চোখ ফেরাতে পারিনি
মিনিবাসে চলে গেছে বিকেল
দুটো ফিঙে জাপটাজাপটি করে
গুছিয়ে নিয়েছে সংসার
তার মধ্যে এক বিন্দু জল
স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে তোমার কপালে
যে আলো অন্ধ করে দেয়
...
Tuesday, 28 July 2020
শান্তি- জয় গোস্বামী
কত কাছে এসেছিলে। অত কাছে এসে
সরে যাওয়া শক্ত, এ বয়সে।
কিন্তু সরে যাওয়াই নিয়তি।
চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে ছুরি খুলে নেওয়ার পরেও
আগুন কি ফোয়ারা চায় না? তখনও থর থর কেঁপে চলে
পাহাড় ঘুমন্ত আজ। ঢালু সূর্য। ছায়া পড়ছে জলে।
আগুন কি সম্পূর্ণ নেভে? দু-জনে জলের ধারে এলেই এখনও
তলা থেকে দেখা দেয় রক্তরঙ...
বোকা মানুষের চিঠি ৬- জয়াশিস ঘোষ
কিছুটা অংক মিলে যায়, কিছুটা দিন পাগলাটে
কষ্ট জমাট হলে শীত প্রবল শব্দ করে ফাটে
কিছুটা তোমার ঘুড়ি কাটে, কিছুটা আমার বলিরেখা
ঠিকানা পালটে ফেলে লোক, বিয়োগফলের থেকে শেখা
চোখের পশম ছুঁড়ে ফেলো। বাতিল পুরানো সোয়েটার
ট্রেনের কামরা খালি হলে ভীষণ কান্না পাবে তার
কান্নায় কী বা যায় আসে! শীতের আগুন মাপা শোক
জড়িয়ে...
পুরী, ২০১০- অরণি বসু
আবার এসে দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে-
আবার অন্ধকার, অন্ধকারে ফসফরাসের দাঁত,
আমিষ গন্ধ, ফেরিওয়ালাদের হাতছানি।
আবার এসে দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে
একা, পরিত্রাণহারা।
গোপন ক্ষত, মায়া, অসহায় উদাসীনতা, জগন্নাথ।
ঝাঁপ বন্ধ করে কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়েছে
সেই আগুন থেকে আমি উত্তাপ শুষে নিই।
বার বার ফিরে আসি, আসতেই হয়,
ঝিনুকে...
সম্পর্ক। পুরী ২০০১- অরণি বসু
অন্ধকারে সমুদ্রের মুখোমুখি এসে দাঁড়াই। একা।
বুঝতে পারি আপনিও এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে।
সান্ধ্যকালীন বাজার এখন ধু ধু বালিয়াড়ি,
দূরে দিকচক্রবালের কাছে অস্পষ্ট এক আলোর সংকেত।
কোনো কথা হয় না, ইশারাও নেই কোনো,
শুধু বুঝতে পারি আমার সকল অন্ধকারে
...
কোয়ারান্টাইন ৯
যে সমস্ত সূঁচ বিঁধে আছে পৃথিবীর গায়ে
তাকে তুমি সরিয়ে ঘন পায়ে
আমার বিছানার ধারে এসে দাঁড়াও
যে কথা বলবে বলে, ভুলে গেছ
শুধু স্পর্শটুকু মনে আছে ঘুমের পাশেই
ফুল ফুটে আছে রোদের আশ্চর্য বাগানে
সেখানে অসুখ নেই
তবুও
আজন্মকাল ধরে দেখেছি
ঘুমের আগে কতটা ওষুধ হয়ে যাও...
Monday, 27 July 2020
নৈহার- জয়াশিস ঘোষ
এভাবে কখনো বলিনি তোমায় আসতে
যতই রাত্রে ঝরে গেছে প্রিয় কান্না
কোনদিনও বলেছি কি ভালোবাসতে?
পায়ে লেখা আছে মাইলফলকে মৃত্যু
কে ভালো আছে- কেই বা পেরেছে জানতে
বিষাদে বিষাদে চমকে উঠেছে বিদ্যুৎ
তবু আসা যেত ফিরে ফিরে এই প্রান্তর
পাথরের মত বসে আছে। হুঁকো টানছে
তুমি ভুলে গেছ। আমিও এখন ক্লান্ত
রাতে ঘুম নেই। পোয়াতি...
