Saturday, 4 April 2020

ঘা খাওয়ার পর- সৃজা ঘোষ

অভিমান গাঢ় হোক তবু উহাদের ক্ষমা করা শ্রেয়। কতটা রক্তপাত হবে- সে হিসেব ভুলে, পরিমেয় আঘাতের বালি গেলে ঝরে, ভরসার দিকে নিই চোখ- ক্ষত শুধু আলগোছে হাসে, বলে 'সকলের ভালো হোক'। সময় আর সহজাত নয় বিশ্বাসে দাঁড়ানোর কালে নীতি ঘেঁষে জীবনের গান চুপ করে স্বরলিপি জ্বালে; কারুকাজ ফুটে উঠে তাতে গান হয় স্বাধীনতাকামী এইসব...

রোগ- সৃজা ঘোষ

হাওয়াদের সাথে কাঁচ গুঁড়ো হয়ে মেশে, পাতাদের কাছে ঝিম হয়ে আসে ঘ্রাণ- হাত ধরে এনে মাঝপথে ছেড়ে দেওয়া মানুষও এখন খুঁজছে পরিত্রাণ! শহরের সাথে ধূলো ঝড়ে তোলপাড় ভূমিকম্পের খবর ছড়ায় লোকে... বাস-ট্রাম ধরে বাড়ি ফেরবার তাড়ায় প্রেমের দিনেও আমি মেরে ফেলি ওকে। উঠে আসে সেই বাতাসিয়া চৌকাঠ। থরথর করে কাঁপে প্রিয় তারা কটা তোমাকে...

ওই পাখিটা পাখিমাত্র- রণজিৎ দাশ

যে মুহূর্তে তুমি বুঝতে পারবে ওই পাখিটা দেবী নয় ,ওটা একটা নগণ্য পাখি মাত্র , সেই মুহূর্তে তুমিপক্ষী - নিপীড়ন থেকে চিরতরে মুক্ত ও স্বাধীন ! তোমার গলায় গান , ফুলেরা তোমার ইচ্ছাধীন ! যে বাগানের মধ্যে তুমি, মূর্খ তরুণের মতো, একটা মোহিনী পাখির ছলনায় ঢুকে পড়ে, তার ক্রীতদাস হয়েছিলে,সেই বাগানের গেটে লেখা...

শূন্যের ভিতরে ঢেউ– শঙ্খ ঘোষ

বলিনি কখনো? আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে। এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনে সেই এক বলা কেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়ো কোনো ভাষা নেই কেননা শরীর তার দেহহীন উত্থানে জেগে যতদূর মুছে নিতে জানে দীর্ঘ চরাচর তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই। কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রাম সকলেই...

হৃদয় অবাধ্যমেয়ে- মন্দাক্রান্তা সেন

হৃদয় অবাধ্যমেয়ে ওকে   কোনও  পড়া বুঝিও না বইখাতা ছিঁড়ে একশা , থুথু  দিয়ে  ঘ'ষে মুছে ফেলেছে  গাঢ়  বিধিলিপি । নীল ব্যাকরণের পাতায় লিখে রেখেছে ছেলেদের নাম.... এমন কি , ছবিও ! হৃদয়  অবাধ্যমেয়ে তাকে কি শাস্তি  দেবে , দিও...

তোমার ক্ষমায় স্নাত- অমিতাভ দাশগুপ্ত

মেঘের খোঁপায় ফুটেছে আলোর ফুল, তোমাকে কি দেব অনন্য উপহার? কোন ঘাটে পার হ'তে চেয়েছিলে খুঁজে অনুকূল হাওয়া, নাবিক বাছো নি, এ-নৌকো বেয়ে যায় কি সুদূরে যাওয়া ভাবো নি, নরম অঞ্জলি মেলে ফুল ভাসালে জোয়ারে রাজহাঁস বলে--সব ভুল, সব ভুল! কেবল কথায় বহে গেল বেলা জল ঝরে গেল মেঘে, বুকের গভীরে কি শঙ্কা ছিল জেগে বলে নি...

ছিন্ন বিচ্ছিন্ন- শক্তি চট্টোপাধ্যায়

একটি জীবন পোড়ে, শুধুই পোড়ে আকাশ মেঘ বৃষ্টি এবং ঝড় ফুলছে নদী যেন তেপান্তর চতুর্দিকে শীতল সর্বনাশে- পেয়েছে, যাকে পায়নি কোনোদিনও একটি জীবন পোড়ে, কেবল পোড়ে আর যেন তার কাজ ছিল না কোন...

