Friday 3 April 2020

রুদ্র- অমিতাভ গুপ্ত

এখন নয়। অন্য একদিন
তোমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তেই
জন্ম নেবে একটি নীলশিশু
রুদ্র? নাকি, ঈশান তার নাম

তোমার বুকে কঠিন জন্মায়
তোমার বুকে কঠিন বড়ো হয়
তোমার বুকে শিশুর মতো সে
গভীর নীল নগ্ন বনচারী

যৌবনে তার ধূসর হবে দেহ
ছড়িয়ে দিও ভস্ম তার প'রে
কপালজুড়ে আগুন দিয়ো তাকে
আগুন, যেন পার্বতীর আদর

এখন নয়। নতুন কোনোদিন
বিষাণ এখন সহজে বাজবে না
এখন রাত সহজ আঁধার নয়
শ্মশান তবু স্বপ্নে ভরে যাক

স্নান- জয় গোস্বামী

সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার –
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে-

জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো।
তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক
ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান
হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে।

আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি
ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি
আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল
অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার?

শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে
এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা;
সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা
দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে,
জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোস্নার ধারণা দেব ব’লে
এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।

দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত –
যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে;
সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে
তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার…
পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি
সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে
উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায়।

একটা ফুলকির জন্যে - নবারুণ ভট্টাচার্য

একটা কথায় ফুলকি উড়ে শুকনো ঘাসে পড়বে কবে
সারা শহর উথাল পাথাল, ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে
কাটবে চিবুক, চিড় খাবে বুক
লাগাম কেড়ে ছুটবে নাটক
শুকনো কুয়োয় ঝাঁপ দেবে সুখ
জেলখানাতে স্বপ্ন আটক
একটা ব্যথা বর্শা হয়ে মৌচাকেতে বিঁধবে কবে
সারা শহর রক্ত লহর, আশ মিটিয়ে যুদ্ধ হবে
ছিড়বে মুখোশ আগ্নেয় রোষ
জ্বলবে আগুন পুতুল নাচে
ভাঙবে গরাদ তীব্র সাহস
অনেক ছবি টুকরো কাচে
একটা কুঁড়ি বারুদগন্ধে মাতাল করে ফুটবে কবে
সারা শহর উথাল পাথাল, ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে।

বসন্তের কবিতা- শ্রীজাত

ফোটে পলাশ থোকা থোকা, সে যে কীসের বহিঃপ্রকাশ
যেন রাগ করে খামোকা তুমি মুখ ফিরিয়েছ

নাম সর্বনাশের আঁধার, জোটে বেয়াক্কেলে রাধা
আমি মধুসূদন দাদার সঙ্গে বদল করি চোখ

দেখি জীবন কত ছোট, নেশা জড়ায় ওতপ্রোত
ভাসাই রোমানভের বোতল... আগুন ঠান্ডা করুক পেট

যদি বসন্তে না বাঁচি, তবে কীসের জন্যে আছি
পেরোয় আকাশ ছোঁয়া পাচিল আমার উড়ন্ত কার্পেট

আমি রাত কলেজে পড়ি, তুমি বিলাসখানি তোড়ি
মাঝে হাজার ঘুমের বড়ি... আমার ঘুম আসেনা তাও

চুমু বিষের চেয়েও তেতো... সবই সামলে নেওয়া যেত
যদি আমার মাথার ভেতর তোমার চোখ দুটো নামাও।

দ্যাখো কেমন কানায় কানায় ভাসছে নীল কচুরিপানা
শুধু তোমার হাতেই মানায় আমার নতুন লেখা বই

তুমি কাব্যে পেরোও শতক, আমি ক্লান্ত অনুঘটক
চির জ্যামের মধ্যে অটো তুমি দিগন্তে লাগসই

দুটো বাতিল ট্রেনের মত চল কারশেডে ঘুমোই

ভালবাসা- অরণি বসু

শুধু হাসি-মশকরা দিয়ে তো আর দিন চলেনা
অভিমান আসে, অভাব এসে খেলা দেখায়।
মনখারাপ তো কাঠবেড়ালি, আসে আর যায়।
রাগ চোখ পাকায়
ছুটে আসে অপমান, জ্বালা ধরিয়ে দেয় গায়ে।