ফিরে ফিরে- অরণি বসু
অনেক ভালোবাসার কথা বলেছি আমরা
অনেক রকম ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে এতদিন,
এবার, এসো, ঘুমের ট্যাবলেট বিষয়ে কিছু কথা বলা যাক।
********
আমরা কি এবার আবার ভালোবাসার দিকে ফিরবো?
আর, ধরো, যদি ফিরেই আসি তবে কি আবার সেই
...
বোকা মানুষের চিঠি ২
একটা ভীষণ সাধারণ সকালে তুমি আমার নাম করে
বিষম খাবে। আমি বুকের ভেতর গামছা বেঁধে
সোজা নেমে যাব স্রোতের মুখোমুখি। এমন দিনে
গ্লকোমা কেটে গিয়ে বাবা রেডিওতে বিবিধ ভারতী চালিয়ে দেবে
নিবেদিতা সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে তুমি ওড়না ফেলে দেবে
আমার গা দিয়ে নেমে যাবে অপূর্ব শীত!
এরকম একটা সাধারণ দিনে আমি অরণ্যদেব হলে...
নীল দিগন্তে- জয়াশিস ঘোষ
একা মানুষ যখন ভয় পায়
তার সমস্ত হাড় মজ্জায়
ফোঁটায় ফোঁটায় ছড়িয়ে গেছে বিষ
তুমি আমার প্রেমের দাবী
আমি কলঙ্কেরও ভাগী
যদি ছায়ার মত জড়াও অহর্নিশ
তবু দেওয়ালে কান পাতি
আমার লুকানো বর্ষাতি
আলোর কাছে হেরেই গেছে ছায়া
তুমি বুকের ওপর শুয়ে
আছ সমস্ত ঢেউ ছুঁয়ে
তবু ঝিনুক গোনে সমুদ্দুরের মায়া
এমন একলা হওয়ার দিন
আলো ক্ষয়ে...
কে এসেছে- জয় গোস্বামী
এই আকাশের নীচে, এই জল মাটিতে কাদায়, খালি পায়ে
আমরা কয়েক পা এসো হাঁটি
দাঁড়ালে, দাঁড়িয়ে পড়তে পারো
যেতে ইচ্ছে করো যদি তোমার শরীর আর তোমার ঠিকানা
অপর কারোর কাছে যাক
এ-জল মাটির মধ্যে, এই আলপথে, এই দশ-বারো লাইন লেখায়
আমার হাঁটার পাশে তোমার পায়ের ছাপ থাক
(কবিতাং...
সরোদ বাজাতে জানলে- পূর্ণেন্দু পত্রী
আমার এমন কিছু দুঃখ আছে যার নাম
তিলক-কামোদ
এমন কিছু স্মৃতি যা সিন্ধুভৈরবী
জয়জয়ন্তীর মত বহু ক্ষত
রয়ে গেছে ভিতরে দেয়ালে
কিছু কিছু অভিমান
ইমন-কল্যাণ।
সরোদ বাজাতে জানলে বড় ভাল
হতো।
পুরুষ কীভাবে কাঁদে সে-ই শুধু জানে।
কার্পেট সাজানো প্রিয়
অন্তঃপুরে ঢুকে গেছে জল।
মুহুর্মুহু নৌকোডুবি, ভেসে যায়
বিরুদ্ধ নোঙর।
পৃথিবীর...
Sunday, 26 July 2020
শুভরাত্রি- লেখা মেঘ -৯ - জয় গোস্বামী
Send me the words 'Good Night' to put under my pillow.
প্রেমিকাকে অনুনয় করেছিলে, মৃত্যুর এক বছর আগে
একফালি কাগজে শুধু 'শুভরাত্রি' লিখে
যেন সে পাঠায়, তুমি
বালিশের নীচে নিয়ে শোবে।
এখন রাত্রির দিকে তাকালেই দেখি
তোমার ফুসফুস থেকে জ্বলন্ত কয়লারা বার হয়ে
আকাশে আকাশে জ্বলছে!
জ্যোৎস্নারা ঠিকরে পড়ছে সকল গাছের...
আষাঢ়- জয়াশিস ঘোষ
হঠাৎই সন্ধে হল। বৃষ্টিতে ভেসেছে প্রশ্রয়
যে কথা কাছের ছিল তাকেও দূরের মনে হয়
রাস্তায় লোক নেই। অভিমান জমেছে কাজলে
আদরের অধিকার মুঠো খুলে ভাসিয়েছি জলে
আলোর হদিশ নেই। আলোকবর্ষ খুঁজে ফেরা
তোমার চুলের থেকে আকাশও নিয়েছে আন্ধেরা
ধুয়ে যাক বালিয়াড়ি, ঠান্ডা কফির চোরা দাগ
এমন অমোঘ দিনে বেপরোয়া ভেঙে যাক বাঁধ
হিসেব...
