Tuesday 28 July 2020

রচি মম ফাল্গুনী- জয়াশিস ঘোষ

চোখ ফেরাতে পারিনি

মিনিবাসে চলে গেছে বিকেল
দুটো ফিঙে জাপটাজাপটি করে
গুছিয়ে নিয়েছে সংসার

তার মধ্যে এক বিন্দু জল
স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে তোমার কপালে
যে আলো অন্ধ করে দেয়
                           আমি তার কাছে ঋণী

সে আলোয় দেখেছি তোমার
উপেক্ষা কতটা নরম হতে পারে
                                         বৃষ্টি নামলে

উঠোনে জমেছে জল
আমার চোখের উপরে পা রেখে
হেঁটে যাও অতল
                 আশ্চর্য মিনিবাসের দিকে

চোখের কথা আর কে শুনেছে কোথায়
এক উঠোনে এত জল আটকে রাখা যায়!

শান্তি- জয় গোস্বামী

কত কাছে এসেছিলে। অত কাছে এসে
সরে যাওয়া শক্ত, এ বয়সে।

কিন্তু সরে যাওয়াই নিয়তি।

চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে ছুরি খুলে নেওয়ার পরেও
আগুন কি ফোয়ারা চায় না? তখনও থর থর কেঁপে চলে
পাহাড় ঘুমন্ত আজ। ঢালু সূর্য। ছায়া পড়ছে জলে।

আগুন কি সম্পূর্ণ নেভে? দু-জনে জলের ধারে এলেই এখনও
তলা থেকে দেখা দেয় রক্তরঙ আভাতাপ--- ঘাটের পাষাণে
ধাক্কা দেয়, কিছুই না বুঝতে-চাওয়া ঢেউ

আবার কী লাভ তাতে? দমবন্ধ তাপ চেপে রেখে
কত পরিকল্পনায় আবার দু-জনে একলা হওয়া
কয়েক মুহূর্ত যেন কয়েক ঘণ্টার অবসান
দু-জন দু-জনকে শুধু মরিয়ার মতো ছেঁড়াখোড়া

আবার ক্লান্তির পর ক্লান্তি আর অনুতাপ
                              ঘাট থেকে ফিরে যাওয়া ঢেউ

এত যদি লুকোছাপা করলাম দু-জনে
বলো, শান্তি পেলাম কি দু-জনের কেউ ?

বোকা মানুষের চিঠি ৬- জয়াশিস ঘোষ

কিছুটা অংক মিলে যায়, কিছুটা দিন পাগলাটে
কষ্ট জমাট হলে শীত প্রবল শব্দ করে ফাটে

কিছুটা তোমার ঘুড়ি কাটে, কিছুটা আমার বলিরেখা
ঠিকানা পালটে ফেলে লোক, বিয়োগফলের থেকে শেখা

চোখের পশম ছুঁড়ে ফেলো। বাতিল পুরানো সোয়েটার
ট্রেনের কামরা খালি হলে ভীষণ কান্না পাবে তার

কান্নায় কী বা যায় আসে! শীতের আগুন মাপা শোক
জড়িয়ে ধরবে বলে তুমি এখনও বিষাদ ভালোবাসো

ভালোবেসে ফিরে আসো তুমি। জানালায় জমে যায় ঝুল
শীতের কুয়াশা জানে শুধু রোদের আদর ছিল ভুল!

পুরী, ২০১০- অরণি বসু

আবার এসে দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে-
আবার অন্ধকার, অন্ধকারে ফসফরাসের দাঁত,
আমিষ গন্ধ, ফেরিওয়ালাদের হাতছানি।
আবার এসে দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে
একা, পরিত্রাণহারা।

গোপন ক্ষত, মায়া, অসহায় উদাসীনতা, জগন্নাথ।
ঝাঁপ বন্ধ করে কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়েছে
সেই আগুন থেকে আমি উত্তাপ শুষে নিই।

বার বার ফিরে আসি, আসতেই হয়,
ঝিনুকে পা কাটলে সহজে সারে না।

সম্পর্ক। পুরী ২০০১- অরণি বসু

অন্ধকারে সমুদ্রের মুখোমুখি এসে দাঁড়াই। একা।
বুঝতে পারি আপনিও এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে।

সান্ধ্যকালীন বাজার এখন ধু ধু বালিয়াড়ি,
দূরে দিকচক্রবালের কাছে অস্পষ্ট এক আলোর সংকেত।
কোনো কথা হয় না, ইশারাও নেই কোনো,
শুধু বুঝতে পারি আমার সকল অন্ধকারে
                                    আপনি নীরবে এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে।

সমস্ত ট্যুরিস্ট পায়ে পায়ে ঢুকে পড়েছে নিজস্ব ঠেকে।
আমাদের সমস্ত না-বলা কথা,
আমাদের সমস্ত না-গাওয়া গান মিশে যায়
                                       সমুদ্রের অনর্গল গর্জনের ভিতর।

