"মানুষের এটা একটা স্বভাব! যখনই তার বিপরীতে থাকা মানুষটি তাকে ভরসা করতে শুরু করবে, ঠিক তখনি সে গুপ্ত খাপ থেকে বার করে আনবে অবহেলার ছুরি। মানুষ জানে এই তার একমাত্র আবিষ্কার যা শরীর না ছুঁইয়েও তুমুল কাটতে পারে।"
- রুদ্র গোস্বামী
"মানুষের এটা একটা স্বভাব! যখনই তার বিপরীতে থাকা মানুষটি তাকে ভরসা করতে শুরু করবে, ঠিক তখনি সে গুপ্ত খাপ থেকে বার করে আনবে অবহেলার ছুরি। মানুষ জানে এই তার একমাত্র আবিষ্কার যা শরীর না ছুঁইয়েও তুমুল কাটতে পারে।"
- রুদ্র গোস্বামী
রাতের শরীর পুড়ে খাক হয়ে গেছে
যেন আর ভয় নেই, নেই মৃতদেহ
কান্নার এপিটাফে বরফ পড়েছে
এভাবেই অসময়ে ভালবেসে যেও।
আগুনে আগুনে যদি হয়ে যাই ছাই,
পুরনো গানের মানে ভরে দিও চোখে
এই মৃত পৃথিবীর সব ভেসে গেলে(ও)
আমাদের ভালবাসা দেখে যেন লোকে।
তুমি যেন ঝড়ে পাওয়া প্রাচীন অতিথি
মায়াকে সরিয়ে দিলে জুড়ে বসো আরও!
ক্ষতয় ক্ষতয় ভেঙে যাওয়া পরিমিতি
গাঢ় ভালবাসা দিয়ে ঢেকে দিতে পারো
অভিমান জড়ো করে কার্নিশে থামি,
মৃত্যুর মুখ থেকে টেনে নিয়ে আসো।
প্রেমিকের চোখে জল চায়না আগামী...
পারোনা শাস্তি দিতে, তাই ভালবাসো
দেখা হবে কান্নায়, এক গলা জলে
জুড়ে যাবে আলোকিত সেতু আছে যত
দেখা হবে নিভৃতের শেষ কোলাহলে
ভালবাসা এত প্রিয়, এত তথাগত।
আমার ব্যথার গাছে কাল খুব রাতে
একটা জোছনা ফুল ফুটে গেল বুঝি...
রক্ত মোছার পরে পুরনো আঘাতে
ভালবাসা দিয়ে ঠাসা ঔষধি খুঁজি।
ভয় ভেঙে দিতে তবে তুই এসেছিলি?!
রাতের শরীর পুড়ে খাক হল তাই...
আর কিছু চাইছি না জীবনের থেকে-
মরবার আগে যেন তোকে দেখে যাই
মরবার আগে যেন তোকে রেখে যাই।। ❤
বলি না নিজের কথা কোনো অবসরে
রাত গুলো বড় হয়, গলা চেপে ধরে।
ভাবি ঘুম এসে যাবে, চোখ বুজে শুই
কত কি হাতড়ে মরি, পাই না কিছুই।
ওষুধ জরুরি তবু অনুমতিহীনা
সারারাত জেগে থাকি, প্রশ্ন করিনা-
কেন আমি পারছিনা একা একা আর?
কেন সব্বাই ছেড়ে যাবে প্রতিবার?
কেন বিপদের সাথে সখ্যতা তোর-
আমি কিছু বলবনা? করব না জোর?
অধিকারবোধটির কত পরিমাণ?
কত গান? অভিমান... কত পিছুটান?
ঘড়ির শব্দ বাড়ে আর বাড়ে শীতও
তোকে নিয়ে ভয় হয় তবু বলিনি তো...
হারানোর নেই কিছু এতটাই ভাঙা
কুমীরে কুমীরে কবে ভরে গেছে ডাঙা
চাঁদের উঠোনে স্মৃতি খুইয়েছে হাসি
একা চিৎকার করি- বাসি, ভালবাসি।
যেদিনটা তুই এলি, সেই দিন রাতে
কথা হয়েছিল হেঁটে যাব একসাথে
তবু ঝুঁকি বোধ করি তোর প্রিয়জন-
যতটুকু আমি, তার চেয়েও আপন।
তোর ওই থাকাটুকু বুকে নিয়ে বাঁচা
ভালবাসা চিরকালই বিদঘুটে খাঁচা
ভেতরে যত্ন নিয়ে খুলে দেয় বেড়ি-
কেউ আগে চলে যায়, কেউ করে দেরি।
আর যারা থেকে যায় তারা প্রয়োজন
ধরে ফেলে ক্ষত সব, পড়ে ফেলে মন...