চিহ্ননাম- জয় গোস্বামী
আমি তো কাঠের মতো ভালো লোক।
ঘুণধরা সম্ভব আমাতে।
আমি তো লোহার মতো স্থাণু লোক
মরচে পড়ে যায় সহজেই।
অথচ তুমি তো দেহ
দান করেছিলে এই হাতে।
বলেছিলে, সুরক্ষিতা,
গর্ভসঞ্চারের ভয় নেই।
কেন ভয় ছিল না তোমার?
কেন তুমি রাখলে না
গোপনে আমার চিহ্ন, নাম?
কেউ জানতে পারত না,
শুধু আমরা দু'জনে জানতাম!
কত দেরি হয়ে গেল,
এখন...
বিশ্বাস- অরণি বসু
হাসতে হাসতে তুমি আমার হাত ধরো
হাসতে হাসতে আমি তোমার হাত ধরি
তবু চোখে জল কেন?
পুড়িয়ে পুড়িয়ে মৃতপ্রায় করে নেমে এসেছে
আকাশ উপুড় করা বৃষ্টি।
তবু চোখে জল? তোমার? আমার?
নিশিদিন সঙ্গীতবিহীন তুচ্ছতায় ভরা...
লাবণ্যের কাছে এসো আজ করজোড়ে বসে থাকি,
অনন্তর কাছ থেকে চেয়ে আনি একবাটি বিশ্বাস...
ডুব- জয়াশিস ঘোষ
আলোর দুষ্প্রাপ্যতায় তোমাকে মনে পড়ে।
মনে পড়ে জলের অন্ধকারে তুমি হাত ধরতে চেয়েছিলে
জ্বরে আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিল। বিঠোভেন
বাজাচ্ছিলেন আশ্চর্য সিম্ফনি
অন্ধকার ভেঙে ভেঙে আমার মুখে ভরে দিচ্ছিলে
ওষুধ ভেবেছি
তাই ক্ষত থেকে ছিঁড়ে ফেলেছি জোনাকির পাখনা
এই দেহতাপ, যতই কবিতা মনে হয়
আসলে
অন্ধকারে ডুবে থাকা জুন...
দ্বা সুপর্ণা- শঙ্খ ঘোষ
'কেমন করে পারো এমন স্বাভাবিক আর স্বাদু আহার
সব জায়গায় মানিয়ে যাও কিছুই তোমার নিজস্ব নয়
কেমন করে পারো?
নষ্ট তুমি নষ্ট তোমার আলগা শোভা বুকের বাহার
সমস্ত ফল ঠোঁটে জ্বালাও সবার সঙ্গে সমান প্রণয়
কেমন করে পারো?'
'নষ্ট আমি কিছুই আমার নিজস্ব নয় ; ডালে-ডালে
পাতায়-পাতায় স্বাদু আহার বিষ অথবা বাঁচার আগুন
ধরে ব্যাপক...
সন্দেহ- অরণি বসু
তুমি হয়তো অন্য কাউকে ভালোবাসো, ভালোবাসতেই পারো--
সেটা তেমন কোনো সমস্যা নয়,
সমস্যা এই যে,
গরমকালে আমি ল্যাম্পোস্টের আড়ালে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকি
...
সিল্যুয়েট ৪- জয়াশিস ঘোষ
প্রতিবার হাসপাতালে এলে আমি অন্ধ হয়ে যাই।
এত আলো আমাকে অমর করে তোলে। চারধারের
কান্নাধ্বনির মাঝে একরোখা এসরাজের শব্দ শুনি।
অথচ এই সময় আমার তোমাকে ছুঁয়ে থাকার কথা!
পালক হয়ে যাই। ওই জেদী মেয়েটার কপাল থেকে
ঘুরে আসি।
সেই মেয়েটা, মৃতদেহ ছেড়ে যে উঠে যায়নি
বৃষ্টিতে......
জল- অরণি বসু
তোমার বুকের ভিতর যতটা আগুন আছে
আমার ভিতরে ততটা জল নেই আজও।
কীভাবে জুড়াই তোমাকে-
কীভাবে শান্তি দিতে পারি-
ভাবতে ভাবতে রাস্তায় নেমে আসি,
পথে পথে খুঁজে বেড়াই জল।
শুধু তোমার পাশে পাশে থাকব বল...