হৃদপিণ্ড এক ঢিবি মাটি- জয় গোস্বামী

হৃদপিণ্ড–এক ঢিবি মাটি তার উপরে আছে খেলবার হাড়। পাশা। হাড়। হৃদপিণ্ড, মাটি এক ঢিবি তার উপরে শাবল কোদাল চালাবার অধিকার, নিব...

অলংকার- অরুণ মিত্র

কবিতায় কথা বলি, তা নাকি তক্ষুনি হয়ে যায় অলংকার। তবে এই অলংকারই পরো। এ-সজ্জা বানাতে আমার তো দিন যায় রাত যায় বিন্দু বিন্দু রক্ত যায় ; একবার পরে দেখতে পারো কোথায় তা ঠিকরোয় আলো, প্রসাধনে, না তোমার হৃৎপিণ্ডে? হাজারটা কোণ চামড়াকে আদর করে, না রক্তাক্ত পথ ধরে হাড়ে বেঁধে? পরো, পরে দ্যাখ...

চিত্রকল্প- আবদুল মান্নান সৈয়দ

চিত্রের চেয়েও আমি চিত্রকল্প বেশি ভালোবাসি। দিনের চেয়েও রাত্রি। রাত্রির চেয়েও বেশি চাঁদ। ভালোবাসি সত্যের চেয়েও বেশি এমন প্রমাদ, যার মধ্যে বিচ্ছুরিত মগ্ন স্বপ্নরাশি। এভাবে একদা কি ভালোবেসেছিলাম তোমার অভাব? তুমি জানো নাই, প্রিয়তমা, তোমার চেয়েও বেশি ভালোবাসি তোমার উপমা। --এর কোনো চারা নেই, এরকমই আমার স্বভাব। ওগো...

Friday, 3 April 2020

দ্বীপান্তরী- নবনীতা দেব সেন

এখন তাহ'লে আমি বিনা প্রতিবাদে সব অভিযোগগুলি মাথা উঁচু ক'রে মেনে নিয়ে স্পষ্টত অন্তরশূন্য প্রস্তরফলক হ'য়ে যাবো | আমি আমাদের সব প্রীতিহীনতার পাপ নিজেই স্বীকার ক'রে নিয়ে, নিজের মণ্ডলে স'রে যাবো | একদা নির্জন রাত্রে অকস্মাৎ শূন্য আদালতে বিচারক. বাদীপক্ষ, উকিল, কেরানি একজোটে চায়ের টেবিলে গোল হ'য়ে, আমাকে...

জরাস্বপ্ন- অজিত দত্ত

এই যেন সত্যি হয়, একদিন তুমি আর আমি বাহুতে জড়ায়ে বাহু - জরাশ্লথ, দুর্বল, পান্ডুর, নিষ্প্রভ নয়ন মেলি', অর্ধস্ফুট কম্পিত ভাষায় উচ্চারিতে পারি যেন সমকন্ঠে 'আজো ভালোবাসি'। এ-দেহ কুৎসিত হবে, আকুঞ্চিত কপাল কপোল, বিস্বাদ অধর ওষ্ঠ, ন্যুব্জ দেহ, তরল-তারকা, যৌবন ঝরিয়া যাবে, শুধু যেন থাকে যৌবনের একমাত্র অবশিষ্ট...

সাতটি জন্ম- অমিতাভ দাশগুপ্ত

সাতটি জন্ম পায়ের পরে তুলে দিচ্ছি, তুমি আমায় মানুষ বলে ভাবলে না, ঐ সিসের মতো নরম ঠোঁটে তেমন করে ডাকলে না ; দুই শীর্ণ হাঁটু প্যান্ট মুড়ে অবহেলায় ক্ষয়ে যাচ্ছি অনাদরে বয়ে যাচ্ছি, মুখের দিকে তাকালে আজ হঠাৎ কঠিন আমায় চেনা, ডান-বাঁয়ে খাদ, সামনে খাড়াই, তোমায় খোঁজা ফুরোবে না। যে দিকে পোড়া দুচোখ চলে, সবার মুখে...

কলহ- প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত

এভাবে খেলার কোনও মানে হয় না-- তুমি যে নেশার ঘোরে উল বোনো, চাঁদা পাও এখানে সেখানে তারই বা কী মানে? বেঁচে থাকা যায়, যদি ভাব হয় সমানে-সমানে...