ঝিলকিয়ে ওঠে ফসফরাসের মায়া,
কাছে আসে, দূরে চলে যায়।

কোয়ারান্টাইন ৯

যে সমস্ত সূঁচ বিঁধে আছে পৃথিবীর গায়ে
তাকে তুমি সরিয়ে ঘন পায়ে
আমার বিছানার ধারে এসে দাঁড়াও

যে কথা বলবে বলে, ভুলে গেছ
শুধু স্পর্শটুকু মনে আছে ঘুমের পাশেই
ফুল ফুটে আছে রোদের আশ্চর্য বাগানে
সেখানে অসুখ নেই

তবুও
আজন্মকাল ধরে দেখেছি
ঘুমের আগে কতটা ওষুধ হয়ে যাও!

Monday 27 July 2020

নৈহার- জয়াশিস ঘোষ

এভাবে কখনো বলিনি তোমায় আসতে
যতই রাত্রে ঝরে গেছে প্রিয় কান্না
কোনদিনও বলেছি কি ভালোবাসতে?

পায়ে লেখা আছে মাইলফলকে মৃত্যু
কে ভালো আছে- কেই বা পেরেছে জানতে
বিষাদে বিষাদে চমকে উঠেছে বিদ্যুৎ

তবু আসা যেত ফিরে ফিরে এই প্রান্তর
পাথরের মত বসে আছে। হুঁকো টানছে
তুমি ভুলে গেছ। আমিও এখন ক্লান্ত

রাতে ঘুম নেই। পোয়াতি নদীর কান্না
জ্বালিয়ে দিচ্ছে নদীপ্রান্তর, রতিসুখ
বুকের ভেতর হাত রেখেছিলে - 'আর না'!

আকাশে উঠেছে একফালি চাঁদ, কাস্তে
বৃষ্টি থেমেছে। ঘামে ভিজে আছে মরাঘাস
বলিনি কখনো। তবু যদি ভালোবাসতে!

ফিরে ফিরে- অরণি বসু

অনেক ভালোবাসার কথা বলেছি আমরা
অনেক রকম ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে এতদিন,
এবার, এসো, ঘুমের ট্যাবলেট বিষয়ে কিছু কথা বলা যাক।
********
আমরা কি এবার আবার ভালোবাসার দিকে ফিরবো?
আর, ধরো, যদি ফিরেই আসি তবে কি আবার সেই
                                           পুরনো দিনের গলায় কথা বলা যাবে?
আমরা কি আবার বৃষ্টির দিনে হাসতে হাসতে
                                             নেমে যেতে পারবো খোলা মাঠে?
এখন তো আমরা আর সহজে মুগ্ধ হই না,
এখন আমাদের ভালোবাসায় অনেক কাঁটা, বালি আর পিছুটান।

(কবিতাংশ)

বোকা মানুষের চিঠি ২

একটা ভীষণ সাধারণ সকালে তুমি আমার নাম করে
বিষম খাবে।  আমি বুকের ভেতর গামছা বেঁধে
সোজা নেমে যাব স্রোতের মুখোমুখি। এমন দিনে
গ্লকোমা কেটে গিয়ে বাবা রেডিওতে বিবিধ ভারতী চালিয়ে দেবে
নিবেদিতা সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে তুমি ওড়না ফেলে দেবে
আমার গা দিয়ে নেমে যাবে অপূর্ব শীত!

এরকম একটা সাধারণ দিনে আমি অরণ্যদেব হলে
তুমি কি পলাশফুল হবে না?

নীল দিগন্তে- জয়াশিস ঘোষ

একা মানুষ যখন ভয় পায়
তার সমস্ত হাড় মজ্জায়
ফোঁটায় ফোঁটায় ছড়িয়ে গেছে বিষ
তুমি আমার প্রেমের দাবী
আমি কলঙ্কেরও ভাগী
যদি ছায়ার মত জড়াও অহর্নিশ

তবু দেওয়ালে কান পাতি
আমার লুকানো বর্ষাতি
আলোর কাছে হেরেই গেছে ছায়া
তুমি বুকের ওপর শুয়ে
আছ সমস্ত ঢেউ ছুঁয়ে
তবু ঝিনুক গোনে সমুদ্দুরের মায়া

এমন একলা হওয়ার দিন
আলো ক্ষয়ে ক্ষয়েই ক্ষীণ
তোমার কেন চোখের কোণে জল?
আসুক দু কুল ছাপা ঝড়
আজ অনেক দিনের পর
ভাসিয়ে দেবো যা ছিল সম্বল

তবু শর্ত যদি দিলে
এই পলাশ ফাগুন মিলে
লাল রঙ ছড়াবে অভিমানের স্রোতে
আমার বন্ধ চোখের ঠাঁই
যা পাই পলকে হারাই
হাত ছাড়িয়ে বন্ধুরা সব ছোটে

একা মানুষ যখন কাঁদে
জল বিষাদ চাপে বাঁধে
দু চোখে আজ পেরিয়ে যাবো সাঁকো
আমি তোমার ভেতর মরে
যাবো আগের মত করে
যদি বসন্তে আজ আমার কাছে থাকো!