বোকা মানুষের চিঠি ৪- জয়াশিস ঘোষ
শহরে উদাসী হাওয়া। মনের ভেতর শিরশির
কত কী বলেছে কানে, প্রেমিকেরা জন্মবধির
তোমার চোখের নীচে অসংখ্য কবিতার বাস
স্নান সেরে কাছে আসো আমার বিষাদবিলাস
যতবার কাছে যাই তোমাকে নতুন করে দেখি
এমন হাসির কাছে পৃথিবীর সব সুখ মেকী
রুক্ষ শীতের রাতে দরজায় বেঁধে নাও খিল
জেনেছ কার নামে বেজেছে গোপনীয় তিল?
একটু আগুন...
অবৈধ- অরণি বসু
আমার জন্যে নয়, ওই মোমবাতি জ্বলেছিল অন্য কারও জন্যে
আমি ঘটনাচক্রে তার কাছাকাছি এসে উত্তাপ নিয়েছি।
আমার জন্যে নয়, ওই মোমবাতি জ্বলেছিল অন্য কারও জন্যে
আমি সন্তর্পণে আমার মুখে তার আলো মাখিয়ে নিয়েছি...
টুকরো জয়াশিস
*তাকে দায়সারা ভাবিনি কখনও
শুধু শেকলে বেঁধেছি তার দায়
স্পর্শ ছিঁড়ে গেলে কতটা অসুখ বোঝা যায়!
*বহুকাল কথা নেই। অস্ফুটে গলে গেছে মোমও
যাকে তুমি ভালোবাসো, তার কাছে ভেঙেছ কখনও?
*আমাদের কথা নেই। আমাদের কথারা ভেসেছে
এ শহরে ভেজে তারা, যারা একবার ভালোবেসেছে
*নিছক কাঁচের টিপ। টেবিলে ছড়ানো থোকা স্মৃতি
বৃষ্টি...
সন্ধ্যে- জয়াশিস ঘোষ
এ মেঘেরও নিজস্ব দিন ছিল আগে
তোমায় বলিনি চুল খুলে নাচলে অপার্থিব হয়ে যাও
গোপনে সারস দেখেছি, মরালগ্রীবাটি
পায়ের নূপুর খুলে বলেছিলে
'কেন একটুও যত্ন কর না নিজের?'
এ মেঘ নিজের স্বপ্ন থেকে ঝরে যাবে
ঘুমের ছাঁটে বন্ধ করে দেবে জানালা
বিষণ্ণতায় আলো খুঁজে দেবে
...
মেঘমল্লার- জয়াশিস ঘোষ
তুমি তখন অল্পদিনই। নতুন বন্ধু। প্রস্তাবে না
হরিণচোখের ভেতর কেমন ছলছলেভাব চাঁদের মতন
ঘুম আসেনি। আমি ছিলাম বিষাদপ্রেমী। ঘামে নরম
হাত বাড়ালাম, বন্ধু হবে? দেখেছিলাম বৃষ্টিদানা।
অচেনা লোক। কয়েকটা দিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঝুলেই ছিল
নাগরদোলায়। রবীন্দ্রনাথ মুচকি হাসেন। কালবোশেখী
আমি তোমার চুলের ফাঁকে দারুচিনির...
বোকা মানুষের চিঠি ১৫- জয়াশিস ঘোষ
একদিন বেখেয়ালে তাকাবে আমার দিকে
যদিও তোমার চোখের সামনে
সাধারণ পালকের মত পড়ে আছি
যে পাখির, সে ভুলেও গেছে একদিন
ঘর না পাওয়া চিঠি , নামহীন
তুমি তুলে নেবে। গুঁজে নেবে চুলে
একদিন এই খয়েরি মফস্বলের সমস্ত ভুলে
প্রলেপ দেবে তুঁতে সালোয়ার
সেদিন যদি দুনিয়ার ভিড় থেকে আলাদা করে আমার
চোখ পড়ে নিতে পারো
দেখবে...
খাদ- জয়াশিস ঘোষ
মনের ভেতর জ্যোৎস্না আসে, চুল খুলেছ অকস্মাৎ
পাহাড় থেকে গড়ায় কথা। পা বাড়ালেই গভীর খাদ
তোমার হাতে রাগ তুলে দিই, এক ফুরালে অন্য দি
কেউ বলেনি মধ্যরাতে আজ পৃথিবীর জন্ম দিন
এসব সবই স্বপ্নে পাওয়া পিছলে যাওয়ার উপাখ্যান
যাওয়ার দিনের বৃষ্টি, আদর, কান্না, আঘাত, শব্দ, গান
যে বা যারা বাসের খোঁজে একলা বসে, বাড়ছে স্রোত
তোমার...