আমি তো ব্যথার জ্বরে ফুটে ওঠা তারা
কিভাবে বাঁচব বল উষ্ণতা ছাড়া?
একটাই খুঁটি শুধু, সেইটুকু ধরে-
মৃত পাখি ডানাদুটো ঝাপটায় জোরে।
বাঁচবার নেশা নেই, ফের হারানো ভয়
একটা পিঠেও আর কত বল সয়?
বিপদের ভাবনায় তোর মুখ দেখে
শিউরে উঠছি আমি সেই কবে থেকে।
তাই এত সাবধানী বারণের ঘোরে
এইটুকু লিখে রাখি রাতের অক্ষরে-
যদি না সুযোগ পাই এইভাবে আর,
ভালবাসা জড়ো করে যাই বারবার...
মাঝরাতে দৌড়ই, ছাদে গিয়ে থামি
তোর নিঃশ্বাস শুনে বেঁচে আছি আমি
তোর নিঃশ্বাস পেলে বেঁচে যাব আমি।।
তুই শুধু ভাল হয়ে ওঠ। অসুখ তো আমার অতিথি।
তেমন হলে বয়ে নেব আমি ভয় জোড়া সব গাঢ় শীতই
তুই শুধু গান গেয়ে চল। মৌনতা সাজে না ও চোখে
তেমন হলে আমি বলে যাব কারা কারা দায়ী ছিল শোকে!
তুই শুধু সাবধানে থাক। আমার তো ছাদই গেছে উড়ে
তেমন হলে ছাই হব আমি সব ভুল অপমানে পুড়ে।
তুই শুধু শান্ত হয়ে যা। এর বেশি চাওয়া নেই আজ
তেমন হলে সয়ে নেব আমি বিনা মেঘে সবকটা বাজ
তুই শুধু হাসিটুকু রাখ৷ দূর থেকে যেন যায় দেখা
তেমন হলে রয়ে যাব আমি এই জ্বরে... ঠিক... একা একা
তুই শুধু সাহসী হ শেষে, প্রিয় দুটো চোখে বোঝা টান
তেমন হলে ডুবে যাব আমি কাটিয়ে এ শেষ অভিমান।
তুই শুধু ঘর খুঁজে পা। আমার তো সবই গেছে ঝড়ে
তেমন হলে সরে যাব আমি, কত লোকই কতভাবে মরে
তেমন হলে মরে যাব আমি। তুই বাঁচ আমার অক্ষরে
রাত যত বাড়ে, তত একা হয় লোকে
ঈশ্বর, ঘুম দাও অভিমানী চোখে।
হাওয়ার মধ্যে রাখো বিষ ঔষধি
স্বপ্নতে দুটো গাছ, ফুল, প্রিয় নদী
এত ব্যথা তবু পাতা ভারী হয় কই!
চিৎকার করে ডাকি, শোনো না কিছুই?
ভোর যত কাছে আসে, তত বাড়ে ভীতি
অভিনয় ক্লান্তিরই নীরব জ্যামিতি
চাঁদ জানে শুতে যাই হাতজোড় করে
অনুরোধে ঘুম রাখি, নেশা- অক্ষরে
মৃত্যুটি পাপ বলে যাই না সে স্রোতে
ভালবাসবার তুলো ভেজে রক্ততে;
কোনখানে গেলে বলো ঘুম পাওয়া যাবে
ক্লান্তি রাস্তা চিনে ঠিক পৌছাবে।
ক্ষতর দিব্যি- শুধু এটুকুই চাওয়া
বিশ্বাস করে ঠকা, ঘুমে জিতে যাওয়া
পাশ ফিরে বলব না- কেউ নেই কেন
শুধু তার আগে চোখ লেগে আসে যেন
মাথায় বোলানো হাত? চাইছি না তাও...
তুমি শুধু দয়া করো, ঘুম এনে দাও
* ব্যাখ্যা করে ক্লান্ত। ফলে বলব না আর খুলে-
কেন তুমিই রইলে আমার দুঃখ পাওয়ার মূলে
*তোমার ইচ্ছে নেই। আমারও ভরসা নেই জোরে...