কে এসেছে- জয় গোস্বামী

এই আকাশের নীচে, এই জল মাটিতে কাদায়, খালি পায়ে
আমরা কয়েক পা এসো হাঁটি

দাঁড়ালে, দাঁড়িয়ে পড়তে পারো
যেতে ইচ্ছে করো যদি তোমার শরীর আর তোমার ঠিকানা
অপর কারোর কাছে যাক

এ-জল মাটির মধ্যে, এই আলপথে, এই দশ-বারো লাইন লেখায়
আমার হাঁটার পাশে তোমার পায়ের ছাপ থাক

(কবিতাংশ)

সরোদ বাজাতে জানলে- পূর্ণেন্দু পত্রী

আমার এমন কিছু দুঃখ আছে যার নাম
তিলক-কামোদ
এমন কিছু স্মৃতি যা সিন্ধুভৈরবী
জয়জয়ন্তীর মত বহু ক্ষত
রয়ে গেছে ভিতরে দেয়ালে
কিছু কিছু অভিমান
ইমন-কল্যাণ।
সরোদ বাজাতে জানলে বড় ভাল
হতো।
পুরুষ কীভাবে কাঁদে সে-ই শুধু জানে।
কার্পেট সাজানো প্রিয়
অন্তঃপুরে ঢুকে গেছে জল।
মুহুর্মুহু নৌকোডুবি, ভেসে যায়
বিরুদ্ধ নোঙর।
পৃথিবীর যাবতীয় প্রেমের
সপ্তডিঙা ডুবছে যেখানে
সেখানে নারীর মত পদ্ম ফুটে থাকে।
জল হাসে, জলতার চুড়িপরা হাতে,
নর্তকীর মত নেচে ঘুরে ঘুরে ঘাগরার
ছোবলে
সবকিছু কেড়ে নেয়, কেড়ে নিয়ে ফের
ভরে দেয়
বাসি-হয়ে-যাওয়া বুকে পদ্মগন্ধ,
প্রকাণ্ড উদ্যান।
এই অপরূপ ধ্বংস, মরচে-পড়া ঘরের-
দোরে চাঁপা রঙে এই চুনকাম
দরবারী কানাড়া এরই নাম ?
সরোদ বাজাতে জানলে বড় ভাল
হতো।
পুরুষ কীভাবে বাঁচে সে-ই শুধু জানে।

Sunday 26 July 2020

শুভরাত্রি- লেখা মেঘ -৯ - জয় গোস্বামী

Send me the words 'Good Night' to put under my pillow.

প্রেমিকাকে অনুনয় করেছিলে, মৃত্যুর এক বছর আগে
একফালি কাগজে শুধু 'শুভরাত্রি' লিখে
যেন সে পাঠায়, তুমি
বালিশের নীচে নিয়ে শোবে।

এখন রাত্রির দিকে তাকালেই দেখি
তোমার ফুসফুস থেকে জ্বলন্ত কয়লারা বার হয়ে
আকাশে আকাশে জ্বলছে!
জ্যোৎস্নারা ঠিকরে পড়ছে সকল গাছের পাতা থেকে

শুধু 'শুভরাত্রি' লেখা এক খণ্ড মেঘ
চাঁদের তলায় এসে থেমে গেল।
ও বোধহয় জানে
তোমার ঘুমন্ত দেহ শুয়ে আছে চাঁদে মাথা রেখে!

আষাঢ়- জয়াশিস ঘোষ

হঠাৎই সন্ধে হল। বৃষ্টিতে ভেসেছে প্রশ্রয়
যে কথা কাছের ছিল তাকেও দূরের মনে হয়

রাস্তায় লোক নেই। অভিমান জমেছে কাজলে
আদরের অধিকার মুঠো খুলে ভাসিয়েছি জলে

আলোর হদিশ নেই। আলোকবর্ষ খুঁজে ফেরা
তোমার চুলের থেকে আকাশও নিয়েছে আন্ধেরা

ধুয়ে যাক বালিয়াড়ি, ঠান্ডা কফির চোরা দাগ
এমন অমোঘ দিনে বেপরোয়া ভেঙে যাক বাঁধ

হিসেব বকেয়া থাক।  আমাদের  পায়ে পায়ে ঢেউ
কথার বরফ কাঁধে চুপিসারে পালিয়েছে কেউ

আমাদের কথা নেই,  আমাদের কথারা ভেসেছে
শহরে তারাই ভেজে যারা একবার ভালোবেসেছে

চিহ্ননাম- জয় গোস্বামী

আমি তো কাঠের মতো ভালো লোক।
ঘুণধরা সম্ভব আমাতে।
আমি তো লোহার মতো স্থাণু লোক
মরচে পড়ে যায় সহজেই।