ঝাঁপ- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
বহুদূরে যেন কুয়াশা পড়েছে আজ
মাফলার এসে জড়িয়ে ধরেছে ঘুম
কলকাতা জুড়ে বৃষ্টি নামবে ঠিক
তোমার মনেও বকুলের মরশুম
সেই দেখে আমি ঝড় জলে একাকার
মানি ব্যাগে রাখি কুচি পাতাদের ঘাম
তুমি কি কোথাও ট্রাম থেকে নেমে গেলে?
আমিও নরকে সারারাত নামলাম
শুধু রয়ে গেল আলতো পিপারমিন্ট
ঠোঁট জুড়ে বাজে সন্ধের এপ্রিল
এলো হাওয়া...
প্রেমিকজনের চিঠি- শ্রীজাত
আছি, কিন্তু নেই এখানে ।
স্থবির, কিন্তু খরস্রোতা ।
আমার কাছে জীবন মানে
উইন্ডস্ক্রিনে বৃষ্টিফোঁটা ।
চার দশকের চৌকাঠে দিন
রোদ্দুরও নেই তেমন বিশেষ
মুঠোই কেবল একটু জেদি ।
কে জানে হার মানবে কিসে ...
তারই মধ্যে এসে দাঁড়াও
ফের সমস্ত ওলটপালট
সন্ধে চেনে আমার পাড়াও ।
এবারে রাত নামলে ভাল ।
শান্ত আছি। শান্ত থাকি।
কিন্তু...
আর তো কেউ পারে না
তুমিই সবচেয়ে সুন্দর। উপন্যাসের নায়িকার মত। সাবলীল, গভীর, যত্নে গড়া অবহেলার পাহাড়। মায়া ছড়িয়ে কেমন প্রতিশোধ নিতে পার।
আর তো কেউ পারে না। পারবে না।
- খালেদ শফিউল্ল...
দেখা হবে- প্রমোদ বসু
দেখা হবে অন্যমনস্কতায়!
যদি হাত রাখো, যদি বলো বাড়ির কাহিনী,
যদি লজ্জানত মুখে ফোটে অতীতের ধ্বনি,
যদি সন্ধ্যামনি গন্ধ দেয় চুলে,
দেখা হবে ভুল পথে, হাতে-হাত, আঙুলে-আঙুলে!
যেতে যেতে বৃষ্টি হবে ফুলহীন গাছের ভঙ্গীতে,
শব্দ খুঁজে নেবে ছবি---শব্দের সঙ্গীকে;
কেবল দু'জন শুধু আরো দূর অন্যমনস্কতায়
চলে যাবো। দেখা হবে...
সংসার- অরণি বসু
যখনই তোমার কাছে আসি হাসতে হাসতে গড়িয়ে দিই নিজেকে
মজার মজার কথা বলি আর খুব সন্তর্পণে থাকি আর
নিজেকে উজাড় করে দিতে দিতে লুকিয়ে রাখি
চিকচিকে চোখের কোণ, অন্ধ শ্রাবণ আর ব্যক্তিগত পাগলঝোর...
সকাল- অরণি বসু
ছুরির ফলা থেকে যেন নেমে এসেছে এইমাত্র
এত দীপ্র, দুহাত ছড়ানো তোমার হাসি
আমাকে এক অচেনা সমুদ্রসৈকতে এনে ফেলে।
শরীর পুড়িয়ে দেওয়া তাপ,
মন পুড়িয়ে দেওয়া খবর
সব তুচ্ছ মনে হয়।
মনে হয়, আরেকবার বেজে উঠি,
আরেকবার ছুঁয়ে যাক সেতারের অলীক মূর্ছনা।
অনেক মনখারাপের অলিগলি পেরিয়ে
একটা সকাল আজ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল
তোমার...
আর যদি নাই আসো- বিনয় মজুমদার
আর যদি নাই আসো,ফুটন্ত জলের নভোচারী
বাষ্পের সহিত যদি বাতাসের মতো না-ই মেশো,
সেও এক অভিজ্ঞতা ; অগণন কুসুমের দেশে
নীল বা নীলাভবর্ণ গোলাপের অভাবের মতো
তোমার অভাব বুঝি ; কে জানে হয়তো অবশেষে
বিগলিত হতে পারো ; আশ্চর্য দর্শনবহু আছে
নিজের চুলের মৃদু ঘ্রাণের মতন তোমাকেও
হয়তো পাইনা আমি, পূর্ণিমার তিথিতেও দেখি
অস্ফুট...