আমি উন্মুখ হয়ে থাকি ভালবাসার জন্যে-
নিঃশ্বব্দে ভালবাসা এসে পাশে বসে
মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়
জানি চলে যাবে তবু বলি, যেওনা ছুঁয়ে থাকো
বলি, সামান্য লোহাকে সোনা করে দাও
ভালোবাসাই শুধু পারে অন্ধকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিতে।

আরোগ্য- নবনীতা দেবসেন

শুধু তুমি সুস্থ হবে।
আমি দিয়ে দেবাে আমার কোজাগরীর চাঁদ,
শাদা দেয়ালের ময়ূরকণ্ঠী আলো,
দিয়ে দেবাে বিগত বছরের মরা পাখির মমতা,
আর আগামী বছরের কলাগাছটির স্বপ্ন।

চ'লে যেতে যেতে সবাই তাে তাই ব'লে গেলাে।

কুন্তী নদীর গেরুয়া জল তার সবুজ ছায়া-কাঁপা ঠাণ্ডা গলায়
আমাকে বলেছে,
শুকনাে সােনালি গােরুর গাড়িগুলো
ক্লান্ত কাদাটে গলায় আমাকে বলেছে,
শেষ হেমন্তের বুড়ো সবুজ পাতারা
আসন্ন মৃত্যুর খস্ খসে গলাতে বলেছে

তুমি সুস্থ হলেই ওরা আবার ফিরবে ।

এমন কি
তুলসীতলার যে-প্রদীপটি ধ'রে
তুমি আমার মুখ দেখেছাে, তাকেও ভাসিয়ে দিয়ে,
একটি শুভ্র স্তব হ'য়ে জ্বলবো তােমার শিয়রে
আসুক, ওরা ফিরে আসুক, যারা চিরকাল
শুধুই চ'লে যাচ্ছে, এখান থেকে অন্যখানে
উৎপাটিত একগুচ্ছ কচি সবুজ দূর্বার মতাে
তুচ্ছ, উষ্ণ, কাতর
আমি তােমার যন্ত্রণা মুছে নেবো :
তার বদলে, ঈশ্বর, তার বদলে আসুক
তােমার কাঙ্ক্ষিত আরােগ্য।

Thursday 2 April 2020

বিদায় বন্ধু - সৃজা

তোর কাছে দেখি ফিরে আসে চেনা আলো
তাই, আমার আকাশে নিভে যায় খুশি, তারা
জানি চলে যাবি। চলে যাওয়াটাই ভালো
শুধু, আমার কাছে তো কেউ নেই তুই ছাড়া!

সেই পুরনো মায়াটি জড়ালে আগের মত,
তোর চোখে মুখে জমা সব মেঘ যাবে সরে।
আমি ক্ষণিকের লোক, ভুলে যাবি ক্রমাগত...
শুধু, স্মৃতিটুকু থাক অক্ষরে অক্ষরে৷

এই জীবন আবারও চোরাবালি হয়ে আসে
সব অভিমান মিলে চেপে ধরে রাখে পা,
ছুটে যেতে চাই, যেতে চাই তোর পাশে
আমি একা লোক... আর পেরে উঠি না।

দূর থেকে দেখি পুরনো একটা খুশি
তুই ভেসে যাবি, আমি বেছে নেব ক্ষয়;
তাই আজন্মকাল দুঃখটুকুই পুষি
তবু তোর কাছে সব বলার ইচ্ছে হয়।

আর কিচ্ছু চায় না এই জীবনের ক্ষত
শুধু পাশে দাঁড়ানোর একটা মানুষ ছাড়া,
যে ধুম জ্বরে মাথা ধুইয়ে দেবার মত
আর সাড়া না পেলেই জড়ো করে নেবে পাড়া।