অথচ তুমি তো দেহ
দান করেছিলে এই হাতে।
বলেছিলে, সুরক্ষিতা,
গর্ভসঞ্চারের ভয় নেই।

কেন ভয় ছিল না তোমার?
কেন তুমি রাখলে না
গোপনে আমার চিহ্ন, নাম?
কেউ জানতে পারত না,
শুধু আমরা দু'জনে জানতাম!
কত দেরি হয়ে গেল,
এখন সময় নেই আর।

(কবিতাংশ)

বিশ্বাস- অরণি বসু

হাসতে হাসতে তুমি আমার হাত ধরো
হাসতে হাসতে আমি তোমার হাত ধরি
তবু চোখে জল কেন?

পুড়িয়ে পুড়িয়ে মৃতপ্রায় করে নেমে এসেছে
আকাশ উপুড় করা বৃষ্টি।
তবু চোখে জল? তোমার? আমার?

নিশিদিন সঙ্গীতবিহীন তুচ্ছতায় ভরা...

লাবণ্যের কাছে এসো আজ করজোড়ে বসে থাকি,
অনন্তর কাছ থেকে চেয়ে আনি একবাটি বিশ্বাস।

ডুব- জয়াশিস ঘোষ

আলোর দুষ্প্রাপ্যতায় তোমাকে মনে পড়ে।

মনে পড়ে জলের অন্ধকারে তুমি হাত ধরতে চেয়েছিলে
জ্বরে আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিল। বিঠোভেন
বাজাচ্ছিলেন আশ্চর্য সিম্ফনি

অন্ধকার ভেঙে ভেঙে আমার মুখে ভরে দিচ্ছিলে
ওষুধ ভেবেছি
তাই ক্ষত থেকে ছিঁড়ে ফেলেছি জোনাকির পাখনা

এই দেহতাপ, যতই কবিতা মনে হয়
আসলে
অন্ধকারে ডুবে থাকা জুন মাস। স্নায়ুছেঁড়া দূরত্বে
খেলা করে প্রিয় পিছুটান

আলো কমে এলে দেখি লালারসে মুছে গেছে
                                              হত্যার প্রতিটি প্রমাণ

দ্বা সুপর্ণা- শঙ্খ ঘোষ

'কেমন করে পারো এমন স্বাভাবিক আর স্বাদু আহার
সব জায়গায় মানিয়ে যাও কিছুই তোমার নিজস্ব নয়
কেমন করে পারো?
নষ্ট তুমি নষ্ট তোমার আলগা শোভা বুকের বাহার
সমস্ত ফল ঠোঁটে জ্বালাও সবার সঙ্গে সমান প্রণয়
কেমন করে পারো?'

'নষ্ট আমি কিছুই আমার নিজস্ব নয় ; ডালে-ডালে
পাতায়-পাতায় স্বাদু আহার বিষ অথবা বাঁচার আগুন
ধরে ব্যাপক মাটি--
দীর্ঘতর বট, এমন জটিলঝুরি সমকালীন
সব জায়গায় থাকি, আমার
অন্য একটি পাখি কেবল আড়াল করে রাখি।'

সন্দেহ- অরণি বসু

তুমি হয়তো অন্য কাউকে ভালোবাসো, ভালোবাসতেই পারো--
সেটা তেমন কোনো সমস্যা নয়,
সমস্যা এই যে,
গরমকালে আমি ল্যাম্পোস্টের আড়ালে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকি
                                        তোমার অভিসারের সম্ভাব্য পথে,
শীতকালে র‍্যাপার মুড়ি দিয়ে অনুসরণ করি তোমায়।
গুজবে নড়ে হাওয়া, হাওয়ায় লাগে আগুন--
আগুনে আমি নিজেকে পোড়াই, তোমাকে পোড়াই আর

ধিক ধিক করে জ্বলতে থাকে আমাদের পৃথিবী।

সিল্যুয়েট ৪- জয়াশিস ঘোষ

প্রতিবার হাসপাতালে এলে আমি অন্ধ হয়ে যাই।
এত আলো আমাকে অমর করে তোলে। চারধারের
কান্নাধ্বনির মাঝে একরোখা এসরাজের শব্দ শুনি।
অথচ এই সময় আমার তোমাকে ছুঁয়ে থাকার কথা!
পালক হয়ে যাই। ওই জেদী মেয়েটার কপাল থেকে
ঘুরে আসি।
সেই মেয়েটা, মৃতদেহ ছেড়ে যে উঠে যায়নি
বৃষ্টিতে....