তাই একা ভালবাসি; পুড়ে যাই ভেতরে ভেতরে
* যেসব কান্না আজও বৃষ্টিতে ঢাকে,
সেই অসহায়তায় রেখেছি তোমাকে।
*হাসলে যে ফুলঝুরি, তার চোখই মাঝরাতে লাল
বাইরে দেখতে সুখী, ভেতরে ব্যথার কঙ্কাল...
* থাকার যে লোক, এমনি থাকে। ফেরার মানুষ ফেরে
কি লাভ হবে বল তো দেখি- রোজ নিজেকে মেরে?
*ব্যাখা করা অদরকারী। বোঝার মানুষ হলে,
চোখের দিকে তাকিয়ে সে লোক সবটা দেবে বলে...
* বেশ তো আছি। হাসির আওয়াজ যাচ্ছে কানে শোনা?
ঠিক কতটা কষ্ট পেলাম- তোমাকে বলব না।
* অথচ তোমায় আজও ভালবাসি আমি
এত সব ব্যথা, এত সব ভিড় ঠেলে!
ঘুমের মধ্যে এখনো স্বপ্ন দেখি-
আমার কান্না দেখে তুমি ফিরে এলে...
চোখের সামনে এখনো সবটা দেখি-
তুমি যাচ্ছিলে, ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে।
*গা পুড়ে যায় পুড়ুক তবু ছাই হবো না মোটে
জ্বরের ঠোঁটে এসব দিনে নতুন প্রলাপ ফোটে
বাড়াবাড়ি করবে পারদ, পেরিয়ে যাবে ঘর
তোমার চোখে রাগ দেখেছি। ছোঁয়াতে ঈশ্বর... ❣
*আজও অসুখিনী পায়ে পায়ে হাঁটে, পেরোতে পারেনা পথও
নিজের ব্যথাতে ওষুধ না দিয়ে, ঢাকে অন্যের ক্ষত।
ভালবাসলেই হবে সে মায়ের মত।
* পালিয়ে যাবার অনেক উপায়, সব কি সবাই শেখে?
কেউ ধার নেয় স্বেচ্ছামরণ, কেউ কবিতা লেখে।
* মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে এবং বেড়ায় দৌড়ে
উদ্ধত মেয়ে বাইরে কঠিন, ভেতরে আটপৌরে
* সব্বাই ছেড়ে দেবে একা, একাই তো ঝড় সামলাবো...
শুধু খুব ভয় পেয়ে গেলে, মাঝরাতে তোর কাছে যাব।
* কিছুটা দেখতে পাই, বাকিটা ঝাপসা হয়ে থাকে
হঠাৎ কান্না পেলে চশমাটি বাঁচায় আমাকে।
*ভালবাসা ফিরে যায়, থাকে মায়াটাই
তোমাকে বাঁচাই আর নিজে মরে যাই।
* ব্যথার ওপর ছেটাচ্ছি বিষ, ক্ষতর ওপর নুন প্রলেপ
মরার চেয়েও অনেক কঠিন মরতে চাওয়ার পদক্ষেপ।
* লুকিয়ে রেখে লাভ কি হবে? তার চেয়ে আনো কাছে...
আমার ব্যথায় এখন শুধুই ক্লান্তি জমে আছে।
যন্ত্রণাকে জড়িয়ে ধরি, দুঃখ প্রিয়জন।
আমার কি স্রেফ ঘর গিয়েছে? মন ভেঙেছে, মন...
* মান অভিমান ঝগড়া হবার পরেও
যার কাছে ঠিক ফিরতে পারে মন,
ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে ওঠা চোখের
তার মতো এক বন্ধু প্রয়োজন।
*তুমিও যেদিন ক্লান্ত হবে আর হারাবে খেই,
বুঝবে- কেন ভাঙা মনের সুযোগ নিতে নেই
না শুকোনো কারোর ঘায়ে আঘাত দিতে নেই
জড়িয়ে নিতে না শিখলেও, পুড়িয়ে দিতে নেই...
কষ্ট দিতে নেই গো। এমন কষ্ট... দিতে নেই।
একটা দুটো মিথ্যে বলি, মিথ্যে বলা ভালো।
আমার ঘরে সুখ ছাপোষা, দুঃখেরা জমকালো...
তাই কান্না গিলে মিথ্যা বলাই ভালো।
*এত ভাল হও যে আঘাতদায়ীও লজ্জা পাক, এত আলো হও যে বিশ্বাসঘাতকেরও মাথা নীচু হয়ে আসুক।
*একটা দুটো মিথ্যে বলি, মিথ্যে বলা ভালো।
আমার ঘরে সুখ ছাপোষা, দুঃখেরা জমকালো...