জানি সবটুকু তুই ভুলে যাবি একে একে-
কিভাবে বেঁধেছি, কিভাবে ডেকেছি তোকে?
পরিচিত লোক ফিরে এসে গত রাতে
আবারও তোর ওই বুকের বাঁদিকে ঢোকে।

ভয় এসে জমে চোখেদের ধার ঘেঁষে
আমি আজও সব ব্যথা বয়ে নিতে পারি!
তোরা ভাল থাক। ভাল থাক সবশেষে।
কেননা তোদের ভাল থাকা দরকারি।

তাই, আমার সঙ্গে আজ থেকে তোর আড়ি...
এবার আমার সরে যাওয়া দরকারি
কিচ্ছু না বলে মরে যাওয়া দরকারি।

রুদ্র গোস্বামী

"মানুষের এটা একটা স্বভাব! যখনই তার বিপরীতে থাকা মানুষটি তাকে ভরসা করতে শুরু করবে, ঠিক তখনি সে গুপ্ত খাপ থেকে বার করে আনবে অবহেলার ছুরি। মানুষ জানে এই তার একমাত্র আবিষ্কার যা শরীর না ছুঁইয়েও তুমুল কাটতে পারে।"

- রুদ্র গোস্বামী

মরবার আগে যেন তোকে দেখে যাই- সৃজা

রাতের শরীর পুড়ে খাক হয়ে গেছে
যেন আর ভয় নেই, নেই মৃতদেহ
কান্নার এপিটাফে বরফ পড়েছে
এভাবেই অসময়ে ভালবেসে যেও।

আগুনে আগুনে যদি হয়ে যাই ছাই,
পুরনো গানের মানে ভরে দিও চোখে
এই মৃত পৃথিবীর সব ভেসে গেলে(ও)
আমাদের ভালবাসা দেখে যেন লোকে।

তুমি যেন ঝড়ে পাওয়া প্রাচীন অতিথি
মায়াকে সরিয়ে দিলে জুড়ে বসো আরও!
ক্ষতয় ক্ষতয় ভেঙে যাওয়া পরিমিতি
গাঢ় ভালবাসা দিয়ে ঢেকে দিতে পারো

অভিমান জড়ো করে কার্নিশে থামি,
মৃত্যুর মুখ থেকে টেনে নিয়ে আসো।
প্রেমিকের চোখে জল চায়না আগামী...
পারোনা শাস্তি দিতে, তাই ভালবাসো

দেখা হবে কান্নায়, এক গলা জলে
জুড়ে যাবে আলোকিত সেতু আছে যত
দেখা হবে নিভৃতের শেষ কোলাহলে
ভালবাসা এত প্রিয়, এত তথাগত।

আমার ব্যথার গাছে কাল খুব রাতে
একটা জোছনা ফুল ফুটে গেল বুঝি...
রক্ত মোছার পরে পুরনো আঘাতে
ভালবাসা দিয়ে ঠাসা ঔষধি খুঁজি।

ভয় ভেঙে দিতে তবে তুই এসেছিলি?!
রাতের শরীর পুড়ে খাক হল তাই...
আর কিছু চাইছি না জীবনের থেকে-
মরবার আগে যেন তোকে দেখে যাই
মরবার আগে যেন তোকে রেখে যাই।।  ❤

রাতজাগা তারা - সৃজা ঘোষ

বলি না নিজের কথা কোনো অবসরে
রাত গুলো বড় হয়, গলা চেপে ধরে।

ভাবি ঘুম এসে যাবে, চোখ বুজে শুই
কত কি হাতড়ে মরি, পাই না কিছুই।

ওষুধ জরুরি তবু অনুমতিহীনা
সারারাত জেগে থাকি, প্রশ্ন করিনা-

কেন আমি পারছিনা একা একা আর?
কেন সব্বাই ছেড়ে যাবে প্রতিবার?

কেন বিপদের সাথে সখ্যতা তোর-
আমি কিছু বলবনা? করব না জোর?

অধিকারবোধটির কত পরিমাণ?
কত গান? অভিমান... কত পিছুটান?

ঘড়ির শব্দ বাড়ে আর বাড়ে শীতও
তোকে নিয়ে ভয় হয় তবু বলিনি তো...