জল- অরণি বসু

তোমার বুকের ভিতর যতটা আগুন আছে
আমার ভিতরে ততটা জল নেই আজও।
কীভাবে জুড়াই তোমাকে-
কীভাবে শান্তি দিতে পারি-
ভাবতে ভাবতে রাস্তায় নেমে আসি,
পথে পথে খুঁজে বেড়াই জল।

শুধু তোমার পাশে পাশে থাকব বলে।

বোকা মানুষের চিঠি ৪- জয়াশিস ঘোষ

শহরে উদাসী হাওয়া।  মনের ভেতর শিরশির
কত কী বলেছে কানে, প্রেমিকেরা জন্মবধির

তোমার চোখের নীচে অসংখ্য কবিতার বাস
স্নান সেরে কাছে আসো আমার বিষাদবিলাস

যতবার কাছে যাই তোমাকে নতুন করে দেখি
এমন হাসির কাছে পৃথিবীর সব সুখ মেকী

রুক্ষ শীতের রাতে দরজায় বেঁধে নাও খিল
জেনেছ কার নামে বেজেছে গোপনীয় তিল?

একটু আগুন ঘিরে বসে আছে চার পাঁচ লোক
সন্ধের ফাঁকা বাসে বাড়ি ফেরে বেহালাবাদক

সামান্য আঁখিপাত শীতের সন্ধে দিয়ে কেনা
আমি যদি চাতক হই, তুমিও কি জল দেবে না?

অবৈধ- অরণি বসু

আমার জন্যে নয়, ওই মোমবাতি জ্বলেছিল অন্য কারও জন্যে
আমি ঘটনাচক্রে তার কাছাকাছি এসে উত্তাপ নিয়েছি।

আমার জন্যে নয়, ওই মোমবাতি জ্বলেছিল অন্য কারও জন্যে
আমি সন্তর্পণে আমার মুখে তার আলো মাখিয়ে নিয়েছি।

টুকরো জয়াশিস

*তাকে দায়সারা ভাবিনি কখনও
শুধু শেকলে বেঁধেছি তার দায়
স্পর্শ ছিঁড়ে গেলে কতটা অসুখ বোঝা যায়!

*বহুকাল কথা নেই। অস্ফুটে  গলে গেছে মোমও
যাকে তুমি ভালোবাসো, তার কাছে ভেঙেছ কখনও?

*আমাদের কথা নেই। আমাদের কথারা ভেসেছে
এ শহরে ভেজে তারা, যারা একবার ভালোবেসেছে

*নিছক কাঁচের টিপ। টেবিলে ছড়ানো থোকা স্মৃতি
বৃষ্টি প্রবল হলে ফেলে চলে যাওয়াটাই রীতি...

*সিল্যুয়েট ১

পাথুরে জমিতে
হোঁচট খাবো
'তুমি'র খোঁজে আমি আমরণ ভিজে যাবো
সম্পর্কের কাছে রেখে যাবো বেহায়া বটগাছ..
(কবিতাংশ)

*চুম্বন

দৌড়ে এসো! ওড়াও এলো চুল
তারে তারে জড়িয়ে গেছে গাছ
আমার ঠোঁটে রাখতে পারো ভুল
অথবা ঐ কঠিন ভ্রূর ভাঁজ!
********
হাতের ভেতরে শক্ত করে হাত
ঠোঁটের ওপর আছড়ে পড়ুক শোকে
চুমুবিহীন শহর নিপাত যাক
কালকে যেন গল্প করে লোকে!

(কবিতাংশ)

সন্ধ্যে- জয়াশিস ঘোষ

এ মেঘেরও নিজস্ব দিন ছিল আগে

তোমায় বলিনি চুল খুলে নাচলে অপার্থিব হয়ে যাও
গোপনে সারস দেখেছি, মরালগ্রীবাটি
পায়ের নূপুর খুলে বলেছিলে
'কেন একটুও যত্ন কর না নিজের?'

এ মেঘ নিজের স্বপ্ন থেকে ঝরে যাবে
ঘুমের ছাঁটে বন্ধ করে দেবে জানালা
বিষণ্ণতায় আলো খুঁজে দেবে
                                                         ডাকনাম।

বলতে পারিনি,  যেটুকু

যত্ন করতে পারলে তোমার হতাম...