তাই কান্না গিলে মিথ্যা বলাই ভালো।
*হঠাৎ বৃষ্টি নামে, একা একা ভিজে যায় চোখ
নীলচে শরীর থেকে খসে পড়ে ব্যথার পালক;
কাঁচ ভেঙে চুরমার। ভালবাসা ছটফট ক'রে
কিচ্ছু না বলে আজও মরে যায় ভেতরে ভেতরে।
*মানুষ মানুষ মানুষ
কত মানুষ চতুর্দিকে!
তবু ভালবাসার একই অভাববোধ
আমার ভাল্লাগেনা জানো,
তবু তোমাকে সামলানো-
যেন মরার আগেও একটু প্রতিরোধ
আলোর কাছে কে আর ঋণী? কে আমাদের মতন সোজা
জীবন মানে মুখোশ ঘেঁটে মানুষ কেবল মানুষ খোঁজা।
হঠাৎ কোন্ এক ফিকির থেকে, পেলাম যেন মনের মিলও
দুটো মানুষ হাঁটতে গিয়ে এ ওকে ঠিক সঙ্গে নিল!
মাটির কাছে বসল দুপুর, করল উপুড় ব্যথার খাতা
জীবন যদি উপন্যাস হয়, বন্ধু তবে শ্রেষ্ঠ পাতা।
যত্ন নিতে কি আর লাগে? দু একটা ফুল, অল্প হাসি
বোকার মতন কাঁদতে গিয়েও জড়িয়ে বলা- ভালই বাসি
বলার আগেই বোঝার নিয়ম, যেকটা মন ফেলল ধরে
তাদের কাছে শক্ত মানুষ জল হয়ে যায়, হাওয়ায় ওড়ে
ভয়ের ঘোরে কাঁপতে দেখে, কেউ দাঁড়ালে হাতের পাশে
সন্ধ্যে নামার একটু আগে পাথর চোখেও বৃষ্টি আসে
জীবন মানে নতুন কি আর? আজকে বাঁচা, কালকে মরা
আমার কাছে বন্ধু মানে এমনি দেখা, জড়িয়ে ধরা।
জানিনা আর কষ্ট কত? কি আমাদের ভাগ্যলিখন?
তোর সঙ্গে হাজার বিকেল কাটিয়ে দেব, বান্ধবীমন...
প্রেমে পড়লে মেয়েদের বুকের ভেতর জুড়ে শীত পড়ে। একটা জেদী শীতকাল... কেউ ভালবাসলে, ব্যথার গাছে পুরনো সব পাতা ঝরে যায়। তখন নতুন ব্যথা আসে, নানা রঙের ভয়ের ফুল চাষ হয় অভিমানের ওপরতলার ছাদে;
এমনিই জ্বর আসে, এমনিই রাগ হয়, বলতে না পারার রাগ
আর নতুন মানুষ সে রাগ না বুঝলে জেদ বাড়ে।
সারাদিন হাওয়া দেয়। ঠোঁট ফাটে। শিরশির করে ওঠা গা বুঝিয়ে দেয়- উষ্ণতা জরুরি। তবু মেয়েরা নিজে থেকে
সূর্যের খোঁজ করেনা। বরফে শেষ হয়ে গেলেও কোনো
উত্তাপ খোঁজে না নিজে নিজে। চুপ করে থাকে।
প্রেমে পড়লে ব্যথা নিয়ে, শীত নিয়ে চুপ করে থাকে ওরা।
কি ভয়ানক নিশ্চয়তায় বিশ্বাস করে সব কঠিন কাঁচ ভেদ
করে তার একটা নিজের রোদ ঠিক এসে পড়বে অসার গায়ে। ভাবে মৃত্যুর আগে সেই নতুন মানুষ চাদরের মত মুড়িয়ে দেবে সব, জড়িয়ে নেবে। কষ্ট হয়, প্রেমে পড়লে
কষ্ট হয় খুব। আগুনের অপেক্ষায় নিজের ভেতর আরও
বরফ বাড়িয়ে তোলে মেয়েরা। তারপর একটা সত্যিকারের
আগুন এসে জড়িয়ে নিলেই তার জল হবার পালা...