হারানোর নেই কিছু এতটাই ভাঙা
কুমীরে কুমীরে কবে ভরে গেছে ডাঙা

চাঁদের উঠোনে স্মৃতি খুইয়েছে হাসি
একা চিৎকার করি- বাসি, ভালবাসি।

যেদিনটা তুই এলি, সেই দিন রাতে
কথা হয়েছিল হেঁটে যাব একসাথে

তবু ঝুঁকি বোধ করি তোর প্রিয়জন-
যতটুকু আমি, তার চেয়েও আপন।

তোর ওই থাকাটুকু বুকে নিয়ে বাঁচা
ভালবাসা চিরকালই বিদঘুটে খাঁচা

ভেতরে যত্ন নিয়ে খুলে দেয় বেড়ি-
কেউ আগে চলে যায়, কেউ করে দেরি।

আর যারা থেকে যায় তারা প্রয়োজন
ধরে ফেলে ক্ষত সব, পড়ে ফেলে মন...

আমি তো ব্যথার জ্বরে ফুটে ওঠা তারা
কিভাবে বাঁচব বল উষ্ণতা ছাড়া?

একটাই খুঁটি শুধু, সেইটুকু ধরে-
মৃত পাখি ডানাদুটো ঝাপটায় জোরে।

বাঁচবার নেশা নেই, ফের হারানো ভয়
একটা পিঠেও আর কত বল সয়?

বিপদের ভাবনায় তোর মুখ দেখে
শিউরে উঠছি আমি সেই কবে থেকে।

তাই এত সাবধানী বারণের ঘোরে
এইটুকু লিখে রাখি রাতের অক্ষরে-

যদি না সুযোগ পাই এইভাবে আর,
ভালবাসা জড়ো করে যাই বারবার...

মাঝরাতে দৌড়ই, ছাদে গিয়ে থামি
তোর নিঃশ্বাস শুনে বেঁচে আছি আমি
তোর নিঃশ্বাস পেলে বেঁচে যাব আমি।।

শুধু তুই - সৃজা ঘোষ

তুই শুধু ভাল হয়ে ওঠ। অসুখ তো আমার অতিথি।
তেমন হলে বয়ে নেব আমি ভয় জোড়া সব গাঢ় শীতই

তুই শুধু গান গেয়ে চল। মৌনতা সাজে না ও চোখে
তেমন হলে আমি বলে যাব কারা কারা দায়ী ছিল শোকে!

তুই শুধু সাবধানে থাক। আমার তো ছাদই গেছে উড়ে
তেমন হলে ছাই হব আমি সব ভুল অপমানে পুড়ে।

তুই শুধু শান্ত হয়ে যা। এর বেশি চাওয়া নেই আজ
তেমন হলে সয়ে নেব আমি বিনা মেঘে সবকটা বাজ

তুই শুধু হাসিটুকু রাখ৷ দূর থেকে যেন যায় দেখা
তেমন হলে রয়ে যাব আমি এই জ্বরে... ঠিক... একা একা

তুই শুধু সাহসী হ শেষে, প্রিয় দুটো চোখে বোঝা টান
তেমন হলে ডুবে যাব আমি কাটিয়ে এ শেষ অভিমান।

তুই শুধু ঘর খুঁজে পা। আমার তো সবই গেছে ঝড়ে
তেমন হলে সরে যাব আমি, কত লোকই কতভাবে মরে

তেমন হলে মরে যাব আমি। তুই বাঁচ আমার অক্ষরে

ঘুম এনে দাও- সৃজা ঘোষ

রাত যত বাড়ে, তত একা হয় লোকে
ঈশ্বর, ঘুম দাও অভিমানী চোখে।

হাওয়ার মধ্যে রাখো বিষ ঔষধি
স্বপ্নতে দুটো গাছ, ফুল, প্রিয় নদী

এত ব্যথা তবু পাতা ভারী হয় কই!
চিৎকার করে ডাকি, শোনো না কিছুই?