মেঘমল্লার- জয়াশিস ঘোষ

তুমি তখন অল্পদিনই। নতুন বন্ধু। প্রস্তাবে না
হরিণচোখের ভেতর কেমন ছলছলেভাব চাঁদের মতন
ঘুম আসেনি। আমি ছিলাম বিষাদপ্রেমী। ঘামে নরম
হাত বাড়ালাম, বন্ধু হবে? দেখেছিলাম বৃষ্টিদানা।

অচেনা লোক। কয়েকটা দিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঝুলেই ছিল
নাগরদোলায়। রবীন্দ্রনাথ মুচকি হাসেন। কালবোশেখী
আমি তোমার চুলের ফাঁকে দারুচিনির গন্ধ মাখি
শহর যখন লন্ডভন্ড। আমের মুকুল। পড়ল শিলও

ধীরে ধীরে বাড়ল জোয়ার। সকাল দুপুর কাব্যকথা
'কী খেয়েছ?' 'চায়ের প্যানটা পুড়েই গেল'।'বলব না যাও!
সেই যেদিনে বৃষ্টি হল অনেকদূরে, একসাথে তাও -
আমার হাতে যন্ত্রণা তাই তোমার মাথায় ভীষণ ব্যথা

ভালোবাসি, বলতে লাগে? হাইওয়েতে লরির আলো
আমি তখন প্রবল নেশায় যেমন ছিল সারা শহর
বুকের ভেতর উথাল পাথাল। তোমার তখন প্রচন্ড জ্বর
উল্টে গেল মরিচদানি। রাতের ট্রেনে মেঘ পাঠালো।

প্রথম দেখা। শাড়ির পাড়ে বিঁধেই থাকে চুরির কাঁটা
'দূরেই থাকো!' সবাই যেন তাকিয়ে আছে কঠিন চোখে
ঘামতে ঘামতে ভিজেই গেল হাতের মুঠো। কাটল নখে
ছিঁড়ল শাড়ি।প্রথম ছোঁয়ায় জল জমে যায় পদ্মপাতায়

রইলো পড়ে কাজের হিসেব, বসটা শালা জিরাফমুখো
আবার কবে হচ্ছে দেখা? কাচের চুড়ি, হাতিবাগান
'প্রহর শেষের আলোয় রাঙা' ইলশেগুড়ি চায়ের দোকান
অন্ধকারে কোণার সিটে ঠোঁট ফুলানো দুঃখ, সুখও

আলোর বেণু বাজায় যখন বীরেনবাবু, শিউলিবাতাস
পার ছাপিয়ে ভাসল নদী। উথাল পাথাল ভীষণ ঝড়ে
অষ্টমী ভোর। ম্যাডক্স স্কোয়ার। দুটো শালিখ ঝগড়া করে
বিষম খেল। বন্ধ ঘরে প্রবল রাগে ছিঁড়েছি কাশ!

ফুরিয়ে যায় গল্পগাথা। দূরে কোথাও পুড়ছে আলো
সাইকেলে সে বাঁক ঘুরেছে। ডাকবাক্সে পড়ল তালা
চুল বাঁধোনি। পায়ের তলায় ফোস্কা গলে ভীষণ জ্বালা
'পালিয়ে যাবি?' অনেক দূরের ছোট্ট স্টেশন ডাক পাঠালো।

পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা তখন বাসগুমটির পেছন দিকে
এদিক ওদিক তাকিয়ে ভীরু শালিখ ঠোঁটে মেঘমল্লার
আংটি, সিঁদুর কিছুই তো নেই! ভরসা কেবল বিসমিল্লা
এমন করে হয় কি বিয়ে? সাক্ষী বলতে বৃষ্টি বিকেল…

শীতের বাতাস শহর জুড়ে। লাল সোয়েটার। শুকনো ঠোঁটে
বোরোলিনের ভরসা পেলে থাকতে পারি।  সত্যি বলো?
এই জীবনের আর কটা দিন নদীর মত সঙ্গে চলো
নীরবতায় শব্দ বেশি। শিশিরভেজা বুকের ভেতর পদ্ম ফোটে।

তুমি তখন অনেকদিনের। ধোঁয়ার ভেতর বাঁধলে ঘুড়ি
শহর ঠোঁটে রঙ মেখেছে। কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, অশোক
পরের জন্মে সারস হবো। হাতের মুঠোয় ছলছলে চোখ
ফোন বেজে যায়। কিসের দেরী? বেখেয়ালে কাচের চুড়ি

ভাঙলো যখন। দৌড়ে এলে। জল পাড়িয়ে। হলুদ শাড়ি
সেই যেখানে তোমায় ছুঁয়ে কেঁদেছিলাম। বৃষ্টি প্রবল
অনেক গল্প বলার আছে। ধারের খাতায় দু ফোঁটা জল

এ জন্মে তো ঘর হল না
                           পরের জন্মে তোমার সাথে থাকতে পারি?