সে জলে দুটো মন সারাদিন স্নান করে। ভালবাসাবাসি হয়। আর ব্যথা থাকে না কোথাও৷ যত্নে ছাদ ভরে ওঠে ফুলে,
মৃত উপকূলে দুটো নদী মিলে যায়, এ ওকে ছাড়া পারে না।
কমলালেবুর, সূর্যমুখী, বোরোলিনে ভাগ বসানোর মানুষ
আসে। এই দুই গায়ে গায়ে, পায়ে পায়ে সারাদিন শাসনের কাঁটায় সোহাগের উল বোনা চলে। ভুলচুক শেষে সব
মানুষই একদিন বুঝতে পারে- একটা চাদরে দুজন ধরলে দুঃসহ শীতকালও আদুরে হয়ে যেতে পারে অনায়াসে।
বোঝা যায় বসন্ত আসন্ন। বোঝা যায় এবার নতুন পাতার দিন
প্রেমে পড়লে মেয়েদের বুকের ভেতর জুড়ে শীত পড়ে
আর পুরুষের সকল ছেয়ে যায় প্রখর গ্রীষ্মে।
আর তারপর গ্রীষ্ম এসে মিললে শীতে, বসন্ত হয়...
যদি হুট করে চলে যেতে হয়, বলে যাব আজ কাকে?-
সব অভিমানী মেয়েদের বুকে একটা ফিনিক্স থাকে।
ভালবাসা পেলে, ছাই ভেঙে তারা উড়তে শিখবে ঠিক
শুধু কেউ এসে পাখিটার ঠোঁটে একটু সাহস দিক...
যদি যেতে হয় যাব, শুধু, কেউ এইটুকু বুঝে নিক-
ভালবাসা পেলে বাঁচতো মেয়েটা, বাঁচতে পারত ঠিক। 🙂
আজ আর কিছুতে জুড়তে পারে না সাঁকো?
সাজাতে পারি না একটা উদযাপন?
তুমিও আমার মতনই দুঃখে থাকো?
মধ্যরাত্রে ভেজাও চোখের কোণ?
আমি একা থাকি, একা একা পথে ঘুরি
ব্যস্ত রাস্তা একা পার হই, ভয়ে
নীচে ফেলে এসে হাজার খানেক সিঁড়ি
ছাদ থেকে ঝুঁকে পড়ার ইচ্ছে হয়।
তোমার জন্যে চমক রাখা সে ছাদে
একবার গিয়ে দাঁড়িও সেখানে আজ
চোখ বুজে দেখো হাওয়াতেই আমি আছি
তারায় তারায় স্মৃতিদের কারুকাজ।
আজ সব আলো তোমার জন্যে রাখি
আমি নিশীথিনী, অন্ধকারের মেয়ে
তুমি এইটুকু জেনে রেখো আজীবন-
কাউকেই ভালবাসিনি তোমার চেয়ে।
চলে গেছ ফিরে দেখবে না বলে, জানি
আমিও কিচ্ছু বলিনি কাউকে আজও
এত জিজ্ঞাসা, এত বিস্ময় নিয়ে
তুমি তো আমারই বুকের মধ্যে আছো।
কি দেব তোমায়? কি দেব আজকে বলো?
কোন উপহার পৌঁছতে পারে কাছে!
তোমার জন্য ততটা জন্ম থাক,
আমার ভেতরে যতটা মৃত্যু আছে।
কত মোমবাতি বুকে পুড়ে যায় রোজই
তা থেকে আজকে কয়েকটা দিলে, নেবে?
ফেলে গেছ বলে অভিযোগ নেই কোনও
মিথ্যে করেই তোমার থাকতে দেবে?
কে বলে দেখি না? রোজই তো তোমায় দেখি-
সেই একইভাবে আমাকে জড়িয়ে রাখো
খুনসুটি বাড়ে আদরের মেহফিলে
মাঝেমধ্যেই ডাকনাম ধরে ডাকো।
আমি সংসার নিয়ে বসি প্রিয় ঘুমে
কোলকাতা গাঢ় হয়ে আসে ক্রমাগত
নিওন আলোর প্রতি কটা চুম্বনে
তোমাকেই দেখি হুবহু আগের মত
ওষুধে ওষুধে ছেয়ে গেল প্রিয় বাড়ি
কত অভ্যেসই পাল্টে ফেলতে হল!
তবুও তোমার যে কোনো অ-সুখী দিনে
জানি লাগবে না, তবুও লাগলে বোলো
অপেক্ষা শেষ হয় না এখনো কেন?