ভোর যত কাছে আসে, তত বাড়ে ভীতি
অভিনয় ক্লান্তিরই নীরব জ্যামিতি

চাঁদ জানে শুতে যাই হাতজোড় করে
অনুরোধে ঘুম রাখি, নেশা- অক্ষরে

মৃত্যুটি পাপ বলে যাই না সে স্রোতে
ভালবাসবার তুলো ভেজে রক্ততে;

কোনখানে গেলে বলো ঘুম পাওয়া যাবে
ক্লান্তি রাস্তা চিনে ঠিক পৌছাবে।

ক্ষতর দিব্যি- শুধু এটুকুই চাওয়া
বিশ্বাস করে ঠকা, ঘুমে জিতে যাওয়া

পাশ ফিরে বলব না- কেউ নেই কেন
শুধু তার আগে চোখ লেগে আসে যেন

মাথায় বোলানো হাত? চাইছি না তাও...
তুমি শুধু দয়া করো, ঘুম এনে দাও

টুকরো সৃজা

* ব্যাখ্যা করে ক্লান্ত। ফলে বলব না আর খুলে-
কেন তুমিই রইলে আমার দুঃখ পাওয়ার মূলে                                    

*তোমার ইচ্ছে নেই। আমারও ভরসা নেই জোরে...
তাই একা ভালবাসি; পুড়ে যাই ভেতরে ভেতরে

* যেসব কান্না আজও বৃষ্টিতে ঢাকে,
সেই অসহায়তায় রেখেছি তোমাকে।

*হাসলে যে ফুলঝুরি, তার চোখই মাঝরাতে লাল
বাইরে দেখতে সুখী, ভেতরে ব্যথার কঙ্কাল...

* থাকার যে লোক, এমনি থাকে। ফেরার মানুষ ফেরে
কি লাভ হবে বল তো দেখি- রোজ নিজেকে মেরে?

*ব্যাখা করা অদরকারী। বোঝার মানুষ হলে,
চোখের দিকে তাকিয়ে সে লোক সবটা দেবে বলে...

* বেশ তো আছি। হাসির আওয়াজ যাচ্ছে কানে শোনা?
ঠিক কতটা কষ্ট পেলাম- তোমাকে বলব না।

* অথচ তোমায় আজও ভালবাসি আমি
এত সব ব্যথা, এত সব ভিড় ঠেলে!
ঘুমের মধ্যে এখনো স্বপ্ন দেখি-
আমার কান্না দেখে তুমি ফিরে এলে...
চোখের সামনে এখনো সবটা দেখি-
তুমি যাচ্ছিলে, ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে।

*গা পুড়ে যায় পুড়ুক তবু ছাই হবো না মোটে
জ্বরের ঠোঁটে এসব দিনে নতুন প্রলাপ ফোটে
বাড়াবাড়ি করবে পারদ, পেরিয়ে যাবে ঘর
তোমার চোখে রাগ দেখেছি। ছোঁয়াতে ঈশ্বর... ❣

*আজও অসুখিনী পায়ে পায়ে হাঁটে, পেরোতে পারেনা পথও
নিজের ব্যথাতে ওষুধ না দিয়ে, ঢাকে অন্যের ক্ষত।
ভালবাসলেই হবে সে মায়ের মত।

* পালিয়ে যাবার অনেক উপায়, সব কি সবাই শেখে?
কেউ ধার নেয় স্বেচ্ছামরণ, কেউ কবিতা লেখে।

* মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে এবং বেড়ায় দৌড়ে
উদ্ধত মেয়ে বাইরে কঠিন, ভেতরে আটপৌরে

* সব্বাই ছেড়ে দেবে একা, একাই তো ঝড় সামলাবো...
শুধু খুব ভয় পেয়ে গেলে, মাঝরাতে তোর কাছে যাব।

* কিছুটা দেখতে পাই, বাকিটা ঝাপসা হয়ে থাকে
হঠাৎ কান্না পেলে চশমাটি বাঁচায় আমাকে।

*ভালবাসা ফিরে যায়, থাকে মায়াটাই
তোমাকে বাঁচাই আর নিজে মরে যাই।

* ব্যথার ওপর ছেটাচ্ছি বিষ, ক্ষতর ওপর নুন প্রলেপ
মরার চেয়েও অনেক কঠিন মরতে চাওয়ার পদক্ষেপ।

* লুকিয়ে রেখে লাভ কি হবে? তার চেয়ে আনো কাছে...
আমার ব্যথায় এখন শুধুই ক্লান্তি জমে আছে।
যন্ত্রণাকে জড়িয়ে ধরি, দুঃখ প্রিয়জন।
আমার কি স্রেফ ঘর গিয়েছে? মন ভেঙেছে, মন...