বোকা মানুষের চিঠি ১৫- জয়াশিস ঘোষ

একদিন বেখেয়ালে  তাকাবে আমার দিকে

যদিও তোমার চোখের সামনে
সাধারণ পালকের মত পড়ে আছি
যে পাখির, সে ভুলেও গেছে একদিন
ঘর না পাওয়া চিঠি , নামহীন

তুমি তুলে নেবে। গুঁজে নেবে চুলে
একদিন এই খয়েরি মফস্বলের সমস্ত ভুলে
প্রলেপ দেবে তুঁতে সালোয়ার
সেদিন যদি দুনিয়ার ভিড় থেকে আলাদা করে আমার
চোখ পড়ে নিতে পারো

দেখবে
সন্ধে, তোমার চুলের মত গাঢ়

সমুদ্রের তীরে এক নাবিক বসে আছে
যে প্রতিদিন বাড়ি ফেরার সময়                 
একটা চিঠি বোতলে ভরে ভাসিয়ে দেয়

খাদ- জয়াশিস ঘোষ

মনের ভেতর জ্যোৎস্না আসে, চুল খুলেছ অকস্মাৎ
পাহাড় থেকে গড়ায় কথা। পা বাড়ালেই গভীর খাদ

তোমার হাতে রাগ তুলে দিই, এক ফুরালে অন্য দি
কেউ বলেনি মধ্যরাতে আজ পৃথিবীর জন্ম দিন

এসব সবই স্বপ্নে পাওয়া পিছলে যাওয়ার উপাখ্যান
যাওয়ার দিনের বৃষ্টি, আদর, কান্না, আঘাত, শব্দ, গান

যে বা যারা বাসের খোঁজে একলা বসে, বাড়ছে স্রোত
তোমার আমার নীরবতায় অনেক আলোর জন্ম হোক

আলোর গায়ে আলতা লাগা।মেঘপিয়নের ভীষণ জ্বর
তোমায় ছোঁয়ার রাস্তাটুকু রেললাইনের সমান্তর

চুল খুলেছ নদীর পাশে, বাজ পড়ল অকস্মাৎ
বারান্দাতে আমরা দুজন। ঘরের ভেতর গভীর খাদ

ঝাঁপ- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

বহুদূরে যেন কুয়াশা পড়েছে আজ
মাফলার এসে জড়িয়ে ধরেছে ঘুম
কলকাতা জুড়ে বৃষ্টি নামবে ঠিক
তোমার মনেও বকুলের মরশুম

সেই দেখে আমি ঝড় জলে একাকার
মানি ব্যাগে রাখি কুচি পাতাদের ঘাম
তুমি কি কোথাও ট্রাম থেকে নেমে গেলে?
আমিও নরকে সারারাত নামলাম

শুধু রয়ে গেল আলতো পিপারমিন্ট
ঠোঁট জুড়ে বাজে সন্ধের এপ্রিল
এলো হাওয়া লেগে মেলো হয়ে আসা দিন
তোমার চিবুকে ঈশ্বর আঁকে তিল

একলা শহর এঁকে রাখে সবকিছু
তুমিও ক্রমশ ফেলে দাও সব আমি
বাউণ্ডুলেরা তাই জড়ো হই মেঘে
ভাঙা কবিতায় তছনছ হয়ে নামি

প্রেমিকজনের চিঠি- শ্রীজাত

আছি, কিন্তু নেই এখানে ।
স্থবির, কিন্তু খরস্রোতা ।
আমার কাছে জীবন মানে
উইন্ডস্ক্রিনে বৃষ্টিফোঁটা ।
চার দশকের চৌকাঠে দিন
রোদ্দুরও নেই তেমন বিশেষ
মুঠোই কেবল একটু জেদি ।
কে জানে হার মানবে কিসে ...
তারই মধ্যে এসে দাঁড়াও
ফের সমস্ত ওলটপালট
সন্ধে চেনে আমার পাড়াও ।
এবারে রাত নামলে ভাল ।
শান্ত আছি। শান্ত থাকি।
কিন্তু হঠাৎ ঝড়ের বেগে
ঝাপটে আসে আগুনপাখি -
চোখ খুলে যায় বৃষ্টি লেগে।
ভাল্লাগে না ঘরের শোভা।
ইচ্ছে করে পথেই হারাই...
বাঁচলে মরি সহস্রবার
একটু করে জীবন সারাই।
ইচ্ছে করে শরীর ভেজাই।
ইচ্ছে করে পালাই কোথাও।
ইচ্ছে করে চুপ করে যাই।
ইচ্ছে করে অসভ্যতাও।
তোমাকে খুব ইচ্ছে করে।
যে তুমি ওই ছাতার আড়াল -
লোকটা নামেই পোশাক পরে।
আসলে আদ্যন্ত চাঁড়াল।
তোমায় সে খুব মুঠোয় ভ'রে
ছুঁড়বে কোনও দূর সীমানায়
রাস্তাগুলো এমনি ঘোরে।
দিগন্তরাই ম্যাজিক বানায়।
সেসব জাদুর একটা দুটো
অনভ্যেসেই আঙুলছাড়া।
দ্যাখো, আবার খুলছি মুঠো,
রাত নামছে আমার পাড়ায়।
তোমার সঙ্গে নোনতা মিঠে
খুনসুটি প্রেম বিষণ্ণতা
তোমার যেটা বাস্তুভিটে,
আমার সেটাই বৃষ্টিফোঁটা।
চলতি পথের হরেক মোড়ে
এমন তোমায় দেখব কত
আগুনপাখির শরীর পোড়ে-
ভাবনা তবু অবিক্ষত।
কখনও ঠিক হয়না দেখা
অথচ রোজ সঙ্গে থাকো
ভিড়ের মাঝে একলা একা
নদীর ওপর যেমন সাঁকো...
এক জন্মের অনেক চেনা।
এক চেনারও জন্ম অনেক।
আশ্বিনে বসন্তসেনা,
ছাড় দেবে কি প্রেমিকজনে ?
বেঁচে থাকার এই যে আমেজ,
চিরকালীন, না মরসুমি ?
হয়তো আবার নতুন নামে
আমার প্রেমেই পড়বে তুমি !