যেন আজও আছে ঘরে ফেরবার আশা
তোমার জন্যে কি দেব আজকে বোলো?
রইল বিষাদে বিদগ্ধা... ভালবাসা...
হয়ত পড়েই থাকবে এ উপহার-
প্রয়োজনহীন এইটুকু সোদবোদ
ছেড়ে দিতে হয়- এই বাস্তব জেনেও
রাখতে এলাম আজ শেষ অনুরোধ-
প্রতিটা স্বপ্নে, প্রতিটা যত্নে তোমায়
যেটুকু রেখেছি, সেই টুকু কেড়ো না
আমি একা আছি। একাই বাঁচব, শুধু
স্মৃতিতে আমাকে অন্তত ছেড়ো না।
তুমি আমার থেকে অনেক দূরে থাকো
আমি রাতবিরেতে অসুখ নিয়ে শুই,
একা চাঁদ ভেঙে যায় অলস বিছানায়
তুমি আমার কথা জানো না কিচ্ছুই।
ভোরে মাথা তোলার জোরটুকু যায় চলে
তবু একটা তারা নিয়ম করে খুঁজি
আমি রাগ করি না, অসুখ বাঁধাই শুধু
ব্যথায় জলের আগেও চোখদুটোকে বুজি
আজও নিয়ম করে বন্ধুরা ভুল বোঝে
মুঠোয় আকাশ পাতাল রাখতে পারি জমা...
আমায় ছাড়ল যারা, মারল যারা ঘুমে,
আমি তাদের দাওয়ায় বিছিয়ে এলাম ক্ষমা।
এত হাওয়ার নিয়ম বাড়িয়ে দিল বেলা
কোনো চিঠির খবর পাখিরা আনল না
শেষে ছাড়ল শরীর মায়ের কাছে এসে
আমার জ্বরটুকু আর পারদে মানল না!
শুধু লাল হল চোখ অভিমানের রঙে
আমার খবর শুনে কাঁদল ছাদের ফুল;
কোনো ফোন এলো না যন্ত্রণা ভেদ করে
সারাজীবন ধরে বুঝল সবাই ভুল
তাই ভেতর থেকে বন্ধ এ দরজাটি
আর খুলবে না মন তেমন টোকা ছাড়া
আমি থাকলে তো নিঃশব্দে জুড়ে রাখি
তাই যাবার সময় কষ্ট পাবে তারা।
নিজের থেকে কিচ্ছু বলি না আর
যা ইচ্ছে তাই তুমিও তো নাও ধরে!
তোমার এত মেঘের অহংকারে
আজও আমার ব্যথার চাতক ওড়ে
পাখির আওয়াজ কানের কাছে আসে
ওরা ঝাপটে ডানা আনন্দ গান গায়
তুমি আমার না হোক, পাখির কথা শুনো-
ভালবাসতে গোটা জীবন কেটে যা য়
সবাই যদি ধূমকেতু হয়, তবে
জানলা ঘেঁষে চাঁদ হবে কে বলো?
ফোন আসেনা, ঘুম আসে না কাছে
তুমিও কেমন আলগা হয়ে চলো...
সারা জীবন লোকের যত্ন নেওয়া মানুষ
বুঝি- শেষ অসুখেও পায় না উপশম!
আজ সত্যি আমার একফোঁটা রাগ নেই
শুধু অসুখ ভীষণ। সময়? আরও কম
আমি সেইটুকুও বোঝাতে অক্ষম-
চোখে অসুখ, হাতে সময় বড় কম।
অনেকগুলো যন্ত্রণাকে এক করেছি আমি
ভেতর থেকে দরজা দেওয়া এই এতকাল ধরে
হলুদ আলোর নীচে আমায় জড়িয়ে নিও তুমি
বুঝিয়ে দিও- মানুষ আজও আদর পেলে পোড়ে।
হলুদ আলোর নীচে আমায় অবুঝ করে নিও
পায়ের কাছে আকাশ দিও, মাথার দিকে মাটি
পাথর চোখে হঠাৎ যদি জল এসে যায় প্রিয়
বুঝবে মুখে মিথ্যে ছিল, দৃষ্টি পরিপাটি।
আমার ইতিহাসের পাতায় ধ্বংসাবশেষ, ক্ষত
অনেকগুলো দুর্ঘটনায় আশঙ্কা আর ভীতি...
কিন্তু তুমি হাত ছোঁয়াতেইই কেমন করে যেন
যত্নে আমার দুঃখ হল অশ্বক্ষুরাকৃতি!