* মান অভিমান ঝগড়া হবার পরেও
যার কাছে ঠিক ফিরতে পারে মন,
ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে ওঠা চোখের
তার মতো এক বন্ধু প্রয়োজন।

 *তুমিও যেদিন ক্লান্ত হবে আর হারাবে খেই,
বুঝবে- কেন ভাঙা মনের সুযোগ নিতে নেই
না শুকোনো কারোর ঘায়ে আঘাত দিতে নেই
জড়িয়ে নিতে না শিখলেও, পুড়িয়ে দিতে নেই...
কষ্ট দিতে নেই গো। এমন কষ্ট... দিতে নেই।
একটা দুটো মিথ্যে বলি, মিথ্যে বলা ভালো।
আমার ঘরে সুখ ছাপোষা, দুঃখেরা জমকালো...
তাই কান্না গিলে মিথ্যা বলাই ভালো।

*এত ভাল হও যে আঘাতদায়ীও লজ্জা পাক, এত আলো হও যে বিশ্বাসঘাতকেরও মাথা নীচু হয়ে আসুক।

*একটা দুটো মিথ্যে বলি, মিথ্যে বলা ভালো।
আমার ঘরে সুখ ছাপোষা, দুঃখেরা জমকালো...
তাই কান্না গিলে মিথ্যা বলাই ভালো।

*হঠাৎ বৃষ্টি নামে, একা একা ভিজে যায় চোখ
নীলচে শরীর থেকে খসে পড়ে ব্যথার পালক;
কাঁচ ভেঙে চুরমার। ভালবাসা ছটফট ক'রে
কিচ্ছু না বলে আজও মরে যায় ভেতরে ভেতরে।

*মানুষ মানুষ মানুষ
কত মানুষ চতুর্দিকে!
তবু ভালবাসার একই অভাববোধ

আমার ভাল্লাগেনা জানো,
তবু তোমাকে সামলানো-
যেন মরার আগেও একটু প্রতিরোধ

বান্ধবীমন- সৃজা ঘোষ

আলোর কাছে কে আর ঋণী? কে আমাদের মতন সোজা
জীবন মানে মুখোশ ঘেঁটে মানুষ কেবল মানুষ খোঁজা।

হঠাৎ কোন্ এক ফিকির থেকে, পেলাম যেন মনের মিলও
দুটো মানুষ হাঁটতে গিয়ে এ ওকে ঠিক সঙ্গে নিল!

মাটির কাছে বসল দুপুর, করল উপুড় ব্যথার খাতা
জীবন যদি উপন্যাস হয়, বন্ধু তবে শ্রেষ্ঠ পাতা।

যত্ন নিতে কি আর লাগে? দু একটা ফুল, অল্প হাসি
বোকার মতন কাঁদতে গিয়েও জড়িয়ে বলা- ভালই বাসি

বলার আগেই বোঝার নিয়ম, যেকটা মন ফেলল ধরে
তাদের কাছে শক্ত মানুষ জল হয়ে যায়, হাওয়ায় ওড়ে

ভয়ের ঘোরে কাঁপতে দেখে, কেউ দাঁড়ালে হাতের পাশে
সন্ধ্যে নামার একটু আগে পাথর চোখেও বৃষ্টি আসে

জীবন মানে নতুন কি আর? আজকে বাঁচা, কালকে মরা
আমার কাছে বন্ধু মানে এমনি দেখা, জড়িয়ে ধরা।

জানিনা আর কষ্ট কত? কি আমাদের ভাগ্যলিখন?
তোর সঙ্গে হাজার বিকেল কাটিয়ে দেব, বান্ধবীমন...