আর তো কেউ পারে না

তুমিই সবচেয়ে সুন্দর। উপন্যাসের নায়িকার মত। সাবলীল, গভীর, যত্নে গড়া অবহেলার পাহাড়। মায়া ছড়িয়ে কেমন প্রতিশোধ নিতে পার।
আর তো কেউ পারে না। পারবে না।

- খালেদ শফিউল্লাহ

দেখা হবে- প্রমোদ বসু

দেখা হবে অন্যমনস্কতায়!
যদি হাত রাখো, যদি বলো বাড়ির কাহিনী,
যদি লজ্জানত মুখে ফোটে অতীতের ধ্বনি,
যদি সন্ধ্যামনি গন্ধ দেয় চুলে,
দেখা হবে ভুল পথে, হাতে-হাত, আঙুলে-আঙুলে!
যেতে যেতে বৃষ্টি হবে ফুলহীন গাছের ভঙ্গীতে,
শব্দ খুঁজে নেবে ছবি---শব্দের সঙ্গীকে;
কেবল দু'জন শুধু আরো দূর অন্যমনস্কতায়
চলে যাবো। দেখা হবে স্মৃতি ও সত্তায়।
কিংবা ভুল, এইসব মিথ্যেই ভেবে দেখা।
আসলে সারাদিন ক্ষণভঙ্গুর, একা---
কেউ এসে ডাক দেবে, কেউ চলে যাবে ভুলে,
দেখা হবে একদিন হাতে-হাতে, আঙুলে-আঙুলে।

সংসার- অরণি বসু

যখনই তোমার কাছে আসি হাসতে হাসতে গড়িয়ে দিই নিজেকে
মজার মজার কথা বলি আর খুব সন্তর্পণে থাকি আর
নিজেকে উজাড় করে দিতে দিতে লুকিয়ে রাখি
চিকচিকে চোখের কোণ, অন্ধ শ্রাবণ আর ব্যক্তিগত পাগলঝোরা।

সকাল- অরণি বসু

ছুরির ফলা থেকে যেন নেমে এসেছে এইমাত্র
এত দীপ্র, দুহাত ছড়ানো তোমার হাসি
আমাকে এক অচেনা সমুদ্রসৈকতে এনে ফেলে।
শরীর পুড়িয়ে দেওয়া তাপ,
মন পুড়িয়ে দেওয়া খবর
সব তুচ্ছ মনে হয়।
মনে হয়, আরেকবার বেজে উঠি,
আরেকবার ছুঁয়ে যাক সেতারের অলীক মূর্ছনা।

অনেক মনখারাপের অলিগলি পেরিয়ে
একটা সকাল আজ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল
তোমার চওড়া হাসিতে।

আর যদি নাই আসো- বিনয় মজুমদার

আর যদি নাই আসো,ফুটন্ত জলের নভোচারী
বাষ্পের সহিত যদি বাতাসের মতো না-ই মেশো,
সেও এক অভিজ্ঞতা ; অগণন কুসুমের দেশে
নীল বা নীলাভবর্ণ গোলাপের অভাবের মতো
তোমার অভাব বুঝি ; কে জানে হয়তো অবশেষে
বিগলিত হতে পারো ; আশ্চর্য দর্শনবহু আছে
নিজের চুলের মৃদু ঘ্রাণের মতন তোমাকেও
হয়তো পাইনা আমি, পূর্ণিমার তিথিতেও দেখি
অস্ফুট লজ্জায় ম্লান ক্ষীণ চন্দ্রকলা উঠে থাকে,
গ্রহণ হবার ফলে, এরূপ দর্শন বহু আছে ।