নরম যত প্রেম ছিল সব বিক্রি হতে হতে
তখন আমি হাঁটতে জানি মৃত্যুভয়ও ফেলে
এক্কেবারে ভুলেই গেছি ছাইতে আগুন চাপা
আচমকা তাই টান বুঝিনি যখন তুমি এলে...
শাসন এসে রাতবিরেতে চাদর দিল জ্বরে
ঘুমের ভেতর স্পর্শে জেগে উঠল গোটা পাড়া
কি এক লোভে আমায় সবাই কষ্ট দিত শুধু
এই তো প্রথম একটা ডাকেই পেলাম কারোর সাড়া
মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলে, আমিই অবিশ্বাসী।
ভেবেছিলাম সবাই একই- স্বার্থপূরণ হলে,
দিব্যি প্রিয়তমার বুকে আগুন জ্বেলে দিয়ে
নিরুত্তাপের সাগর নিয়ে সে ঠিক যাবেই চলে
তাই শুনিনি, এড়িয়ে গেছি। শুধু আড়াল থেকে
তোমার দিকে গান ছুঁড়েছি এমন অভিমান
বন্ধ চোখে অনেকটা তো এগিয়ে এলাম আমি
এবার তুমি বোঝাও ভালবাসার পরিমাণ
সামনে এসে দাঁড়াও এবার, ফলাও অধিকার
সোহাগ জড়াও এমন যেন কাঁদতে গিয়েও হাসি
আমাদের এই দারুণ প্রেমে বেঁচে উঠুক সব
কাঁটায় মোড়া প্রাচীর ভেঙে আসুক পরবাসী।
হলুদ আলোর নীচেই আমায় প্রমাণ করো ভুল
নরম কোনো শাস্তি ছুঁইয়ে চুপ করিয়ে নাও...
ব্যথায় তোমায় ফিরিয়ে দিয়ে ভুল করেছি আমি
এবার এসো- এক আদরে সহজ করে দাও।
-
-দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ (আদরে সহজ করে দাও)
অনেক হেঁটেছি প্রেমহীন রাস্তাতে
এবার গোলাপ নিয়ে এসো
কাঁটা যে সোহাগী হয়, এ কথা বলে না কেউ
তুমি তা বুঝিয়ে ভালবেসো।
নাহয় রক্তপাত, নাহয় ব্যথাও কিছু
তবু তো অহংকারে লালই
হবার থাকলে এই বার শুধু প্রেম হোক
বিবাদ তো হয়েছিল কালই!
গতজন্মের কোনো সুখী বিফলতা থেকে
আমাদের কুঁড়ি ফুটে যায়
তোমার শোবার ঘরে আমাকে সঙ্গে নিও
মনে রেখো সব রাস্তায়...
আজও ভালবাসলেই বিচ্ছিরি জন্মটা
নিমেষে গোলাপ হয়ে যায়!
জ্বরকে চিরকালই আমার কেমন যেন এক মায়াবী অসুখ মনে হয়। পারদে পারদে জানান দিয়ে সে আসে অনতিবিলম্বে। আতিশয্যে নয়, গোপনে যেভাবে আসে প্রেম, যেভাবে আসে মরণ, যেভাবে আসে অভিমান... কাঁচের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট ফুটে ওঠে আগমনী৷ জ্বরের খবরে প্রিয়জনের মুখ ভার হয়, ফুরফুরে মেয়ে জ্বরে পটে থম মেরে যায়, এতকালের লুকিয়ে রাখা ব্যথা যা করতে পারেনি, জ্বর তা অনায়াসে পারে। আমি কাঁদিনা অথচ চোখ ছলছল করে! চোখ বন্ধ করতে পারি সহজে অথচ ঘুমোতে ইচ্ছে করে না! খেতে ইচ্ছে করে না! শুধু রাগ করতে ইচ্ছে হয়। তখন ভেতরে শীত, বাইরে আগুন গা। তখন বলে দিলেই ভাল, কিন্তু বলতে পারছি না। জ্বর আসে। যাদের ছোঁয়ার অধিকার নেই, তারা কতকিছু ভাবে আর যারা অনায়াস জোর খাটানোর মত আপন, তারা খালি কাজের ফাঁকে গাল কপাল ঘাড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে। গম্ভীর মুখে বলে ওঠে- ' মনে হচ্ছে ভোগাবে'। জ্বর এলে কেউ ছেড়ে যায় না, থার্মোমিটার নিয়ে আসে, গায়ে চাদর টেনে দেয়, সব