে, ভুলে গেছ
শুধু স্পর্শটুকু মনে আছে ঘুমের পাশেই
ফুল ফুটে আছে রোদের আশ্চর্য বাগানে
সেখানে অসুখ নেই
তবুও
আজন্মকাল ধরে দেখেছি
ঘুমের আগে কতটা ওষুধ হয়ে যাও!
এভাবে কখনো বলিনি তোমায় আসতে
যতই রাত্রে ঝরে গেছে প্রিয় কান্না
কোনদিনও বলেছি কি ভালোবাসতে?
পায়ে লেখা আছে মাইলফলকে মৃত্যু
কে ভালো আছে- কেই বা পেরেছে জানতে
বিষাদে বিষাদে চমকে উঠেছে বিদ্যুৎ
তবু আসা যেত ফিরে ফিরে এই প্রান্তর
পাথরের মত বসে আছে। হুঁকো টানছে
তুমি ভুলে গেছ। আমিও এখন ক্লান্ত
রাতে ঘুম নেই। পোয়াতি নদীর কান্না
জ্বালিয়ে দিচ্ছে নদীপ্রান্তর, রতিসুখ
বুকের ভেতর হাত রেখেছিলে - 'আর না'!
আকাশে উঠেছে একফালি চাঁদ, কাস্তে
বৃষ্টি থেমেছে। ঘামে ভিজে আছে মরাঘাস
বলিনি কখনো। তবু যদি ভালোবাসতে!