আব্দার তখন আপনিই মঞ্জুর হয়ে যায়। প্রিয় বন্ধু বান্ধব ফোনে লেগে থাকতে চায়, আর যাদের জীবনে বিশেষ সংজ্ঞাহীন কেউ থাকে তারা নাকি বকে, অন্যদিনের চেয়ে কিছু বেশি ক্ষণ থাকে! তারা নাকি গান শোনায়! আগুন গা জড়িয়ে ধরে রূপকথার গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়- জ্বরের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে রাজপুত্তুর তুলে আনে এ পৃথিবীর সবচাইতে শীতল মাটি। সে মাটি রাজকন্যার জ্বোরো গায়ে লেপে দিলে তবে জ্বর সারে। পোড়া গা মন ঠান্ডা হয়। পায়ের পাতায় সাড় আসে।
জ্বরকে চিরকালই আমার খুব নরম বিষাদ মনে হয়। তার রঙে নীল, তার ঢঙে ছেলেমানুষী, পরণে অহংকার। তার আসায় যাওয়ায় কমায় বাড়ায় কারোর জেহাদ খাটে না, কেবল আদর খাটে। তাই জ্বর এলে মাথা ধুইয়ে দিতে হয়, ভাত খাইয়ে দিতে হয়, মাঝে মাঝেই কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে যতটা সম্ভব নরম করে বলতে হয়- 'এই তো আছি', হাতের পাতায় পায়ের পাতায় ওম দিতে হয়, আড়ালে খোঁজ নিয়ে যেতে হয়, সে ঘুমিয়ে পড়লে সারারাত জেগে জেগে উঠে দেখতে হয়- জ্বর বাড়ল কিনা। জ্বর আসলে একরকম মদ। নেশা ধরায়৷ এ সময় বেশি বলতে ইচ্ছে করে না, কেউ গল্প শোনালে বেশ ভাললাগে। মেরে দিতে নয়, মরে যেতে ইচ্ছে করে। ঘ্যানঘ্যান গুলোকে প্রশ্রয় দেবার কেউ থাকলে সেরে উঠতে ইচ্ছে করে। কষ্ট হলে চুপ করে থাকতে ইচ্ছে করে। গল্প থামলে রাগ হয়, গান থামলে আরও। কেউ চলে যেতে চাইলেই চাদর সরিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। কেউ কাছে না থাকলেই ঠান্ডা জলে স্নান করে একটা বিপর্যয় ঘটাতে ইচ্ছে করে। তারপর জ্বর বাড়লে কিছু মনে থাকেনা। জ্বর সারলে তাকিয়ে দেখি মশারির মধ্যে রোদ ঢুকেছে। কেউ যেন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাথায়, কেউ যেন বলছে- 'যাক বাবা, এবারের মত রক্ষে! '
জ্বর রক্ষে পায় না। সে হাওয়ায় হাওয়ায় থাকে। মাঝে মাঝে ফুরফুরে মেয়েদের গায়ে এসে বসে প্রজাপতির মত। প্রথমে গা ছ্যাক ছ্যাক করে, তারপর সে আসে সমারোহে। জ্বর এলে ক্লান্তিতে, ছেলেমানুষীতে মানুষকে আরও হাজারগুণ সুন্দর দেখায়। কি এক আলো নরম করে দেয় তার সমস্ত সামলে চলা। উষ্ণ চোখে ফুটে ওঠে অসুখে মোহময়ী এক ঐতিহ্যবাহী ব্রহ্মকমল৷
তার অমন পাগল করা রূপ ভোলা যায় না। জ্বর হলে সরে যাওয়া নিয়ম। সবাই হাত রাখেনা কপালে। আর যারা ছোঁয়, যারা হাত রাখে, সাথে নিয়ে বাড়ি ফেরায়, ঘন্টায় ঘন্টায় খোঁজ নেয় থার্মোমিটার কি রিড দিচ্ছে, তারা পরবর্তী সবকটা জ্বরের অধ্যায়ে অসুখ সামলাতে আজীবনের মত থেকে যায়...
সবার সাথে জ্বর ভাগ করা যায় না। কারোর কারোর সাথে যায়। মা বাবার পর আমরা মেয়েরা সারাজীবন ধরে বোধহয় এই জ্বর ভাগ করার মানুষই খুজি। 🙂